বার্তা ডেস্ক:: মানবজাতির সবচেয়ে বড় শত্রু কে জানেন?-মশা। ইতিহাসের অধ্যাপক টিমোথি সি ওয়াইনগার্ড তাঁর নতুন বই ‘মসকিউটো : এ হিউম্যান হিস্টোরি অফ আওয়ার ডেডলিয়েস্ট প্রিডেটর’ বইতে এমনটাই বলেছেন। তিনি এ বইতে মশাকে ‘এই গ্রহের মানুষের সবচেয়ে মারাত্মক শিকারী’ বলে অভিহিত করেছেন। মঙ্গলবার এই বইটি প্রকাশিত হয়েছে। ওয়াইনগার্ড লিখেছেন, ‘মশা মানবেতিহাসে মৃত্যুর যেকোনো কারণের চেয়ে বেশি মানুষকে হত্যা করেছে। পরিসংখ্যান বলছে, মশা-আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যা এখনও বেঁচে থাকা সমস্ত মানুষের অর্ধেকের কাছাকাছি পৌঁছেছে।’ অন্য কথায়, পৃথিবীতে ২০০০০০ বছরে মশা প্রায় ৫২ বিলিয়ন মানুষকে হত্যা করেছে। গত বছর ৮৫০০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে মশার কারণে। অন্যদিকে হাঙ্গরের আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। বিশ্বজুড়ে বর্তমানে ১১০ ট্রিলিয়ন মশা রয়েছে (অ্যান্টার্কটিকা, সিসিলি এবং কয়েকটি ফরাসী পলিনেশীয় দ্বীপপুঞ্জ ছাড়া ) এই পোকাটি (মশা) কারণে কমপক্ষে ১৫ টি মারাত্মক রোগের বাহক। এর মধ্যে সর্বাধিক মারাত্মক ম্যালেরিয়া এবং হলুদ জ্বরের বাহক ‘টক্সিক টুইন’ মশা। তবে মশারা ‘ওয়েষ্ট নীল’ ও জিকাসহ আরো কিছু পরজীবী প্রাণঘাতী ভাইরাসও সংক্রমণ করে। সম্ভবত ডিস্কোভার চ্যানেলের ‘শার্ক সপ্তাহ’কে ‘মশার সপ্তাহ’ হিসেবে পুনরায় ব্র্যান্ড করার সময় এসেছে। আজ থেকে ১৯০ মিলিয়ন বছর আগেও মশাকে নিরীহ পোকা হিসেবে মনে করা হতো। এখনকার মতোই সে সময়ও মশারা ব্যাপক বিধ্বংসী ছিল।

মশা ম্যালেরিয়াস সহ অনেক মারাত্মক রোগের সংক্রমণ ঘটায়। রবার্টা পোনার ‘হোয়াট বাগড দ্য ডাইনোসর’ গ্রন্থে লিখেছেন, মশারা খাদ্য শৃঙ্খলে শীর্ষ শিকারি ছিল এবং তারা ডাইনোসরগুলোর চুড়ান্ত পরিণতিতে আজকের মতোই ভূমিকা রেখেছিল।
ডাইনোসরদের বিলুপ্তির পরে মশারা কেবল টিকেই থাকে নি বরং এদের বিকাশও ঘটেছে। ওয়াইনগার্ড যুক্তি দেখিয়েছেন যে, মশারা মানবজাতির অগ্রগতিক বাধাগ্রস্ত করছে। ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তগুলিতে ভুতূড়ে অদেখা খেলোয়াড় হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে মশার। ওয়াইনগার্ড লিখেছেন, মশারা আলেকজান্ডারের পতন ঘটাতে সাহায্য করেছিল। তিনি সম্ভবত ম্যালেরিয়া রোগের কারণে মারা গিয়েছিলেন। তিনি লিখেন, বিশ্বের পূর্ব ও পশ্চিমকে একত্রিত করার আগেই আলেকজান্ডারের মৃত্যু হয়েছিল। এই মারাত্মক ম্যালেরিয়ার মশা যদি আলেকজান্ডারের জীবনকে শেষ না করত তবে দূর প্রাচ্য পর্যন্ত এগিয়ে যেত পারতেন। আর মানব সভ্যতার ইতিহাসও অনেকটাই পাল্টে যেত। চেঙ্গিস খান ও তার মঙ্গোলিয়ান সেনাবাহিনীর অগ্রযাত্রাও থেমে গিয়েছিল ম্যালেরিয়ার কারণে। তিনি লিখেছেন, মশা পশ্চিমকে পুরোপুরি ছাপিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করেছিল। মশা ম্যালেরিয়াল শক্তিকে ব্যবহার করে এবং মোঙ্গোলদের বিজয়ের লাগাম টেনে ধরেছিল। এ কারণে মোঙ্গোলদের ইউরোপ যাত্রা পথেই থেমে গিয়েছিল।

এই মশা আমেরিকান বিপ্লব এবং গৃহযুদ্ধের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এটি ওয়াশিংটনের সেনাবাহিনীর পক্ষে ভারসাম্য বাড়িয়ে দিয়েছিল। কারণ ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্রিটিশরা আমেরিকানদের মতো ‘দক্ষ’ ছিল না। এ কারণে ব্রিটিশরা প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারেনি। শুধু তাই নয় ভারতে ব্রিটিশ সেনাদের কাছে মশার বিতাড়নকারী কুইনাইন বেশি পরিমাণে প্রেরণ করা হয়েছিল। গৃহযুদ্ধের সময় সেনাদের যুদ্ধের চেয়ে ম্যালেরিয়ার কারণে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা পাঁচগুণ বেশি ছিল। এমনকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও মিত্রবাহিনীর বিরুদ্ধে ইতালিতে জলের সাথে মারাত্মক মশার প্রজাতি, এনোফিলিস ল্যাব্রানচিয়া ছড়িয়ে দিতে জার্মান ম্যালেরিওলজিস্টরা নাৎসি কর্মকর্তাদের উপর চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। ওয়াইনগার্ড বলছেন, মশা প্রাচীন সাম্রাজ্যের উত্থান এবং পতন উভয়ের ক্ষেত্রেই ভূমিকা রেখেছিল। সূত্র : দ্য নিউ ইয়র্ক পোস্ট

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn