মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের চিহ্নিত ডাকাত সর্দার সোলেমান (৩৫) পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। কমলগঞ্জের আতঙ্ক নামে পরিচিত সোলেমানের মৃত্যুর খবর পেয়ে কমলগঞ্জের সর্ব মহলে স্বস্তি ফিরেছে। বিশেষ করে তার মৃত্যুতে চা বাগানের মানুষের আতঙ্ক কিছুটা কমবে বলে জানান স্থানীয়রা। রোববার (৪ আগস্ট) রাতে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার শানখলা ইউনিয়নের ডেওয়াতলী কালিনগর এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে সোলেমান মারা যায়। এসময় ডাকাতদের হামলায় চার পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। তাদের চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ডাকাত সর্দার সোলেমান কমলগঞ্জের আলীনগর ইউনিয়নের কালীপুর গ্রামের বাসিন্দা। সাম্প্রতিক সময়ে সে কমলগঞ্জের আলীনগর চা বাগান, শমশেরনগর চা বাগান, কুলাউড়ার ভাটেরা বাজারে ডাকাতির নেতৃত্বে ছিল। পুলিশ জানায়, ডাকাতির প্রস্তুতি হচ্ছে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলে ডাকাতরা তাদের ওপর আক্রমণ চালায়। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছুড়লে সোলেমান গুলিবিদ্ধ হয়। এ সময় তার অন্য সঙ্গীরা পালিয়ে যায়। সোলেমানকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
কমলগঞ্জ থানা সূত্রে জানা যায়, ডাকাত সর্দার সোলেমান ঢাকা, নারায়নগঞ্জসহ আন্তঃজেলা ডাকাতদলের সাথে যুক্ত ছিলে। গত এক মাসে সে বহিরাগত ডাকাতদের এনে আলীনগর চা বাগানের দুটি বাসায়, শমশেরনগর চা বাগান ও কানিহাটি চা বাগানের দুটি বাসায় ডাকাতি করেছে। সোলেমানের বিরুদ্ধে কমলগঞ্জ থানায় ৬টি মামলা রয়েছে। গত ১৪ জুলাই রাতে ডাকাত সদস্যদের মুঠোফোন ট্র্যাক করে রাসেল আহমদ (২২) ও সেজু মিয়া (২৩) দুই ডাকাত সদস্যকে পুলিশ শমশেরনগর পশ্চিম বাজার এলাকা থেকে আটক করে। আটককৃত দুই ডাকাতকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গিয়েছিল ঐ রাতে তারা শমশেরনগর ইউনিয়নের বড়চেগ গ্রামের আমদানি রপ্তানি কারক তাসদিক হোসেনের বাসায় ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। দুই ডাকাতকে সে রাতে আটক করা হলেও বাকিরা পালিয়ে গিয়েছিল। সে জন্য ওই রাতে পুলিশ সারারাত ব্যবসায়ীর বাড়ি পাহাড়া দিয়েছিল। ১৪ জুলাই দুই ডাকাতকে আটকের পর রাসেল আহমদ নামের ডাকাতের বাড়ি থেকে ডাকাতির সময় ব্যবহৃত একটি প্রাইভেট কারও উদ্ধার করা হয়। তাদের কাছ থেকে পালিয়ে থাকা অন্যান্য সদস্যদের মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে রাতে সে ফোনগুলি ট্র্যাক করা হয়।  এমনিভাবে বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সোলেমান ডাকাতের মুঠোফোন ট্র্যাক করে দেখা যায় সে সিলেট থেকে রওয়ানা দিয়ে শমশেরনগরের দিকে আসছে। সেজন্য বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ সতর্কতা বাড়ানো হয়েছিল। যার ফলে সম্প্রতি ডাকাতদল শমশেরনগর প্রবেশ করতে পারেনি।
শমশেরনগরের ব্যবসায়ী তাসদিক হোসেন, রফিকুল ইসলামসহ ব্যবসায়ীরা বলেন, গত দুই মাস ধরে কমলগঞ্জের সর্বমহলে ডাকাত সোলেমান আতঙ্ক কাজ করছিল। রোববার রাতে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে বন্দুকযুদ্ধে ডাকাত সর্দার সোলেমানের মৃত্যুর খবর শুনে জনমনে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। শমশেরনগর ইউনিয়নের সদস্য ও মাসিক চা মজদুর পত্রিকার সম্পাদক সীতারাম বীন বলেন, চা বাগানের সব ডাকাতিতে সোলেমান জড়িত ছিল। তার মৃত্যুতে এখন চা বাগানের মানুষের আতঙ্ক কিছুটা কমবে। কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমান বন্দুকযুদ্ধে ডাকাত সর্দার সোলেমানের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সাম্প্রতিক কমলগঞ্জ ও কুলাউড়ার ডাকাতির সব ঘটনায় সে জড়িত ছিল। তা নামে কমলগঞ্জে এক আতঙ্ক ছিল। এখন সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে। ডাকাত সোলেমানের মরদেহ গ্রহণে তার পরিবার সদস্যরা হবিগঞ্জে গেছেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn