ওয়েছ খছরু- পরকীয়ায় মত্ত ছিল স্বামী মঞ্জুর। ঘরে সুন্দরী স্ত্রী। আছে সন্তানও। এসব ফেলে পরনারীতে আসক্ত হয়ে পড়েছিল সে। আর সে দৃশ্য দেখে ফেলাই কাল হলো রোজিনার। হারপিক খাইয়ে হত্যা করা হলো তাকে। প্রায় দুই মাস মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা গেলেন রোজিনা। এ ঘটনায় তোলপাড় চলছে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায়।ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ পেয়েছে সত্যতা।  রোজিনা মারা যাওয়ার পর পুলিশ মামলা রেকর্ড করে রোজিনার ভাসুরকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। রোজিনার মৃত্যু নাড়া দিয়েছে সবাইকে।  এ নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে এলাকায়ও। দুই মাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় রোজিনা বেগম। সোমবার সিলেটের দক্ষিণ সুরমার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যায় সে। মৃত্যুর পর ময়নাতদন্ত শেষে লাশ দাফন করা হয়েছে মঙ্গলবার। পারিবারিক সূত্র জানায়, রোজিনার বাবা আব্দুল খালিক হলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ২০১৫ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর জালালপুর ইউনিয়নের শেখপাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালিকের মেয়ে রোজিনা বেগম ও পার্শ্ববর্তী কুচাই ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের মৃত মখলিছুর রহমানের ছেলে মো. ইমানুর রহমান মঞ্জুরের সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের পর রোজিনার সংসারে একটি ছেলে সন্তান জন্মগ্রহণ করে। ভালোই চলছিলো তাদের সংসার। এর মধ্যে আরেক মহিলা এসে জুটে স্বামী মঞ্জুরের কাছে। ওই মহিলার সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে উঠে মঞ্জুরের। আড়াল থেকে রোজিনা স্বামীর পরকীয়ার বিষয়টি জানলেও তিনি কখনো বিশ্বাস করেননি। এক সময় তার কাছেও পরকীয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে। এ নিয়ে প্রতিবাদ করেন তিনি। আর যখনই রোজিনা প্রতিবাদী হয়ে উঠলেন তখনই তার ওপর নেমে এলো নির্যাতনের স্টিম রোলার।  রোজিনাকে হারপিক খাইয়ে হত্যার ঘটনায় মামলার বাদী হন তার ভাই সাইদুল ইসলাম। তিনি মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, পরকীয়ার বিষয়টি রোজিনার কাছে ধরা পড়ার পর স্বামী মঞ্জুর বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতে থাকে। এক পর্যায়ে রোজিনাকে নিবৃত্ত করতে সে যৌতুক দাবি করে। এ কারণে বিভিন্ন সময় রোজিনা বাড়িতে এসে তার বাবার কাছ থেকে কয়েক দফায় প্রায় ২ লাখ টাকা নিয়ে তার স্বামীকে দেয়। এরপর প্রায় সময় টাকার জন্য  রোজিনাকে মারপিট করে পিতার কাছে পাঠিয়ে দিতো মঞ্জু। বোনের সংসারের দিক চিন্তা করে বিভিন্নভাবে টাকা সংগ্রহ করে দিতেন রোজিনার ভাইরা। কিন্তু গত ২৪শে জুন সকাল বেলা রোজিনাকে বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে যেতে বলে তার স্বামী। এতে  রোজিনা যৌতুকের টাকা দিতে অস্বীকার করে। ওইদিন বেলা অনুমান সাড়ে দশটায় মঞ্জু, তার বড় ভাই ইকবাল ও বড় ভাইয়ের বউ রুফিনা বেগম এক সন্তানের জননী রোজিনা বেগমকে হারপিক খাইয়ে দেয়। তখন রোজিনার অবস্থা খারাপ হলে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসেন।

এলাকাবাসীর রোষানল থেকে বাঁচতে তখন  রোজিনাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে স্বামী ও তার ভাই। এ সময় রোজিনার পরিবারকে জানানো হয়- রোজিনা টিবি রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে। পরে কিছুটা সুস্থ হলে তাকে ছাড়পত্র সহ বাড়িতে নিয়ে যায়। দিন দিন রোজিনা অসুস্থ হতে থাকে। এমন খবর পেয়ে সাইদুল তার বোনকে কিছু দিনের জন্য পিতার বাড়িতে নিয়ে আসে। তখন ভাইদেরকে রোজিনা জানায়, তার আসলে কোনো টিবি রোগ নেই। গত ২৪শে জুন সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠার পর তার স্বামী বলে যে- যৌতুক বাবদ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে দিতে হবে। তখন তা অস্বীকার করায় সকলে মিলে ওইদিন সকাল অনুমান সাড়ে দশটায় তাকে হারপিক খাইয়ে দিয়েছিল। তখন সে ভর্তি সংক্রান্ত ছাড়পত্রের একটি ফটোকপি তার ভাইকে দেখায়। পরে তার ভাই ছাড়পত্র পর্যালোচনা করে দেখেন তার বোন এইচ/অ আননোন পয়েজিং’র কারণে ভর্তি ছিল।

বোনের শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে গত ১৮ই আগস্ট সিলেট নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সাইদুল তার মামলায় আরো উল্লেখ করেন, তার বোনকে জোর করে হারপিক খাওয়ানোর পর গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করেন তার স্বামী ও পরিবারের লোকজন। রোজিনার ভাই ও মামলার বাদী মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, তার বোনের স্বামী ও স্বামীর বড় ভাই এবং ভাইয়ের বউ হারপিক খাইয়ে হত্যা করেছে। তিনি তাদের শাস্তি চান। মোগলাবাজার থানার ওসি মো. আক্তার হোসেন জানান, প্রথমে থানায় যৌতুকের জন্য মারপিট ও হারপিক খাইয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ করা হয়। ২৬শে আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় মেয়েটি মারা গেছে। বর্তমানে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হবে। আর এ মামলায় নিহত রোজিনার স্বামীর বড় ভাইকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn