সিলেট আওয়ামী লীগকে ‘কঠিন’ বার্তা দিয়ে গেলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রকাশ্যে কিছুটা ক্ষোভও ঝাড়লেন। বলে গেলেন- ‘সিলেটের সবচেয়ে বড় সমস্যা সংগঠনে কলহ। এই কোন্দল মেটাতে না পারলে আমরা ফল কোনোদিনও পাবো না। নির্বাচনে আমরা হেরে যাই, কারণ আমরা নিজেরাই নিজেদের শত্রু।’ তার এই বার্তায় কিছুটা টনক নড়েছে সিলেট আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের। শিগগিরই তারা সিলেটে দল পুনর্গঠনের জন্য বৈঠকে বসছেন। একই সঙ্গে কোন্দল মেটাতে তারা কাজ করবেন বলে দলের সাধারণ সম্পাদককে বলে দিয়েছেন। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত নেতা আ ন ম শফিকুল হকের শোকসভায় যোগ দিতে ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার সিলেটে আসেন। আর গতকাল সকালে তিনি সিলেট ত্যাগ করেন। দুই দিনের সময়ে মাত্র দুটি কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।

এর বাইরে বেশিরভাগ সময়ই তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে কাটিয়েছেন। সিলেট সার্কিট হাউসে তার সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন সিলেটের নেতারা। তবে, বৈঠকের আগেই বৃহস্পতিবার বিকালে শোকসভায় প্রকাশ্যে ওবায়দুল কাদের দলীয় নেতাকর্মীদের কঠোর বার্তা দিয়ে বলেছেন, ‘আপন ঘরে যার শত্রু, তার শত্রুতা করার জন্য বাইরের শত্রুর দরকার নেই। সিলেটের অবস্থাও তেমন। তাই বিভক্তি ঝেড়ে ফেলে ঘরের মধ্যে ঘর করা, পকেট কমিটি করা, এসব থেকে বিরত থেকে দুঃসময়ের কর্মীদের কোণঠাসা না করে তাদের দলের বিভিন্ন পদে স্থান দিন।’ তিনি সিনিয়র নেতাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘বিভেদ সৃষ্টির মতো কাজ আপনারা পরিহার করবেন। আপনারা দলাদলি না করলে কর্মীদের মধ্যে দলাদলি হবে না।’ ওবায়দুল কাদেরের এই বার্তার পর সিলেট সার্কিট হাউসে অবস্থানকালে দলের অনেক নেতাই গিয়ে তার কাছে বিভিন্ন ঘটনায় বিচারপ্রার্থী হন। এর মধ্যে গত নির্বাচনে অংশ নেয়া কয়েকজন উপজেলা চেয়ারম্যানও রয়েছেন। তারা দলের সাধারণ সম্পাদককে জানান, বিগত নির্বাচনে তাদের পক্ষে আওয়ামী লীগের এমপিদের অনেকেই নৌকার পক্ষে কাজ করেন নি। এ কারণে তারা নৌকার প্রার্থী হওয়ার পরও নির্বাচনে হেরে গেছেন। এমপিদের কথায় প্রশাসনও ওই নির্বাচনে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেনি বলে দাবি করেন তারা। এসব কথা শুনে ওবায়দুল কাদের সিলেটের কয়েকজন এমপির উপরও ক্ষোভ ঝেড়েছেন। এদিকে সিলেট আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা জানিয়েছেন, ওবায়দুল কাদের সিলেটে অবস্থানকালে দলের সাংগঠনিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেন।
পরে তিনি কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আগে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো ভেঙ্গে নতুন কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ গঠন করা হয়েছিল ২০১১ সালে। এরপর থেকে নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এতে করে দলের ভেতরে কোন্দল আর অবিশ্বাস দানা বেঁধেছে বলে তৃণমূলের নেতারা দলের সাধারণ সম্পাদককে জানান। এর প্রেক্ষিতে ওবায়দুল কাদের সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ভেঙ্গে নতুন কমিটি গঠনেরও তাগিদ দিয়েছেন। তার আগে সিলেটের মেয়াদোত্তীর্ণ সকল ইউনিট ভেঙ্গে নতুন করে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন তিনি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও মহানগর সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আগে সিলেটের মেয়াদোত্তীর্ণ সকল কমিটি ভেঙ্গে নতুন কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক। তার নির্দেশনা মতো আমরা সিলেটে কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। আগামী ২রা অক্টোবর সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের যৌথ বর্ধিত সভা আহ্বান করা হয়েছে। এ সভায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। ওই সভার সিদ্ধান্তের আলোকে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে বলে জানান তিনি। কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানিয়েছেন, সিলেটে অবস্থানকালে ওবায়দুল কাদের টেন্ডারবাজ ও দুর্নীতিবাজদের ব্যাপারেও খোঁজ-খবর নেন। এ সময় তিনি দলের নেতাদের জনগণের স্বার্থে রাজনীতি করার তাগিদ দেন।
ক্যাসিনোর ভাগ যারা পেয়েছে তারাও ছাড় পাবে না: কাদের ওদিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ক্যাসিনোর টাকার ভাগ যারা পেয়েছে তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তারা আওয়ামী লীগ কিংবা অন্যদলের অথবা পুলিশ প্রশাসনের হলেও কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তিনি গতকাল সকালে সিলেটে সড়ক জোন অফিস ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে এ কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, মহাসড়কে করিমন, নসিমনসহ তিন চাকার যান চলাচল বন্ধে কাজ চলছে। এ যানের আমদানির বিষয়টা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। আমদানি বন্ধ করতে একাধিক চিঠি দিয়েছি। এ ছাড়া নাম্বারবিহীন সিএনজি অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করতে ব্যবস্থা নিতে আগে থেকেই প্রশাসনকে বলে রাখা আছে। এদিকে সিলেট-ঢাকা চারলেন সড়কের ব্যাপারে তিনি বলেন, ফান্ডিংয়ের অভাবে আগে থেকে কাজ শুরু করা যায় নি। চার লেনের ব্যাপারে শুরু থেকেই তিনি আন্তরিক বলে জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিছবাহ উদ্দিন সিরাজ, কেন্দ্রীয় সদস্য বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীসহ সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn