নিউইয়র্ক  : দীর্ঘ প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটলো যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বিলুপ্তি ঘটলো ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘প্রবাসী নাগরিক সংবর্ধনা’ সমাবেশে। এখানে সভাপতিত্ব করেছেন শেখ হাসিনা নিজে এবং সভা পরিচালনা করেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন। মঞ্চে উপবেশন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেন। বক্তব্য দিয়েছেন শুধুমাত্র শেখ হাসিনা। উল্লেখ্য, ৩ বছরের জন্যে অনুমোদিত কমিটির বর্তমান বয়স ৮ বছর। এই কমিটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ, মিথ্যাচারসহ নানা অভিযোগ উত্থাপন করেছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। গত বছর সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের ৭৩তম অধিবেশনে বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসিনার জাতিসংঘ সফরকালে প্রদত্ত নাগরিক সংবর্ধনা সমাবেশের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ‘নো মোর সিদ্দিক’ স্লোগান উঠেছিল। অনেকেই আশা করেছিলেন যে, এই স্লোগানের পরই সিদ্দিকুর রহমান যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি থেকে সরে দাঁড়াবেন। কিন্তু তেমনটি ঘটেনি। অধিকন্তু যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের এই সভাপতি আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য বাকসুর জিএস ড. প্রদীপ করের নেতৃত্বে একদল ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মী গত কয়েক সপ্তাহে বেশ কটি সংবাদ সম্মেলন এবং লাগাতার র‌্যালির মাধ্যমে অভিযোগ করেন, ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সিদ্দিকুর রহমান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ছাত্র হিসেবে স্কলারশিপ গ্রহণের পাশাপাশি পরীক্ষাতেও অংশ নেন। তিনি কখনোই ছাত্রলীগের সদস্য দূরের কথা. সমর্থকও ছিলেন না।’

অতি সম্প্রতি বগুড়ার একটি আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশায় পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নাকি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রতিবাদে মিছিলের সময় তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন। এজন্যে দেন-দরবারের ভিত্তিকে মুক্তি লাভের পরই পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন বলে নির্দ্ধারিত ফরমে উল্লেখ করেন। এই বিষয় জানাজানি হবার পর ঐ সময়ে বাকসুর নেতা (ছাত্রলীগ) প্রদীপ কর জানান, ‘১৫ আগস্ট কোন মিছিল হয়নি। এমনটি কেউ গ্রেফতারও হয়নি। সিদ্দিকুর রহমান নির্জলা মিথ্যাচার করছেন। তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্যে স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন জিয়াউর রহমানের আমলে।’

গত ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে তার স্ত্রী অট্টহাসিতে মেতে উঠেন এবং সেই হাসির ফোয়ারায় ভেসে বেড়ান সিদ্দিকুর রহমানসহ অনেকে। ‘জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানকে হাস্যরসে পরিণত করার অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এমনি অবস্থায় নেতা-কর্মীরা সম্মেলনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি চাচ্ছেন। বিষয়টি আঁচ করতে পেরেই দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা সংবর্ধনা সমাবেশ থেকে সিদ্দিকুর রহমানকে দূরে থাকার নির্দেশ দেন। এ ঘটনা সংবর্ধনা সমাবেশে উপস্থিত সকল নেতা-কর্মীর মধ্যে স্বস্তি এনেছে। এখন তারা আশায় রয়েছেন ভালো একজন সংগঠকের নেতৃত্বে নতুন কমিটির। উল্লেখ্য, এর আগেও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতিদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। তবে কাউকেই এমন অসম্মানজনকভাবে বিদায়ের ঘটনা ঘটেনি। নাগরিক সংবর্ধনা সমাবেশের মঞ্চে উঠা দূরের কথা, আশপাশেও থাকতে না দেয়ায় সকলে বলাবলি করছেন যে, অভিশাপ মুক্ত হলো যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ। সর্বশেষ সংবাদে ২৯ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে জানা গেছে, ঢাকার উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক ত্যাগের আগে নতুন কমিটির শীর্ষ নেতাদের তালিকা জানিয়ে যাবেন শেখ হাসিনা।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn