ঢাকা : কয়েক মাস আগে গৃহকর্মী হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে গিয়েছিলেন বাংলাদেশি তরুণী প্রিয়া আক্তার। কিন্তু সেখানে কেবল বাসাবাড়িতে কাজ করেই ক্ষান্ত থাকেননি, নৃত্যশিল্পী হিসাবেও পরিচিতি পেয়েছেন। চলতি সপ্তাহে প্রায় তিন হাজার মানুষের সামনে মঞ্চে নৃত্য পরিবেশন করতে চলেছেন প্রিয়া। এ নিয়ে উচ্ছ্বসিত প্রিয়ার অভিব্যক্তি, ‘সবকিছু অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। আমি কি এসব স্বপ্নে দেখছি না সত্যিই বাস্তব, তা ভেবে পাচ্ছি না।’ বাংলাদেশ ১১ ক্লাস পর্যন্ত পড়াশেনা করেছেন প্রিয়া। এরপরই বিয়ে হয়ে যায় তার। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিলো স্টেজে পারফর্ম করা। কিন্তু দেশে থাকতে তিনি সে সুযোগ পাননি। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে আসার পর ভাগ্য তাকে সাহায্য করেছে। তিনি এবার একটি বড় অনুষ্ঠানে নাচ করার সুযোগ পেয়েছেন। স্থানীয় বার্তা সংস্থা ওয়ামকে দেয়া সাক্ষাৎকারে প্রিয়া জানান, বাংলাদেশে তার বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডে কোনোমতে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিল তার মেয়ে। প্রায় এক বছর ধরে মেয়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে তাকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ হিসেবে নিতে হয়েছে। এই অর্থ পরিশোধের জন্য তিনি গৃহকর্মীর ভিসায় আবুধাবিতে আসেন। কিন্তু আবুধাবিতে ছোট্ট একটা ঘটনায় বদলে যায় প্রিয়ার ভাগ্য। সেখানে একদিন গৃহকর্মী হিসেবে বাংলাদেশ থেকে আসা এক বান্ধবীর সামনে নাচেন প্রিয়া। প্রিয়ার সেই নাচ নিজের স্মার্টফোনে ধারণ করেন ওই বান্ধবী। পরে নিজের গৃহকর্ত্রীকে দেখান প্রিয়ার ওই গৃহকর্মী বান্ধবী। ওই গৃহকর্ত্রী পরে ভিডিওটি তার বন্ধু জনিয়া ম্যাথিউয়ের কাছে পাঠান। ম্যাথিউ স্টাইল ডিভা নামে একটি ফেইসবুক গ্রুপ পরিচালনা করেন, যার সদস্য সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। এছাড়া তিনি গত পাঁচ বছর ধরে আবু ধাবিতে ডানডিয়া নামে ভারতীয় একটি নৃত্য উৎসবের আয়োজন করে আসছেন। উৎসবে মেধাবি নারী নৃত্যশিল্পী ও গায়িকাদের অংশগ্রহণের জন্য অনুপ্রেরণা দেন ম্যাথিউ।

ম্যাথিউ বলেন, আমি ভিডিওটিতে প্রিয়া আক্তারের নাচ দেখে বিস্মিত হয়েছি। সে আবুধাবিতে গৃহকর্মী হিসাবে কাজ করছে এটা জানার পর আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। তিনি একজন বিরল নৃত্যশিল্পী, অসাধারণ তার প্রতিভা। তার নাচ আমাদের বিখ্যাত বলিউড নৃত্যশিল্পী নোরা ফাতেহির কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। আগামী ৩ অক্টোবর রাত ৮টা- ১২ পর্যন্ত খলিফা পার্কে ডানডিয়া নৃত্য উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। ওই অনুষ্ঠানেই দুই ভারতীয় নারীর সঙ্গে নাচবেন বাংলাদেশের প্রিয়া আক্তার। এতে অংশগ্রহণের জন্য শুক্রবার থেকে নাচ অনুশীলন করতে শুরু করেছেন প্রিয়া। আর আবুধাবিতে প্রিয়া যে বাড়িতে কাজ করেন তারাও তাকে ওই অনুষ্ঠানে নাচার অনুমতি দিয়েছেন। তবে এ নিয়ে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়নি আবুধাবির ওই রক্ষণশীল পরিবারটি। এ সম্পর্কে প্রিয়া বলেন, ‘এই দেশ আমাকে নতুন করে স্বপ্ন দেখিয়েছে। এখন আমি আরও আশাবাদী যে সবকিছু ঠিকঠাক মতোই চলবে। এখান থেকে উপার্জিত অর্থ আমি আমার মেয়ের অস্ত্রোপচারের জন্য ব্যয় করতে পারবো। এখানে আমি নতুন জীবন খুঁজে পেয়েছি। যদিও নিজের এই পরিবর্তিত জীবনটি এখনও আমার কাছে স্বপ্ন বলেই মনে হচ্ছে।’ প্রসঙ্গত, ২৬ বছরের তরুণী প্রিয়ার মেয়ে থাকে বাংলাদেশে, তার দাদা-দাদির কাছে। সূত্র: খালিজ টাইমস

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn