বার্তা ডেস্ক :: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মৃত্যুর আগে আবরার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেই স্ট্যাটাসে সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সাক্ষরিত একটি চুক্তির সমালোচনা করেন। এই স্ট্যাটাস দেখে অনেকে প্রচার চালান যে, আববার শিবির সমর্থক ছিলেন। আবরারকে শিবির সন্দেহে ছাত্রলীগের কর্মীরা পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে সহপাঠীদের বরাতে খবরও প্রকাশ করেছে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। পুলিশ ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বুয়েট ছাত্রলীগের ৪ নেতাসহ ৬ জনকে আটক করেছে। তবে এই অপপ্রচার একেবারেই সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন আবরারের পরিবার। আবরারের হত্যার খবর প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে একটি পক্ষ বলা শুরু করে তিনি শিবিরের কর্মী ছিলেন। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তার পরিবারের সদস্যরা অস্বীকার করে জানান, তাদের পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের সমর্থক। আবরারের চাচা মিজানুর রহমান বলেন, ‘সে (আবরার) শিবিরের কর্মী, এমন কথা রটাচ্ছে সবাই। এটা বানোয়াট, আমরা সবাই আওয়ামী লীগের সমর্থক। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল হানিফ সাহেবের বাড়ির পাশে আমাদের বাড়ি। আমরা হানিফ সাহেবের বিভিন্ন মিটিং মিছিলে অংশ নেই। আবরারের চাচা জানান, তার ভাতিজা তাবলিগ জামাতে যেতেন। বুয়েটে ভর্তির পর দুই-তিনবার তিনি তাবলিগে গিয়েছিলেন।

আবরার আওয়ামী লীগ সমর্থক হয়েও বিশ্বজিতের পরিণতি বরণ করতে হয়েছে-এমন ইঙ্গিত দিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান। তিনি লিখেছেন, ‘বুয়েট ছাত্র আবরারের অপরাধটা কী? আমি তো বলবে আরেকটি বিশ্বজিতের ঘটনা ঘটলে। পার্থক্য হলো— বিশ্বজিতকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে, আর আবরারকে বুয়েটের হলে। এ ছাড়া তো আমি কোনো পার্থক্য দেখি না। দুজনকেই শিবির সন্দেহে বর্বরভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হলো। দুজনই সাধারণ গরিব পরিবার থেকে উঠে আসা। আচ্ছা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে পিটিয়ে ছাত্রহত্যার অধিকার তো কেউ কাউকে দেয়নি। কারও অপরাধ থাকলে পুলিশ, প্রশাসন আছে কেন? আমি বিশ্বজিতের মতো আবরার হত্যারও বিচার চাই। কারা এই হামলাকারী খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তি দেয়া হোক।’
কুষ্টিয়া জেলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ঢাকা নটরডেম কলেজে থেকে এইচএসসি পাস করা আবরার ফাহাদের ডাক নাম মুজাহিদ। গত ৫ অক্টোবর ফেসবুকে দেওয়া সর্বশেষ পোস্টে তিনি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সাম্প্রতিক কয়েকটি চুক্তির সমলোচনা করেন। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে আজ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আবরার ফাহাদকে কারা কোন ‘আবেগ ও হুজুগে’ হত্যা করেছে, তাদের ‘অবশ্যই’ খুঁজে বের করা হবে। তিনি বলেন, আমি যতটুকু বুঝি এখানে ভিন্ন মতের জন্য একজন মানুষকে মেরে ফেলার কোনো অধিকার নেই। এখানে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে। তদন্ত চলছে, তদন্তে যারা দোষী সাবস্ত হবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারসোনালি আমার কোনো ভিন্নমত নেই। তিনি যোগ করেন, ভিন্নমত পোষণ করে বলে বিএনপি বলছে, ভারত সফরে দেশ বিক্রি করে দিয়েছি। তাই বলে কি বিএনপিকে মেরে ফেলব? যে নেতারা বলছে তাদের কি মেরে ফেলব? তিনি বলেছেন, আমি যতটুকু বুঝি এখানে ভিন্ন মতের জন্য একজন মানুষকে মেরে ফেলার কোনো অধিকার নেই। এখানে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে। তদন্ত চলছে, তদন্তে যারা দোষী সাবস্ত হবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারসোনালি আমার কোনো ভিন্নমত নেই।

কুষ্টিয়া শহরে আবরারের বাড়িতে পৌঁছেই শোনা গেল তাঁর মায়ের আহাজারি। বলে যাচ্ছিলেন, ‘গতকাল সকালে নিজে গিয়ে ওকে ঢাকার বাসে তুলে দিয়েছিলাম।’ আশপাশের লোকজনের কণ্ঠেও বারবার শোনা যাচ্ছিল আফসোস। পরিবারের সদস্যসহ সবার একটাই কথা, এত মেধাবী, শান্ত ছেলেটিকে কে হত্যা করতে পারে! গতকাল রোববার দিবাগত রাত তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলের নিচতলা থেকে আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বুয়েটের হল শাখার ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আবরার বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭ তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর বাড়ি কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই সড়কে মাহবুব আলম হানিফের বাড়ির পাশে। আবরারের বাবার নাম বরকতুল্লাহ। তিনি বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের নিরীক্ষক কর্মকর্তা ছিলেন। মা রোকেয়া খাতুন একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক। দুই ভাইয়ের মধ্যে আবরার ফাহাদ বড়। ছোট ভাই আবরার ফায়াজ ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। সেও ঢাকা কলেজের হোস্টেলে থাকে। বুয়েটের শের-ই-বাংলা হলের কাছেই তাঁর হোস্টেল।  সৌজন্যে : জাগোনিউজ২৪

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn