সানোয়ার হাসান সুনু, জগন্নাথপুর :: সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে এক সময়ের প্রভাবশলী ব্যক্তি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাজ্জাদ হোসাইন এখন অভাব অনটনে মানুষের কাছে হাত পাতছেন। দেশমাতৃকার ডাকে জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করলেও তার স্বাধীনভাবে চলার আর্থিক সক্ষমতা গড়ে তুলতে পারেননি। ফলে জীবন জিবিকার তাগিদে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। জানা যায়, ১৯৪৭ সালে জগন্নাথপুর পৌর শহরের ছিলিমপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে সোনার চামুচ মুখে নিয়ে জন্ম গ্রহন করেন সাজ্জাদ হোসাইন। বাল্যকালে ও ছাত্র জীবনে সাজ্জাদ হোসাইন বিলাসী জীবন-যাপন করেছেন। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে সিলেট এমসি কলেজের ২৬ বছর বয়সের ছাত্র নেতা সাজ্জাদ হোসাইন দেশ স্বাধীনের যুদ্ধে অংশ নিতে প্রশিক্ষণের জন্য চলে যান ভারতের বালাট ক্যাম্পে। সেখানে কয়েক মাস প্রশিক্ষণ নেয়ার পর মাতৃভূমি রক্ষায় দেশ স্বাধীনের যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন সাজ্জাদ হোসাইন। এ সময় বাংলা, ইংরেজি, উর্দু ও হিন্দি সহ কয়েকটি ভাষায় পারদর্শী এবং সৎ সাহসী হওয়ায় কর্তৃপক্ষ সাজ্জাদ হোসাইনকে কোম্পানী কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব দেন। প্রতিটি প্লাটুনে ৩৬ জন করে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।

সাজ্জাদ হোসাইন ছিলেন ৬ প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধার কোম্পানী কমান্ডার। কমান্ডার সাজ্জাদ হোসাইনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা প্রথমে সুনামগঞ্জের চিকনাকান্দি এলাকায় পাক বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করেন। পরে জগন্নাথপুর এসে পাক বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে জগন্নাথপুর থেকে পাক বাহিনী পালিয়ে গেলে জগন্নাথপুর মুক্ত হয়। দেশ স্বাধীনের পর প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সাজ্জাদ হোসাইন। দেশ ব্যাপী রয়েছে তার নাম ও খ্যাতি। এ সময় তিনি নানাভাবে এলাকার মানুষকে সহায়তা করেছেন। ২০০৩ সালে জগন্নাথপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও ২০০৫ সালে সুনামগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাজ্জাদ হোসাইন। ব্যক্তি জীবনে সাজ্জাদ হোসাইন বিয়ে করেননি। নেই তার সংসার। একাকী ঘরের একাকীত্ব জীবন। এক গ্লাস পানি এনে দেয়ার মতো লোক নেই। তাঁর ভাতিজা ফয়জুর রহমান ২ বেলা ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। যদিও সাজ্জাদ হোসাইনের ২ বোন ১ ভাতিজা যুক্তরাজ্যে ও ১ বোন ও ১ ভাতিজা বেলজিয়ামে বসবাস করেন। অজ্ঞাত কারণে তাঁরা সাজ্জাদ হোসাইনকে কোন আর্থিক ভাবে সহযোগিতা করেন না বলে সাজ্জাদ হোসাইন জানান। একটি দুর্ঘটনা বীর মুক্তিযোদ্ধা সাজ্জাদ হোসাইনকে আজ পথে বসিয়ে দিয়েছে। ২০০৪ সালে জগন্নাথপুরে ট্রলি ও রিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে রিকশাটি দুরের খাদে গিয়ে ছিটকে পড়ে রিকশায় থাকা যাত্রী সাজ্জাদ হোসাইন মাথায় গুরুত্বর আঘাত পেয়ে আহত হন। আহত সাজ্জাদ হোসাইন একটানা ২ মাস সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর তাঁকে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

সেখানে চিকিৎসকরা জানান, সাজ্জাদ হোসাইনের মাথায় ব্রেন হেমারেজ হয়েছে। মাথার ভেতরে জমে থাকা রক্ত অপারেশনের মাধ্যমে বের করতে খরচ লাগবে প্রায় আড়াই লাখ টাকা। অপারেশনের আগ পর্যন্ত নিয়মিত সেবনের জন্য কিছু ওষুধ লিখে দেয়া হয়। প্রথমে বিষয়টিকে পাত্তা দেননি সাজ্জাদ হোসাইন। ওষুধ খেয়ে না খেয়ে দিন পাড় করছেন। তবে গত ২ বছর ধরে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এরপর থেকে বাধ্য হয়ে প্রতিদিন তাঁকে ওষুধ গুলো খেতে হয়। কিন্তু বর্তামানে আর্থিক সংকটের কারণে সুচিকিৎসা করাতে পারছেন না।  শুক্রবার দৈনিক যুগান্তরের সাথে আলাপকালে কান্নাজড়িত কন্ঠে ৬৮ বছর বয়সী মুক্তিযুদ্ধা সাজ্জাদ হোসাইন (মুক্তিবার্তা নং ০৫০২৩০০৬৫) জানান, টাকার অভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে পারছি না। এখন অপারেশন করানো তো দুরের কথা, নিয়মিত ওষুধ খাওয়ার টাকাও নেই। এক সময়ের প্রভাবশালী ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধা সাজ্জাদ হোসাইন বর্তমানে চিকিৎসার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। প্রতিদিন অফিসপাড়া ও হাট-বাজারে বিভিন্ন জনের কাছে হাত পাততে গিয়ে তিনি অঝোর ধারায় কাঁদছেন। তিনি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর্তি জানিয়ে বলেন, আমি বাঁচতে চাই। মরে গেলে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা চাই না। তিনি সরকার সহ সকলের কাছে আর্থিক সাহায্য চেয়ে বলেন, আপনারা দয়া করে আমাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করুন যাতে আমি সু চিকিৎসা করাতে পারি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn