শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া:: সবারই ইচ্ছা থাকে চিরচেনা গণ্ডিতে জীবনটা কাটিয়ে দেওয়ার। কিন্তু পরিস্থিতি ও দুঃসময় মানুষকে ভালোবাসার বন্ধন ছিঁড়তে বাধ্য করে। এক স্থান থেকে আরেক স্থানে চলে যেতে হয়। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) তথ্যের বরাত দিয়ে সম্প্রতি বিবিসির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালে বিশ্বে গড়ে প্রতিদিন ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। এতে প্রতি দুই সেকেন্ডে বাস্তুচ্যুত হয়েছে একজন। সব মিলিয়ে বাস্তুহারা মানুষের সংখ্যা ৭ কোটি ১০ লাখ, যা এ–যাবৎকালের রেকর্ড। এর মধ্যে ২ কোটি ৬০ লাখ মানুষ দেশের সীমান্ত পেরিয়ে পাশের দেশে গেছে। ৪ কোটি ১০ লাখ মানুষ নিজের দেশেই বাস্তুচ্যুত হয়ে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে গেছে। আর প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ ভিনদেশে গিয়ে আশ্রয় চেয়েছে। কিন্তু দলে দলে এত মানুষ পালাচ্ছে কেন?

পালানোর কারণ
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার প্রতিবেদন বলছে, যুদ্ধ, সহিংসতা, নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনা এত মানুষকে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য করেছে। এর মধ্যে নারী ও শিশুই বেশি। তবে সংখ্যা কিন্তু থেমে নেই, ক্রমেই বাড়ছে। গত ১০ বছরে স্থানচ্যুত মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। ইরাক ও সিরিয়ার দীর্ঘস্থায়ী বিধ্বংসী যুদ্ধ বহু পরিবারকে নিজ এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছে। মানুষের বাস্তুভিটা ত্যাগের পেছনে আরও রয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ অন্যান্য বিপর্যয়। বিশেষ করে দেশের ভেতরই মানুষের জায়গা বদলের অন্যতম প্রধান কারণ এটা। গৃহযুদ্ধ বা অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে আরও যেসব দেশের মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, এর মধ্যে কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, দক্ষিণ সুদান, ইয়েমেন ও মিয়ানমার অন্যতম। মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর নির্যাতন ও ব্যাপক গণহত্যার ঘটনায় ২০১৭ সালের আগস্টে সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্য থেকে দলে দলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে কক্সবাজারে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম অবস্থান করছে। স্থানচ্যুত মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত। একটি হলো শরণার্থী, অন্যটি বাস্তুহারা। সংঘর্ষ, নিপীড়ন বা অন্য কোনো কারণে যেসব মানুষ দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়ে অন্য দেশে গিয়ে আশ্রয় খোঁজে, তারা শরণার্থী। আর যেসব মানুষ উল্লিখিত কারণে স্থানচ্যুত হয়ে নিজের দেশেই অন্য কোথাও নতুন করে আশ্রয় নেয়, তারা বাস্তুহারা। তাদেরকে ‘ইন্টারনালি ডিসপ্লেসড পিপল’ বলা হয়, সংক্ষেপে যা আইডিপি নামে পরিচিত।

বাড়ছে বাস্তুহারার দল
আইডিপি বা বাস্তুহারার দল সাধারণত নিজ দেশের ভেতরই কোথাও অবস্থান করে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুরোনো ভিটার কাছাকাছি এলাকায় শিকড় গাড়ে তারা। এর অন্যতম কারণ গৃহকাতরতা। তাদের মধ্যে একটা সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা থাকেÑপরিস্থিতি অনুকূল হলে আগের জায়গায় ফিরে যাবে। কখনো তা সম্ভব হয়, কখনো হয় না। পরিস্থিতির অবনতি হলে বরং এই কাছাকাছি থাকাটা আরও বিপদ ডেকে আনে। আবার বাস্তুহারা অনেকে আর্থিক দিক দিয়ে দুর্বল থাকে। এককভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে প্রতিবেশী দেশ বা উন্নত কোনো দূরদেশে যাওয়ার সামর্থ্য থাকে না। সে ক্ষেত্রে ইচ্ছা থাকলেও বিদেশে যাওয়া হয় না। বিশ্বে ‘আইডিপি’ লোকজন সবচেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা যুদ্ধপীড়িত এমন জায়গায় রয়েছে, যেখানে ত্রাণসহায়তা পৌঁছে দেওয়া কঠিন। কখনোবা সরকারও তাদের নিরাপদ আশ্রয় দিতে পারে না। বিশ্বে বর্তমানে কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, সিরিয়া আর কলম্বিয়ায় সবচেয়ে বেশি বাস্তুহারা রয়েছে। বাস্তুহারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টারের তথ্যমতে, বিরূপ বা চরম আবহাওয়াও বাস্তুহারার সংখ্যা বাড়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে যেসব এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়েছে, আবহাওয়া প্রতিকূল হয়ে উঠেছে—এসব এলাকায় অভ্যন্তরীণ বাস্তুহারার সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশে নদীভাঙন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, প্রত্যন্ত এলাকায় কর্মসংস্থানের অভাব বাস্তুহারার দল ভারী করছে। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ফুটপাত আর বস্তিতে এসব মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। সম্প্রতি শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও রাজবাড়ী জেলায় পদ্মার ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ভাঙনে তিন জেলায় এরই মধ্যে আবাদি জমি, বসতবাড়ি, বিদ্যালয় ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ কয়েক শ স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঘরবাড়ি ছেড়েছে সহস্রাধিক মানুষ।

শরণার্থী পরিস্থিতি
ঘরবাড়ি ছেড়ে পালানো মানুষের মধ্যে শরণার্থীর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। জাতিসংঘ বলছে, ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ ২ কোটি ৫৯ লাখ মানুষ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে গিয়ে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে। এর অর্ধেকই শিশু। ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হওয়া মানুষের মধ্যে প্রতি ১০ জনে একজনের কম শরণার্থী। প্রতি চারজনের একজন শরণার্থী সিরিয়ার নাগরিক। ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য হওয়া মানুষের সবচেয়ে বড় দলটি সিরিয়ার। গত বছর বাস্তুহারা ও শরণার্থী মিলিয়ে ১ কোটি ১৩ লাখ সিরীয় নিজের বাড়িঘর ছেড়েছে। এর পরই রয়েছে কলম্বিয়া। গত বছর এ দেশের ৮০ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে এ সমস্যা দীর্ঘদিনের। গত বছর সে দেশের ৫৪ লাখ মানুষ স্থানচ্যুত হয়ে অন্য কোথাও বা বিদেশ চলে গেছে। গত বছর স্থানচ্যুত মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাড়ি ছেড়েছে যুদ্ধের কারণে। তাদের সংখ্যা ১ কোটি ৩৬ লাখ, যা বিশ্বের অনেক বড় শহরের জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। একই বছর নিজ দেশে বাস্তুচ্যুত হয়েছে ১ কোটি ৮ লাখ মানুষ। ঘরবাড়ি ছেড়ে যাওয়া মানুষ যে কখনো আপন ঠিকানায় ফিরে আসে না, তা নয়। গত বছর বিভিন্ন দেশে নিজের বাড়িতে ফিরে আসা মানুষের সংখ্যা বাস্তুহারা ও শরণার্থী মিলিয়ে ২৯ লাখ। তবে একই সময়ে ঘরবাড়ি ত্যাগ করা মানুষের তুলনায় এ সংখ্যা নিতান্তই কম। অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যায় এক নম্বরে রয়েছে ইথিওপিয়া। গত বছর সে দেশে প্রায় ৩০ লাখ লোক দেশের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নতুন আশ্রয় খুঁজে নিয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গোষ্ঠীগত দাঙ্গা-হাঙ্গামার কারণে এ আশ্রয়বদলের ঘটনা ঘটে। কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে একই কারণে বাস্তুচ্যুত হয় ১৮ লাখ মানুষ। গত বছর সিরিয়ায় অভ্যন্তরীণ বাস্তুহারা মানুষের সংখ্যা ১৬ লাখ ছাড়িয়ে যায়। ২০১৮ সালে বিদেশে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করা মানুষের মধ্যে এক নম্বরে রয়েছে ভেনেজুয়েলার নাগরিকেরা। এ সময় ৩ লাখ ৪১ হাজার ৮০০ জন আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে নতুন করে আবেদন করে। তাদের সমস্যাটা অবশ্য ভিন্ন। হুগো শাভেজের মৃত্যুর পর ভেনেজুয়েলায় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতে। নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের সংকট ও দুষ্প্রাপ্যতা ভেনেজুয়েলার হাজারো মানুষকে দেশত্যাগে বাধ্য করছে।

সিরিয়ায় চলমান সংঘাতে লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে শরণার্থী। রয়টার্স ফাইল ছবিসিরিয়ায় চলমান সংঘাতে লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে শরণার্থী। রয়টার্স ফাইল ছবি
শরণার্থী মানেই অন্যের বোঝা
এ কথা নির্মম হলেও সত্যি যে শরণার্থীরা সব সময়ই আশ্রয়দাতা দেশের বোঝা। তা সে দেশ তাদের সাদরেই গ্রহণ করুক বা উপরোধে ঢেঁকি গিলুক। কারণ, শরণার্থী তো আর আমন্ত্রিত অতিথি নয় যে স্বল্প সময়ের সফরে গিয়ে চারটে খেয়ে একটু ঘুরে বিদায় নেবে। শরণার্থীদের স্বল্পকালীন অবস্থানও যেকোনো দেশের বাজেটে টান ফেলে দেবে। আন্তর্জাতিক সহায়তা এখানে আবশ্যক। শরণার্থীরা বেশির ভাগই স্থান বদলে প্রতিবেশী দেশকে বেছে নেয়। কারণ, সীমান্ত কোনোমতে পার হতে পারলেই নতুন ঠিকানা। আর প্রতিবেশী দেশের ভূগোল, আবহাওয়া, মানুষজন সম্পর্কে ধারণা থাকে বেশি। কাজেই সেখানে চলাফেরা করাটা তুলনামূলকভাবে সুবিধাজনক। এ জন্যই শরণার্থীদের প্রথম পছন্দ প্রতিবেশী দেশ। ভেনেজুয়ালার মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। এর মধ্যে ব্রাজিল অন্যতম। একটু দূরে পেরুতে অবশ্য বেশিই যাচ্ছে। আরও যাচ্ছে আমেরিকা আর স্পেনে। ভেনেজুয়েলার উপকূল থেকে সাত মাইল দূরের দেশ ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোতে গত বছর সাত হাজারের বেশি ভেনেজুয়েলান আশ্রয় চেয়ে আবেদন করে। সে দেশের দ্বীপগুলোতে এর মধ্যে ৪০ হাজার ভেনেজুয়েলান আশ্রয় নিয়েছে। ভেনেজুয়েলা থেকে এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ লাখ লোক অন্য দেশে চলে গেছে। ইউএনএইচসিআরের তথ্যমতে, শরণার্থীদের ৭০ ভাগই পাঁচটি দেশের নাগরিক। দেশগুলো হচ্ছে সিরিয়া, আফগানিস্তান, দক্ষিণ সুদান, মিয়ানমার ও সোমালিয়া। তারা বেশির ভাগই প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। সিরীয় শরণার্থীরা সিংহভাগই এখন তুরস্কে। আফগান শরণার্থী অর্ধেকের বেশি পাকিস্তানে। দক্ষিণ সুদানের অনেক শরণার্থী হয় সুদান নয়তো উগান্ডায় আশ্রয় নিয়েছে। আর মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা কোথায় আছে, তা আগেই বলা হয়েছে। শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার বেলায় সবচেয়ে উদার দেশ জার্মানি। সেখানে পাঁচ লাখের বেশি সিরীয় শরণার্থী রয়েছে। আফগান শরণার্থী রয়েছে প্রায় দুই লাখ। তবে শরণার্থীদের জন্য দ্বার অবারিত করার সুযোগে সন্দেজভাজন কিছু দুর্বৃত্তও ঢুকে পড়েছে জার্মানিতে। ধারাল অস্ত্র নিয়ে কয়েক দফা হামলার ঘটনায় এর প্রমাণ মিলেছে। গত আগস্টে জার্মানিতে ভিড়েপূর্ণ এক রেলস্টেশনে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় দুজন নিহত হয়। এসব কারণে শরণার্থী গ্রহণে আগের চেয়ে একটু কঠোর হয়েছে জার্মানি।

জর্ডানেও রয়েছে প্রচুর শরণার্থী। প্রতিবেশী দেশ সিরিয়া থেকে তারা এসেছে। জর্ডানে জনসংখ্যার তুলনায় শরণার্থী একটু বেশিই। সেখান প্রতি ছয়জনে একজন শরণার্থী। তবে জর্ডানে আশ্রয় পাওয়া সিরীয় নাগরিকদের মধ্যে ৮৫ শতাংশ মানবেতর জীবন যাপন করছে। বিশ্বে শরণার্থীদের সবচেয়ে বড় অস্থায়ী শিবির রয়েছে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায়। ১১ লাখ রোহিঙ্গার বাস। এরই মধ্যে তাদের আশ্রয়কাল দুই বছর পার হয়েছে। একটা জায়গায় একসঙ্গে এত মানুষ বাস করলে সেই জায়গা এমনিতেই নানাভাবে ধ্বংস হয়ে যায়। এরপরও দিন দিন তাদের সংখ্যা বাড়ছে। এই বিপুল জনসংখ্যা স্থানীয় মানুষের ওপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করছে। রোহিঙ্গাদের চাপে টেকনাফে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। রোহিঙ্গাদের অনেকেই নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে।

পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা আশঙ্কা করছেন, আগামী দিনগুলোতে বাস্তুহারা ও শরণার্থীর সংখ্যা বাড়বে। এর মূল কারণ যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের সম্পর্কের টানাপোড়েন অনেক আগেই থেকে আশান্তির ধোঁয়া ওগরাচ্ছে। এর মধ্যে সৌদি আরবের সঙ্গে ইরানের সাম্প্রতিক বৈরিতা নতুন করে বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে। ইসরায়েলও ইরানকে একহাত নিতে একপায়ে খাড়া। কারণ, উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে এখন ইরানই তাদের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। ইরান আরও শক্তিশালী হলে ছোট্ট একটি দেশ হয়ে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইয়েলের ছড়ি ঘোরানো বন্ধ হয়ে যাবে। ইয়েমেনে চলছে শিয়া ও সুন্নির ক্ষমতা দখলের লড়াই। সেখানেও ইরান ও সৌদি জোটের সশস্ত্র বিরোধ সুস্পষ্ট। গৃহযুদ্ধকবলিত সিরিয়ায় যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। বরং দেশটি নিয়ে আমেরিকা ও রাশিয়ার মতো শীর্ষ পরাশক্তি রশি টানাটানি করছে। সে দেশ পুরোটাই এখন ধ্বংসস্তূপ। বাসযোগ্য এলাকা বা বাসাবাড়ির বড়ই অভাব। আছে খাবারসহ নিত্যপণ্যের সংকট। কাজেই সিরিয়া থেকে আরও মানুষ পালাবে। দক্ষিণ এশিয়ায়ও পাওয়া যাচ্ছে অশান্তির গরম নিশ্বাস। আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা দখলে তৎপর। ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অভ্যন্তরে কী হচ্ছে, তা অনেকটাই ধোঁয়াশা। এরই জের ধরে পাকিস্তান-ভারত সীমান্তে টান টান হয়ে আছে দুই দেশের রক্ষীরা। আফ্রিকার কয়েকটি দেশ, লাতিন আমেরিকার ভেনেজুয়েলা, কলম্বিয়া, বলিভিয়া, মেক্সিকোতে শান্তি নেই। হংকং পরিস্থিতি এখনো শান্ত হয়নি। বরং একজন বিক্ষোভকারীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় পরিস্থিতি আর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। চীনের নিয়ন্ত্রণাধীন এই ভূখণ্ড থেকে ধনাঢ্য ব্যক্তিরা এরই মধ্যে অন্য দেশে যেতে শুরু করেছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে এখান থেকেও অনেক মানুষ অন্যত্র সরে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অভ্যন্তরীণ বাস্তুহারার দল ভারী করার ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক দুর্যোগই বেশি দায়ী। এ তথ্য দিয়ে ইন্টারন্যাশনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টার বলছে, গত বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিশ্বে ১ কোটি ৭২ লাখ লোক ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় সরে গেছে। গত মার্চে সাইক্লোন ইডাই আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হেনে সহস্রাধিক লোকের প্রাণ কেড়ে নেয়। এই সামুদ্রিক ঝড় একই সঙ্গে মোজাম্বিক, জিম্বাবুয়ে ও মালাবিতে লাখো লোকের বসতি নিশ্চিহ্ন করে। তারা এখন উদ্বাস্তু। পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে প্রায়ই প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে। জাপানে সম্প্রতি আঘাত হেনেছে টাইফুন হাগিবিস। সে দেশে ৬০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামুদ্রিক ঝড় এটি। রাজধানী টোকিওসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহর ও জনপদে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারত সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ। সম্প্রতি হিমালয় সন্নিহিত এলাকা ও নেপালে প্রবল বৃষ্টি হওয়ায় ঢলের পানি এসে ভারতে বিভিন্ন নদীর পানি বাড়িতে তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত করেছে। ভারতে খুলে দিয়েছে ফারাক্কা বাঁধের ১১৯টি স্লুইসগেট। তীরের বেগে পানি এসে ডুবিয়ে দিয়েছে রাজশাহীর নিম্নাঞ্চল। শুরু হয়েছে পদ্মার তীব্র ভাঙন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে আগামী দিনগুলোতে ঝড়ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা ও খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বারবার দেখা দেবে। এতে বাস্তহারা হবে অনেক মানুষ।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn