তাহমিনা নাসরিন এর ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকেঃঃ অনেক বছর আগে, বলতে গেলে প্রায় আট/দশ বছর আগের কথা- আমি একবার চট্টগ্রাম মেডিকেল এ লাশের ঘরে লাশ কাটার মানুষ দেখেছিলাম। লোকটি দেখতে মোটামুটি লম্বা এবং গায়ের রং কালোই বলা যায়। লোকটি পানিতে ডুবে মারা যাওয়া একটা মৃত কিশোরির শরীর কেটে (যাকে পোষ্টমর্টাম বলা হয়) পরীক্ষা নিরীক্ষণ করে শুধু হাতটুকু ধুয়ে শান্ত ভাবে বসে সিঙ্গারা খাচ্ছিল, আমি অবাক হয়ে লোকটির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম। লাশ কাটার ঘর থেকে বের হয়ে আসার পর একটা মানুষ এতো শান্ত নির্বিকার কিভাবে থাকে। ভাবছি, লোকটির কি একটুও ভয় লাগছে না কিংবা খারাপ লাগছে না। একটা মৃত মানুষকে কাটাকুটি করার পর শান্ত ভাবে বসে নাস্তা খাচ্ছে। আমি এই দৃশ্য দেখার পর দুদিন ঘুমাতে পারিনি এবং ঐ লোকটির শান্ত নির্বিকার চেহারা এখনো ভুলতে পারিনি। আমার লোকটিকে মনে হয়েছিল দয়ামায়াহীন কঠিন মানুষ । অথচ দুমুঠো ভাতের জন্য লোকটি কে এই ভয়ার্ত কঠিন কাজটি করতে হচ্ছে। “পৃথিবীতে দুমুঠো ভাতের কি মূল্য’’- যার পেটে ক্ষিধে আছে অথচ পকেটে টাকা নেই, একমাত্র সেই বুঝে। ফেইস বুকে যখনি আবরার ফাহাদের খুনিদের খুন করার ঘটনা গুলো পডি তখনি আমার লাশ কাটা ঘরের নির্বিকার ভাবলেশহীন মানুষটির কথা মনে পড়ে। আবরার ফাহাদ কে খুন করার পর খুনি গুলো এরকম নির্বিকারি ছিল, আবরারকে পিটিয়ে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যার পর ওরা খাওয়া দাওয়া করেছে, কেউ বসে দেখছিল টিভিতে ফুটবল খেলা ।
আমি হতবাক হই, বাকরুদ্ধ হই-এ কিভাবে সম্ভব?
যে ছেলেটি কিছুক্ষণ আগেও চিৎকার করে প্রাণভিক্ষা চাচ্ছিল, খুনি দের পা ধরে সাহায্য চাচ্ছিল তার জীবন বাঁচানোর জন্য, পানি চাচ্ছিল তার তৃষ্ণা মেটানোর জন্য, মা মা করে কাঁদছিল-অথচ ওরা ওদের ভিতরের পশুত্বে এতটা নিষ্ঠুর হয়েছিল তখন নিষ্পাপ আবরারের অসহায়ত্ব করুন সুর ওদের মনকে স্পর্শ করিনি। ওরা তখন এক একজন পৈশিচিকতায় উন্মত্ত দানব।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn