ভারতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি সফরকালে প্রদত্ত ভারত-বাংলাদেশের যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয় গত ৫ অক্টোবর। বিস্তারিত প্রকাশ হওয়ার আগেই এ নিয়ে নানা গুজব ডালপালা ছড়ায়। চুক্তিগুলো নিয়ে দুই পক্ষ যে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েছে এখানে তার পুরোটাই তুলে ধরা হল। ফেনী নদীর পানি বণ্টন থেকে শুরু করে বঙ্গোপসাগরে রাডার স্থাপনসহ চুক্তি বা সমঝোতা স্মারকের তথ্য-উপাত্ত বিবৃতিতে রয়েছে।

১. ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ০৫ অক্টোবর সরকারি সফরে ভারতে আগমন করেন। নয়াদিল্লীতে তাঁর সরকারি সফরের বাইরে, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের আয়োজনে ০৩-০৪ অক্টোবর ২০১৯ অনুষ্ঠিত ভারত অর্থনৈতিক শীর্ষ সম্মেলনেও প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২. প্রধানমন্ত্রীদ্বয় খুবই আন্তরিক ও উষ্ণ পরিবেশে বিশদ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে, সফরকালে স্বাক্ষরিত দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা স্মারক/চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীদ্বয় নিজ নিজ পক্ষের নেতৃত্ব দেন এবং ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনটি দ্বিপাক্ষিক প্রকল্পেরও উদ্বোধন করেন। সফরকালে নেতৃদ্বয় দুই দেশের মধ্যকার চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ব্যাপারে সন্তোষ প্রকাশ করেন, যা গড়ে উঠেছে গভীর ঐতিহাসিক ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ বন্ধনের ভিত্তিতে, যার মাধ্যমে সার্বভৌমত্ব, সমতা, বিশ্বাস ও সমঝোতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সামগ্রিক দ্বিপাক্ষিক অংশীদারি প্রতিফলিত হয় এবং যা থেকে একটি কৌশলগত অংশীদারির পথ প্রশস্ত হয়। তাঁদের মধ্যে অনুষ্ঠিত ফলপ্রসূ ও বিস্তারিত আলোচনায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সকল দিক উঠে আসে এবং তাঁরা আঞ্চলিক বিষয়াবলী নিয়ে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। উভয় প্রধানমন্ত্রী প্রথাগত ও অপ্রথাগত ক্ষেত্রগুলিতে পারস্পরিক লাভজনক অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন সুবিধাগুলিকে সম্পূর্ণ কাজে লাগানোর ব্যাপারে সম্মতি জ্ঞাপন করেন, যে অপরিবর্তনীয় অংশীদারিত্ব এক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতাকে প্রসারিত করে, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে যার সূচনা হয়েছে।

ভারত ও বাংলাদেশ কৌশলগত সম্পর্কের পথে প্রসারিত এক বন্ধন

৩. উভয় প্রধানমন্ত্রী ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং অন্যান্য অনন্য অভিন্নতাগুলির কথা পুনরায় স্মরণ করেন, যার ভিত্তিতে অংশীদারিত্বের অবয়ব গড়ে উঠেছে। তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় সেনাদের প্রতি এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন, যাঁরা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য ত্যাগ স্বীকার করেন। এবং গণতন্ত্র ও সমতার মূল্য সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশের নেতৃত্বের প্রতিজ্ঞাবদ্ধতার প্রতিও শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন। নেতৃদ্বয় বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সমান্তরাল এই যৌথ মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে তাঁদের প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। একটি সমৃদ্ধিশালী, শান্তিপূর্ণ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে লক্ষ্য, তা বাস্তবায়নের পথে ভারতের পূর্ণ সমর্থনের কথা প্রধানমন্ত্রী মোদি পুনরুল্লেখ করেন।

সীমান্ত প্রতিরক্ষা ও ব্যবস্থাপনা

৪. প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের “জিরো টলারেন্স নীতি” (কোনো আপোষ নয় নীতি)-কে স্বাগত জানান এবং এই অঞ্চলে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসিকতাপূর্ণ প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। সন্ত্রাসবাদকে উভয় দেশ ও এই অঞ্চলের জন্য সবচেয়ে গুরুতর হুমকিগুলোর একটি হিসেবে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রীদ্বয় সন্ত্রাসবাদ, তা যেমনতরই হোক আর যে উদ্দেশ্যেই হোক না কেন, একে নির্মূল করতে তাঁদের দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কথা পুনরুল্লেখ করেন এবং আরও জোর দিয়ে বলেন যে, যেকোনও প্রকার সন্ত্রাসী কার্যকলাপেরই কোনই যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফরকালে উভয় দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীদ্বয়ের সফল আলোচনার কথা উল্লেখ করেন উভয় নেতা এবং চরমপন্থী ও মৌলবাদী দল, সন্ত্রাসী, চোরাচালানকারী, জালনোটের চোরাচালানকারী এবং সংঘবদ্ধ অপরাধ সংঘটনকারীদের বিরুদ্ধে আরও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা উভয় দেশের যৌথ অগ্রাধিকারে রয়েছে।

৫. দুই দেশের মধ্যে ব্যক্তি পর্যায়ে যাতায়াত সহজ করার উপর উভয় পক্ষ গুরুত্বারোপ করেন। বাংলাদেশী নাগরিকদের সড়ক ও রেলপথে ভারত ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় আবশ্যিক চাহিদাগুলি সহজতর করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবং পারস্পরিক সম্পর্কের চেতনায় বাংলাদেশের ভ্রমণকারীদের জন্য বিদ্যমান স্থল বন্দর ব্যবহারের সকল বাধ্যবাধকতা তুলে নেয়া হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বৈধ নথিপত্রের মাধ্যমে স্থল বন্দর দিয়ে প্রবেশ/প্রস্থানের ক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলি ধাপে ধাপে তুলে নেয়া হবে বলে উভয় পক্ষ সম্মত হন, যার শুরু হবে আখাউড়া (ত্রিপুরা) এবং গোজাডাঙ্গা (পশ্চিম বাংলা) চেকপয়েন্ট দুটি থেকে।

৬. শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও অপরাধমুক্ত সীমান্ত নিশ্চিত করতে উভয় নেতা কার্যকর সীমান্ত ব্যবস্থাপনার উপর জোর দেন। এই লক্ষ্যে, তাঁদের নিজ নিজ সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে উভয় দেশের মধ্যকার আন্তর্জাতিক সীমান্তের অসমাপ্ত ক্ষেত্রগুলিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ দ্রুততম সময়ে সম্পূর্ণ করতে নির্দেশনা দেন। উভয় নেতা আরও সম্মত হন যে, সীমান্তে সাধারণ মানুষের প্রাণহানি একটি উদ্বেগের বিষয় এবং সহযোগিতামূলক ব্যবস্থা জোরদার করার মাধ্যমে সীমান্তের এরূপ অপ্রীতিকর ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট সীমান্ত রক্ষী বাহিনীগুলিকে নির্দেশনা দেন।

৭. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা বৃদ্ধির ব্যাপারে উভয় নেতা সম্মতি প্রকাশ করেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সহায়তার ক্ষেত্রে সময়ানুবর্তী প্রক্রিয়ায় দ্রুততর সময়ের মধ্যে একটি সহযোগিতা স্মারক চূড়ান্ত করার প্রয়োজনীয়তাকে তাঁরা স্বাগত জানান।

উভয় পক্ষের জন্য লাভজনক বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার পথে

৮. স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বেরিয়ে আসার আসন্ন অবস্থানকে স্বাগত জানিয়ে, বাংলাদেশের প্রতি উষ্ণ সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছে ভারত। এই অবস্থায়, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক সম্প্রসারিত অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তি (সিইপিএ)-তে আবদ্ধ হওয়ার জন্য উভয় দেশ দ্রুত একটি যৌথ গবেষণা সমীক্ষা চালাতে সম্মত হয়।

৯. আখাউড়া-আগরতলা বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানী-রপ্তানিতে বিধিনিষেধ তুলে নিতে ভারতের অনুরোধের জবাবে বাংলাদেশের পক্ষ তেকে জানানো হয় যে, নিয়মিত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অধিকাংশ দ্রব্যাদির উপর থেকে অদূর ভবিষ্যতে বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হবে।

১০. বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাটজাত পণ্যসহ একাধিক পণ্য রপ্তানিতে ভারতের আরোপিত অ্যান্টি ডাম্পিং/ অ্যান্টি সারকামভেন্ট শুল্ক তুলে নেয়ার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ করা হয়। ভারতীয় পক্ষ উল্লেখ করেন যে, বিদ্যমান আইনের সংস্কারের জন্য বাণিজ্য সংস্কারমূলক তদন্ত পরিচালিত হচ্ছে। বাণিজ্য সংস্কারমূলক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতার কাঠামো স্থাপনের কাজ দ্রুততর করতে উভয় নেতা তাঁদের নিজ নিজ পক্ষকে নির্দেশ দেন।

১১. দূরবর্তী বা বিচ্ছিন্ন সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী মানুষদের জীবন ও জীবিকার উপর সীমান্ত হাটগুলির ইতিবাচক ‍ভুমিকার প্রশংসা করে নেতৃদ্বয় আরও বারোটি হাট স্থাপনের কাজ দ্রুতবেগে সম্পন্ন করতে তাঁদের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন, যে হাটগুলি স্থাপনের ব্যাপারে উভয় দেশ ইতোপূর্বে সম্মত হয়েছে।

১২. বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) এবং ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস (বিআইএস) এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক নবায়নকে উভয় নেতা স্বাগত জানান। তাঁরা সম্মত হন যে, এই সমঝোতা স্মারক দুই দেশের মধ্যে একটি সুসম প্রক্রিয়ায় পণ্য বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। উভয় পক্ষ যথাক্রমে বিএবি এবং এনএবিএল এর শংসাপত্রের পারস্পরিক স্বীকৃতির বিষয়টি বিবেচনা করতে সম্মত হন, যেহেতু উভয় দেশই এশিয়া প্যাসিফিক ল্যাবরেটরি অ্যাক্রিডিটেশন কোঅপারেশন-এর সদস্য, এবং যেহেতু এনএবিএল এর সমমানের সুবিধাদি স্থাপনের কাজ বিএসটিআই শুরু করেছে।

১৩. ভারতীয় বাজারে বাংলাদেশী রপ্তানীকারকদের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশ প্রসারিত করতে ভারতের প্রস্তুতির প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁরা স্বাগত জানান যে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্য রপ্তানীর পরিমাণ প্রথমবারের মতো একশো কোটি ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে, যা রপ্তানীতে বার্ষিক ৫২% প্রবৃদ্ধির সাক্ষ্য দেয়।

১৪. উভয় দেশের বস্ত্র ও পাট বিষয়ক খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ হিসেবে, ভারত সরকারের বস্ত্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ সরকারের বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক দ্রুত নিস্পত্তির উপর প্রধানমন্ত্রীদ্বয় গুরুত্বারোপ করেন।

স্থল, নৌ ও আকাশপথে সংযোগ বৃদ্ধি

১৫. উভয় পক্ষ স্বীকার করেন যে, আকাশ, নৌ, রেল ও সড়ক পথে সংযোগ বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিসহ সমগ্র ভারতেরই অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে, যা পারস্পরিক লাভজনক সম্ভাবনার সৃষ্টি করবে। ভারত হতে ভারতে, নির্দিষ্ট করে, উত্তর পূর্ব ভারত থেকে এবং উত্তর পূর্ব ভারতে পণ্য পরিবহনের জন্য চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করার জন্য সাধারণ পরিচালন পদ্ধতি বা এসওইউ স্বাক্ষরকে নেতৃদ্বয় স্বাগত জানান, যার ফলে উভয় দেশের অর্থনীতিই লাভজনক অবস্থানে থাকবে।

১৬. উভয় নেতাই অভ্যন্তরীন নৌপথ ও উপকূলীয় নৌ পরিবহনের মাধ্যমে মালামাল পরিবহনের সম্ভাবনার উপর গুরুত্বারোপ করেন। এই লক্ষ্যে, তাঁরা অভ্যন্তরীন নৌ ট্রানজিট ও বাণিজ্য প্রটোকলের আওতায় ধুলিয়াঁ-গোদাগাড়ি-রাজশাহী- দৌলতদিয়া-আরিচা রুটে (দ্বিমুখী) অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান এবং দাউদকান্দি- সোনামুড়া (দ্বিমুখী) রুটটি এর সঙ্গে যোগ করেন।

১৭. নিজ নিজ দেশের রপ্তানী পণ্য ট্রান্স-শিপমেন্টের জন্য একে অন্যের সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের দ্বারা উভয় দেশের অর্থনীতি উপকৃত হতে পারে – এই বিষয়টি মাথায় রেখে, এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পথ খুঁজতে আলোচনা এগিয়ে নেয়ার ব্যাপারে উভয় দেশ সম্মত হয়।

১৮. উভয় দেশের মধ্যে শ্রেয়তর সংযোগ সৃষ্টিতে এবং যাত্রী ও পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা সহজ করতে উভয় নেতা বিবিআইএন যানবাহন চুক্তি অথবা ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক যানবাহন চুক্তি (যেটি যথাযথ বলে প্রতীয়মান হবে) আশু বাস্তবায়নে সম্মত হন; যার আওতায় আগ্রহী ও প্রস্তুত সদস্য দেশগুলির মধ্যে পণ্য ও যাত্রী চলাচল সহজ হবে।

১৯. উভয় দেশের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ আরও বাড়ানোর পদক্ষেপ হিসেবে উভয় নেতা ঢাকা-শিলিগুড়ি বাস সার্ভিস উদ্বোধনের পরিকল্পনাকে স্বাগত জানান।

২০. ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দেশের পানিসম্পদ সচিবদের আলোচনায় উভয় নেতা সন্তোষ প্রকাশ করেন। উক্ত আলোচনায়, ১৯৯৬ সালের গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশের প্রাপ্য পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে প্রস্তাবিত গঙ্গা-পদ্মা ব্যারেজ প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতা যাঁচাইয়ের জন্য যৌথ প্রযুক্তি কমিটি এবং প্রাসঙ্গিক শর্তাবলী প্রস্তুত করা হয়।

২১. মানু, মুহুরী, খোয়াই, গোমতি, ধরলা এবং দুধকুমার প্রমুখ ছয়টি নদীর পানি বণ্টনের নিমিত্তে অস্থায়ী অংশীদারি চুক্তির খসড়া ফ্রেমওয়ার্ক প্রস্তুত করার জন্য এবং এগুলির সাম্প্রতিক তথ্য ও উপাত্ত বিনিময়ের জন্য যৌথ নদী কমিশনের কারিগরি স্তরের কমিটিকে দ্রুততার সাথে কাজ করার জন্য এবং ফেনী নদীর পানি ভাগাভাগির জন্য অস্থায়ী চুক্তির খসড়া ফ্রেমওয়ার্ক চূড়ান্ত করার জন্য উভয় নেতা নির্দেশ দেন।

২২. প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুরুত্বের সাথে জানান যে, তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের জন্য অস্থায়ী চুক্তির ফ্রেমওয়ার্কের দ্রুত স্বাক্ষর ও বাস্তবায়নের বাংলাদেশের জনগণ অপেক্ষায় রয়েছে, যে চুক্তির ব্যাপারে ২০১১ সালে উভয় দেশের সরকার সম্মত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁকে আশ্বস্ত করেন যে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে চুক্তিটি সম্পাদনের জন্য ভারতীয় সকল অংশীপক্ষের সঙ্গে ভারতের সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

২৩. ত্রিপুরার সাবরুম শহরের বাসিন্দাদের পানীয় জলের চাহিদা পূরণে ফেনী নদী থেকে ১.৮২ কিউসেক পানি প্রত্যাহারের কাজ দ্রুত শুরু করতে ঢাকায় পানিসম্পদ সচিব পর্যায়ের সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তকে উভয় নেতা অভিনন্দিত করেন।

২৪. রেলওয়ে খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির পর্যাপ্ত সম্ভাবনা রয়েছে বলে উভয় নেতা উল্লেখ করেন। ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে উভয় দেশের রেলমন্ত্রীদের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে তাঁরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।

২৫. মানুষে মানুষে যোগাযোগ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার উপর উভয় নেতা গুরুত্বারোপ করেন। এর পদক্ষেপ হিসেবে, উভয় প্রধানমন্ত্রী মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের গমনাগমন সপ্তাহে ৪ বার থেকে ৫ বারে উন্নীত করার এবং বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের গমনাগমন সপ্তাহে ১ বারের স্থলে ২ বারে বর্ধিত করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান।

২৬. ভারত থেকে বাংলাদেশে রেলের রোলিং স্টক সরবরাহ এবং বাংলাদেশের সৈয়দপুরের রেলওয়ে কারখানার আধুনিকায়নের জন্য বিধান চূড়ান্ত করতে উভয় নেতা নিজ নিজ পক্ষের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন।

২৭. প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ব্রডগেজ ও মিটারগেজ লোকোমোটিভ অনুদান হিসেবে সরবরাহ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ধন্যবাদ জানান। উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্যের সুযোগ বৃদ্ধিতে এগুলো সহায়ক হবে।

২৮. আকাশ পথে বিদ্যমান সাপ্তাহিক ৬১টি পরিষেবাকে ২০১৯-এর গ্রীষ্ম মৌসুম থেকে সপ্তাহে ৯১টি এবং ২০২০ সালের শীত মৌসুম থেকে সপ্তাহে ১২০টিতে উন্নীত করার সিদ্ধান্তকে উভয় নেতা স্বাগত জানান।

প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি

২৯. ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত ও বাংলাদেশের যৌথবাহিনীর একত্রে যুদ্ধ করার সময় হতেই উভয় দেশের সহযোগিতার বিস্তৃত ইতিহাসের কথা স্মরণ করে নেতৃদ্বয় আরও বেশি সমন্বিত ও সুরক্ষিত প্রতিবেশিত্ব গড়ে তুলতে প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন।

৩০. সমুদ্রপথে নিবিঢ় নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে গৃহীত উদ্যোগকে উভয় প্রধানমন্ত্রী স্বাগত জানান এবং বাংলাদেশে উপকূলীয় নজরদারী রাডার স্থাপনে একটি সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত করার প্রশংসা করেন।

৩১. বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাতে প্রদত্ত ভারতের ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ সহায়তার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে উভয় নেতা সম্মতি জ্ঞাপন করেন, যার বাস্তবায়নের ব্যবস্থা ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে চূড়ান্ত করা হয়েছে।

উন্নয়ন সহযোগিতা দৃঢ়করণ

৩২. বাংলাদেশে বিভিন্ন উচ্চ-প্রভাবশালী সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প (এইচআইসিডিপি) অনুদান সহায়তার আওতায় গ্রহণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের সরকারকে ধন্যবাদ জানান। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের তৃণমূল পর্যায়ে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখছে ভারত সরকার।

৩৩. তিনটি ঋণ চুক্তির কার্যকারিতার অগ্রগতিতে উভয় প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং নিজ নিজ পক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উক্ত ঋণ চুক্তির আওতায় গৃহীত প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়ন দ্রুততর করতে নির্দেশনা দেন।

৩৪. ঢাকায় ভারতের এক্সিম ব্যাংকের প্রতিনিধি কার্যালয় স্থাপনের কাজের জন্য ভারতীয় সরকারের বাংলাদেশকে প্রদত্ত ঋণ চুক্তিসমূহ বাস্তাবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তির ব্যাপারে উভয় পক্ষ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।

৩৫. নেতৃদ্বয় ৫ অক্টোবর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনটি দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন অংশীদারী প্রকল্পেরও উদ্বোধন করেন, যেগুলো হলো:

ক) বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ এলপিজি গ্যাস আমদানী

খ) ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনে বিবেকানন্দ ভবন (ছাত্র হোস্টেল) উদ্বোধন

গ) বাংলাদেশের খুলনায় অবস্থিত ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি)-তে বাংলাদেশইন্ডিয়া প্রফেশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট (বিআইপিএসডিআই)-এর উদ্বোধন

৩৬. বাংলাদেশের সরকারি কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে চলমান দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ব্যাপারে উভয় পক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ ও ভারতে একই আইনশাস্ত্র অনুসরণ করা হয় বলে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য কাজ করা হবে।

দুই দেশের মধ্যে জ্বালানি সহায়তা

৩৭. বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ এলপি গ্যাস বাংলাদেশী ট্রাকে করে ভারতে সরবরাহের জন্য উভয় প্রধানমন্ত্রী একটি প্রকল্প উদ্বোধন করেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে, এ ধরণের জ্বালানী সংযোগ উভয় দেশের মধ্যে জ্বালানী সংক্রান্ত ব্যবসায় বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

৩৮. সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত জ্বালানী খাতে ইন্দো-বাংলাদেশ সহযোগিতা বিষয়ক যৌথ সমীক্ষা কমিশনের ১৭তম সভায় ভারতের কাটিহার, বাংলাদেশের পার্বতীপুর ও ভারতের বরানগরের মধ্যে ৭৬৫ কেভি ডবল সার্কিট আন্তঃদেশীয় বিদ্যুত আন্তসংযোগ স্থাপনের বিষয়ে স্বাক্ষরিত চুক্তিকে উভয় পক্ষ স্বাগত জানান। উভয় নেতা উল্লেখ করেন যে, বাস্তবায়নের পদ্ধতি চূড়ান্ত করার পর এই অতিরিক্ত সামর্থ আন্ত-আঞ্চলিক বাণিজ্যের আরও বেশি প্রসারণে সহায়ক হবে, যার মধ্যে রয়েছে প্রতিযোগিতামূলক দামে ভারত, নেপাল ও ভুটানের জলবিদ্যুত প্রকল্পে উৎপাদিত বিদ্যুৎ।

শিক্ষা ও যুব বিষয়ক আদানপ্রদান

৩৯. ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ হিসেবে উভয় দেশের যুব সমাজের মধ্যে বিনিময় বৃদ্ধির উপর উভয় দেশ গুরুত্বারোপ করেন। এই পথে গৃহীত পদক্ষেপ হিসেবে, তাঁরা যুব বিষয়ক একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের কথা উল্লেখ করেন। উভয় নেতা উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের জন্য উপযোগী কাঠামোগত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এক্ষেত্রে আরও বেশি ফলপ্রসূ হবে।

৪০. উভয় নেতা তাঁদের নিজ নিজ দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতার পারস্পরিক স্বীকৃতি বিষয়ক সমঝোতা স্মারকটি দ্রুত স্বাক্ষরের ব্যাপারে নির্দেশনা দেন।

সাংস্কৃতিক সহযোগিতা – মহাত্মা গান্ধির ১৫০তম জন্মবার্ষিকী (২০১৯), বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী (২০২০) এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ৫০ বছর পূর্তি

৪১. উভয় নেতা দুটি গুরুত্বপূর্ণ জয়ন্তীর বছর স্মরণীয় করে রাখতে বৃহত্তর সহযোগিতার প্রয়োজনের উপর গুরুত্বারোপ করেন: ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও ভারতবাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক ঐক্যের ৫০ বছর পূর্তি। এই দুটি ঐতিহাসিক বর্ষ স্মরণীয় করে রাখতে, উভয় নেতা দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক মিথষ্ক্রিয়া বৃদ্ধির ব্যাপারেও সম্মত হন। ২০১৯-২০২০ সালের মধ্যে উভয় দেশের জন্য পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশে একটি ভারতীয় উৎসব আয়োজনের প্রস্তাব রাখায় ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

৪২. এই সফরে সাংস্কৃতিক বিনিময় কার্যক্রম বিষয়ক সমঝোতা স্মারকের নবায়নকে উভয় প্রধানমন্ত্রী স্বাগত জানান।

৪৩. ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উদ্যাপনের অংশ হিসেবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপর যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য এনএফডিসি ও বিএফডিসি’র মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য প্রয়োজনীয় কাজ দ্রুততার সাথে সম্পাদনের জন্য উভয় প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন।

৪৪. ঔপনিবেশক শাসন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলনের দর্শনের জন্য বিশ্বব্যাপী নন্দিত ব্যক্তিত্ব মহাত্মা গান্ধির ১৫০তম জন্ম জয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে একটি স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

৪৫. ভারতের জাতীয় জাদুঘর এবং বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের মধ্যে সহযোগিতা বিষয়ক একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ব্যাপারে উভয় নেতা সম্মত হন এবং দ্রুততর সময়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারকটি চূড়ান্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য হতে বিতাড়িত জনগণ

৪৬. মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য হতে জোরপূর্বক বিতাড়িত জনগণকে আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের মহানুভবতার প্রশংসা করেন। কক্সবাজারের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলিতে রোহিঙ্গাদেরকে দেয়া বাংলাদেশ সরকারের মানবিক সহায়তার সমর্থনে ভারত পঞ্চম কিস্তির মানবিক সাহায্য সরবরাহ করবে। এই সাহায্যের মধ্যে থাকবে তাঁবু, ত্রাণ এবং পুনর্বাসন সরঞ্জাম এবং এক হাজার সেলাই মেশিন, যা জোরপূর্বক বাস্তুচূ্যত মিয়ানমারের নারীদের জীবিকায়ন দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। সেই সঙ্গে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ২৫০টি বাড়ি নির্মাণের প্রথম প্রকল্প ভারত সম্পন্ন করেছে এবং এখন এই এলাকায় আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পের অপর একটি কর্মসূচি বাস্তবায়নে নিয়োজিত আছে।

৪৭. মিয়ানমারের দেশত্যাগী নাগরিকদের প্রয়োজন মেটাতে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ভারত যে মানবিক সহায়তা প্রদান করে আসছে, তার জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সরকারকে কৃতজ্ঞতা জানান। উভয় প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের নাগরিকদের শিঘ্রই নিরাপদ, দ্রুত ও স্থিতিশীল প্রত্যাবাসনের আবশ্যকতার ব্যাপারে সম্মত হন। তাঁরা আরও সম্মত হন যে, তাদের প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে আরও বেশি প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, যার মধ্যে রয়েছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন।

এই অঞ্চলে ও বিশ্বব্যাপী অংশীদারগণ

৪৮. উভয় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ ও অন্যান্য বহুদেশীয় সংগঠনগুলিতে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাওয়ার প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। নির্দিষ্টভাবে, এজেন্ডা ২০৩০-এ উল্লিখিত উন্নত দেশগুলির প্রতিশ্রুতিসমূহের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উভয় দেশ একত্রে কাজ করে যাবে বলে তাদের প্রতিজ্ঞার কথা নেতৃদ্বয় আবারও নিশ্চিত করেন।

৪৯. উভয় নেতা সম্মতি জ্ঞাপন করেন যে, আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা উভয় দেশের জন্য অগ্রগণ্য ক্ষেত্র। এই লক্ষ্যে, তাঁরা বিমসটেক এর কার্যক্রম গতিশীল রাখার ব্যাপারে সহমত প্রকাশ করেন, যাতে করে এই ফোরামকে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি কার্যকর বাহনে পরিণত করা যায়, যার ফলে সকল সদস্য দেশের জন্য সামষ্টিক উন্নয়ন অর্জনের লক্ষ্য পূরণ হয়।

৫০. এই সফরে নিম্নলিখিত দ্বিপাক্ষিক নথিপত্র স্বাক্ষরিত, বিনিময়, গৃহীত ও হস্তান্তর করা হয়:

-উপকূলীয় নজরদারী ব্যবস্থা সরবরাহের জন্য সমঝোতা স্মারক

-ভারত হতে এবং ভারতে পণ্য পরিবহনের জন্য চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের জন্য সাধারণ পরিচালন পদ্ধতি (এসওপি)

-ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাবরুম শহরের অধিবাসীদের পানীয় জল সরবরাহের জন্য ফেনী নদী হতে ১.৮২ কিউসেক পানি প্রত্যাহারের জন্য সমঝোতা স্মারক

-বাংলাদেশকে ভারতের প্রতিশ্রুত ঋণচুক্তি (এলওসি) বাস্তবায়নের জন্য চুক্তি

-হায়দারাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক

-সাংস্কৃতিক বিনিময় কার্যক্রম নবায়ন

-যুব বিষয়ক সহযোগিতা প্রসঙ্গে সমঝোতা স্মারক

৫১. চেন্নাইয়ে বাংলাদেশের একটি উপ-দূতাবাস খোলার ব্যাপারে বাংলাদেশের অনুরোধের প্রতি সম্মতি জ্ঞাপন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানান।

উচ্চ পর্যায়ের সফরের মাধ্যমে সম্পর্কের গতিশীলতা ধরে রাখা

৫২. ভারতে অবস্থানকালে তাঁর এবং তাঁর সফরসঙ্গীদের প্রতি উষ্ণ আন্তরিকতা ও সদয় আতিথেয়তা প্রদর্শনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে।

৫৩. বাংলাদেশে সফরের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদিকে আমন্ত্রণ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং জানান যে, সফরের সময়সূচি কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় চূড়ান্ত করা হবে। সূত্র: কালের কণ্ঠ

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn