বার্তা ডেক্স:: যুক্তরাজ্যে এখন পার্লামেন্ট নির্বাচনের হাওয়া। ইউরোপ থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে আসা তথা ব্রেক্সিট ইস্যুকে কেন্দ্র করে নির্ধারিত সময়ের আগেই দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন হতে পারে বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে। খবর বেরিয়েছে, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন আগামী ডিসেম্বরেই সাধারণ নির্বাচন করতে চাইছেন। অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচনে এমপি পদে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে আছেন অন্তত পাঁচ সিলেটি; যারা সিলেটি বংশোদ্ভূত হলেও স্থায়ীভাবে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। বিস্ময়করভাবে, এরা সবাই নারী। এ পাঁচ প্রার্থী হলেন- রুশনারা আলী, আফসানা বেগম, ডা. আনোয়ারা আলী, রাবিনা খান ও বাবলিন মল্লিক। যুক্তরাজ্যে লেবার পার্টি, কনজারভেটিভ পার্টি ও লিব ডেম দল থেকে প্রার্থী হচ্ছেন তাঁরা। নির্বাচনের চূড়ান্ত ডামাডোল শুরু হলে সিলেটি বংশোদ্ভূত প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনাও আছে।

জানা গেছে, যুক্তরাজ্যে ২০১৭ সালের ৮ জুন সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। গঠিত সংসদের মেয়াদ শেষে আগামী ২০২২ সালের ৫ মে পরবর্তী নির্বাচন হওয়ার কথা। তবে ব্রেক্সিট ইস্যু নিয়ে যুক্তরাজ্যের রাজনীতি এখন উত্তপ্ত। ব্রেক্সিট কার্যকর করতে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কনজারভেটিভ পার্টির বরিস জনসন। তিনি ১২ ডিসেম্বর নির্বাচন করতে চাইছেন। দেশটির এসএনপি এবং লিবারেল ডেমোক্রেটিক (লিব ডেম) দলও প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবকে সমর্থন করে আগাম নির্বাচনে মত দিয়েছে, তবে তারা ৯ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। জানা গেছে, বর্তমানে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে আছেন এক সিলেটি বংশোদ্ভূত এমপি। তিনি হলেন রুশনারা আলী। এবারও লেবার পার্টি থেকে তিনি প্রার্থী হচ্ছেন, এটা নিশ্চিত হয়ে গেছে। রুশনারা আলী সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার ভুরকি গ্রামের বাসিন্দা। লেবার পার্টি থেকে পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসন থেকে টানা তিনবার এমপি পদে বিজয়ী হয়েছেন। রুশনারাই প্রথম বাংলাদেশি, যিনি যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।

প্রথমবার ২০১০ সালে, দ্বিতীয়বার ২০১৫ সালে এবং সর্বশেষ ২০১৭ সালে মধ্যবর্তী নির্বাচনে বিজয়ী হন রুশনারা। তিনি সংসদে লেবার পার্টির শ্যাডো শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। রুশনারার আসনটি বাংলাদেশি অধ্যুষিত হওয়ায় এবারও বিজয় নিয়ে তিনি প্রবল আশাবাদী। আগামী নির্বাচনে বর্তমানে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি থেকে প্রার্থী হচ্ছেন ডা. আনোয়ারা আলী। তাঁর গ্রামের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের সুনামপুরে। ২০১৫ সালে তিনি তাঁর দল থেকে টাওয়ার হ্যামলেটসে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে এবার আর মেয়র পদে নয়, এমপি পদে একই দল থেকে প্রার্থী হচ্ছেন আনোয়ারা। তাঁর আসন লন্ডনের হ্যারো ওয়েস্ট। এ আসনটি কনজারভেটিভ দলের ‘ভোটব্যাংক’ হিসেবে পরিচিত। ফলে তিনিও জয় নিয়ে আশাবাদী।

প্রসঙ্গত, আনোয়ারা আলী প্রথম কোনো বাঙালি এবং নারী, যিনি কনজারভেটিভ পার্টি থেকে মেয়র পদে নির্বাচন করেছেন। যুক্তরাজ্যে চিকিৎসাসেবায় অসামান্য অবদান রাখায় তিনি ‘মেম্বার অব দ্য অর্ডার অব ব্রিটিশ অ্যাম্পায়ার’ সম্মাননাও পেয়েছেন। জানা গেছে, পূর্ব লন্ডনের পপলার-লাইম হাউস আসনে এবার লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন আফসানা বেগম। তাঁর পৈত্রিক বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের লুদরপুর গ্রামে। আফসানাকে প্রার্থী হতে লড়াই করে আসতে হয়েছে। গেল রবিবার লেবার পার্টির সদস্যদের ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে তিনি এমপি পদে চূড়ান্ত মনোনয়ন পান। আফসানা পান ২৮১ ভোট। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বি সোমালিয়া বংশোদ্ভূত আমিনা আলী ২২৩ ভোট পান। লেবার পার্টির টাওয়ার হ্যামলেটস শাখার ভাইস চেয়ারম্যান আফসানা বেগম। তিনি দলটির লন্ডন রিজিয়নের সদস্য। এ পদে তিনিই প্রথম বাঙালি বংশোদ্ভূত। এদিকে, লিব ডেম দল থেকে এবার যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ সেন্ট্রাল আসনে এমপি পদে লড়বেন ড. বাবলিন মল্লিক। তিনি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কচুয়া গ্রামের মোহাম্মদ ফিরোজের মেয়ে। বাবা-মায়ের সাথে ছোটবেলা থেকেই যুক্তরাজ্যে বসবাস করে আসছেন তিনি। যুক্তরাজ্যে কাউন্টি কাউন্সিলে প্রথম বাঙালি ও মুসলিম নারী হিসেবে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন বাবলিন মল্লিক। জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে লিব ডেম পার্টি থেকে আরেক সিলেটি বংশোদ্ভূত নারী রাবিনা খান এমপি পদে লড়বেন। তিনি লন্ডনের কেনজিংটন অ্যান্ড চেলসি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিবতা করবেন। তার পৈত্রিক বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায়। রাবিনা খান বর্তমানে টাওয়ার হ্যামলেটসের শ্যাডওয়েলের কাউন্সিলর। সর্বশেষ টাওয়ার হ্যামলেটস নির্বাচনে তিনি মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। এই পাঁচ সিলেটি তথা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী ছাড়াও আরো অন্তত দুজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আছেন, যারা আগামী নির্বাচনে এমপি পদে লড়বেন। তাঁরা হলেন- টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক ও রূপা আশা হক। তাঁরা দুজনই বর্তমানে লেবার পার্টির এমপি। বঙ্গবন্ধুকন্যা ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে। তিনি ২০১৫ সালের নির্বাচন থেকে লন্ডনের হ্যামস্টেড ও কিলবান আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়ে আসছেন। অন্যদিকে, রূপা হক লন্ডনের ইলং সেন্ট্রাল ও অ্যাকটন আসন থেকে ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn