বার্তা ডেস্ক :: রাজধানীর ধানমন্ডিতে জোড়া খুন হওয়া গৃহকর্ত্রী আফরোজা বেগম ও গৃহকর্মী দিতি হত্যার ঘটনায় ওই ফ্ল্যাটের নতুন গৃহকর্মীকে খুঁজছে পুলিশ। ভবনের সিসিটিভি ফুটেজে গৃহকর্মীর সন্দেহজনক চালচলন দেখে আপাতত তাকেই প্রধান অভিযুক্ত ধরে চলছে তদন্ত। গতকাল শুক্রবার রাতে ধানমন্ডির ফ্ল্যাটে গিয়ে আফরোজা বেগম ও দিতির গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। তারা হলেন- বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী, আফরোজার জামাতা কাজী মনির উদ্দিনের বডিগার্ড বাচ্চু এবং ভবনের ইলেকট্রিশিয়ান বেলায়েত। ঘটনার তদন্তে ধানমন্ডির ২৮ নম্বর রোডের ২১ নম্বর বাড়ির বাইরের, ভেতরের, সিঁড়ি ও কোরিডরের সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করা হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ যাচাই করে দেখা গেছে, মেয়েটি দুপুর ২ টা ২০ মিনিটে ভবনের গেটে আসে। মেয়েটির পরনে ছিল জিন্সের প্যান্ট, কামিজ ও ওড়না। মেয়েটি প্রথমে ভবনের ভেতরে আফরোজা বেগমের ফ্ল্যাটে ঢোকার চেষ্টা করছিল। তবে গেটে নিরাপত্তাকর্মী তাকে বাধা দিলে তিনি মোবাইলফোনে একটি কল করেন। পরে ওপর থেকে বাচ্চু এসে তাকে নিয়ে যায়। বিকেল সাড়ে ৫টায় মেয়েটি বের হয়ে যায়। তবে বাচ্চু এর আরো আগেই ভবন থেকে বের হয়ে গিয়েছিল। এ পর্যন্ত মেয়েটির নামপরিচয় কিছুই জানতে পারেনি পুলিশ। তদন্ত সূত্র বলছে, মেয়েটি বাচ্চুর পূর্ব পরিচিত হতে পারে। তাকে গেটে বাধা দেয়া হলে সে বাচ্চুর মোবাইল নম্বরে ফোন দেন। বাচ্চু নিচে এসে তাকে রিসিভ করে নিয়ে যান।

সূত্র আরও জানায়, পুলিশ হেফাজতে থাকা বাচ্চুর কাছ থেকে মেয়েটির সম্পর্কে কোনো তথ্য পায়নি পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে সে পুলিশকে জানিয়েছে, সে ধানমন্ডির একটি দোকান থেকে নিয়মিত পান খেত। ওই পানওয়ালা তাকে একদিন বলেন, যে তার কাছে একটি মেয়ে আছে, মেয়ের জন্য এই বাড়িতে একটি কাজ জোগাড় করে দিতে। তাই বাচ্চু আফরোজাকে ওই মেয়েটিকে নতুন গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োগের কথা বলে। আফরোজার সঙ্গে দেখা করতেই মেয়েটির আসার কথা। বাচ্চু পুলিশের কাছে দাবি করে, গতকালের আগে মেয়েটির সঙ্গে তার দেখা কিংবা কথা হয়নি। তবে এ ঘটনার পর স্থানীয় ওই পানওয়ালাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। তদন্তের বিষয়ে পুলিশের ধানমন্ডি জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আবদুল্লাহ হেল কাফী বলেন, ‘তদন্ত চলছে। মেয়েটিকে ধরতে পারলে সব রহস্যের উদঘাটন হবে। আমরা তাকে আটক করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ ঘটনার ২৪ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত এ ঘটনায় মামলা করেননি পরিবারের কেউ। পুলিশ বলছে, পরিবারের লোকজন বলছে তারা রাতে মামলা করবে। এ ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট। তারা সিঁড়ি, কোরিডর, ঘর, ফ্ল্যাটের দরজা, আলমারির লক ইত্যাদি থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে। তারাও পৃথকভাবে তদন্ত করছে বলে জানা গেছে।

শনিবার দুপুরে নিহতদের মরদেহের ময়নাতদন্ত করেছে ঢামেক ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. কবির সোহেল। তিনি সাংবাদিকদের জানান, দুটি মৃতদেহেই গলা কাটাসহ অনেকগুলো ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। কিছু নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মর্গ সূত্র জানা যায়, ময়নাতদন্তের সময় তাদের গলায় ধারালো অস্ত্রের পাশাপাশি দুজনের শরীরের একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। পরীক্ষার জন্য গৃহকর্ত্রীর ভিসেরা ও গৃহকর্মী দিতির হাই ভেজিনাল টিস্যুর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মৃত্যুর আগে দিতি ধর্ষণের শিকার হয়েছে কি না, এই পরীক্ষায় তা জানা যাবে। সৌজন্যে : জাগোনিউজ২৪

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn