নিজের বৃটিশ ভিসা নবায়নে সাহায্য করতে রাজি হননি স্ত্রী। এ নিয়ে ঝগড়ার পর স্ত্রী সহ নিজের পুরো পরিবারকেই হত্যা করেছেন বৃটেনে কর্মরত এক বাংলাদেশি কারি শেফ। তার এখন যাবজ্জীবন সাজা হতে পারে। এ খবর দিয়েছে বৃটিশ দৈনিক ডেইলি মেইল। খবরে বলা হয়, মোহাম্মদ আবদুল শুকুর নামে ওই বাংলাদেশি নিজের অভিবাসন মর্যাদা নিয়ে স্ত্রী জুলি বেগমের সঙ্গে ঝগড়া করেন। এরপর তিনি স্ত্রী জুলি বেগম সহ দুই কন্যা অনিকা ও তানহাকে হত্যা করেন। ওই দুই কন্যার বয়স ছিল যথাক্রমে পাঁচ ও ছয়। জুলি বেগম ঝগড়া করছিলেন এই বলে যে সংসারে তেমন টাকা দেন না শুকুর।ঝগড়ার পর এক রাতে এক সহকর্মীর কাছ থেকে ১০০ পাউন্ড ধার নিয়ে পূর্ব লন্ডনের ইস্ট হ্যামে অবস্থিত জুলি বেগমের বাসায় যান শুকুর। এরপর তিনি স্ত্রীর সঙ্গে শেষবারের মতো সহবাসে লিপ্ত হন। তারপর তিনি জুলি বেগমকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। তিনি কন্যা অনিকাকে সাদা মোজা দিয়ে ফাঁস দিয়ে ও তানহাকে মাথার খুলিতে আঘাত করে হত্যা করেন। খবরে বলা হয়, আগেও জুলি বেগমকে পিটিয়েছিলেন শুকুর। ২০০১ সালে যখন তার স্ত্রী গর্ভবতী ছিলেন, তখনও তাকে একবার আঘাত করেছিলেন এই বাংলাদেশি শেফ। এই হত্যার ঘটনা ঘটে ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে। তখন তিনি সারে’র একটি রেস্তরাঁয় দৈনিক ১৩০ পাউন্ডের বিনিময়ে কাজ করতেন। হত্যার পর নিজের পিতা মারা যাওয়ার কথা বলে ৫ই জানুয়ারি বাংলাদেশে চলে আসেন তিনি। সিলেটের এই বাসিন্দা এক মাস পর বাংলাদেশে জুলি বেগমের বোনের বাড়িতে হাজির হন। সেখানে তিনি তাকে হুমকি দেন এই বলে যে, ‘আমি তোমার বোনকে হত্যা করেছি এ কথা পুলিশকে বলবে না। বললে তোমাকে আর তোমার সন্তানদেরও হত্যা করবো।’ তবে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর এই বছরের এপ্রিলে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে ফেরত পাঠানো হয় শুকুরকে। গতকাল তিনি ৩টি হত্যার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। জুলি বেগমের পরিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আবদুল শুকুর আমাদের পুরো পরিবারকে ধ্বংস করেছে। সে এক মিষ্টি মা ও বোন, জুলিকে কেড়ে নিয়েছে। সে কেড়ে নিয়েছে দুই মিষ্টি মেয়ে তানহা ও অনিকার ভবিষ্যৎ।’ লন্ডনের বিচারক রিচার্ড মার্কস কিউসি বলেছেন, শুকুর যাবজ্জীবন সাজা পেতে পারে। সরকারি কৌঁসুলি ডেভিড সেপন্স বলেন, বিবাহিত থাকা অবস্থায় জুলি বেগম কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারতেন না। তার জীবন ছিল বন্ধুবিহীন। সেপন্স আরো বলেন, জুলি বেগম ও আসামির মধ্যেকার বিবাহিত জীবন সুখের ছিল না। আসামির অভিবাসন মর্যাদা আর সংসারে তার অবদান নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া লেগে থাকতো দু’ জনের মধ্যে। আসামি যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন বৈবাহিক ভিসায়। ফলে যুক্তরাজ্যে বসবাসের জন্য জুলির ওপর নির্ভরশীল ছিলেন তিনি। আসামি প্রায়ই বাসায় গিয়ে জুলিকে বলতো যে, তিনি আরো সুন্দরী নারীদের সঙ্গে ছিলেন। তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো, আর আসামি হুমকি দিতেন, ‘তুমি যদি আমার ভিসা ঠিক না করে দাও আর এই দেশে থাকা বৈধ করে না দাও, তাহলে আমি তোমাকে আর তোমার পরিবারকে হত্যা করবো।’ তিনি জুলি বেগমকে আরো বলতেন যে, তিনি সুন্দরী নন। তিনি তাকে বিয়ে করেছেন শুধু লন্ডনে আসার জন্য। জুলি চিন্তিত ছিলেন যে, যদি শুকুর যুক্তরাজ্যে থাকার ভিসা পেয়ে যায়, তাহলে তিনি তাকে ছেড়ে চলে যাবেন ও অন্য কাউকে বিয়ে করবেন। এ কারণে জুলি ওই অভিবাসন আবেদন এগিয়ে নিতে সাহায্য করতে রাজি ছিলেন না। এ কারণেই ঝগড়া লাগতো প্রায়ই। ২০০৭ সালের ১০ই জানুয়ারি জুলির বড় বোন শেলি বেগম পুলিশকে জানান যে, প্রায় ১০ দিন ধরে জুলি বা নিজের বোনের মেয়েদের তিনি দেখছেন না। পুলিশ সেদিন গিয়েই তাদের লাশ উদ্ধার করে। শুকুর ও জুলি বেগম সমপর্কে কাজিন। ১৯৯৯ সালের অক্টোবরে তাদের বিয়ে হয় বাংলাদেশে। জুলি এরপর লন্ডনে ফিরে যায়। এক বছর পর তিনি শুকুরকে লন্ডনে নিয়ে যান। ২০০০ সালের আগস্টে তানহা জন্ম নেয়। পরের বছর সেপ্টেম্বরে অনিকা। ২০০৩ সাল নাগাদ দুইজনের মধ্যে ঝগড়ার ফলে জুলি চলে যান অন্য বাসায়। শুকুর হত্যার পর বাংলাদেশে পালিয়ে এলেও, পরবর্তীতে যখন যুক্তরাজ্যের কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে, তখন তিনি ভারতে পালিয়ে যান। এরপর ২০১২ সালের ২৩শে মে তাকে আসামে আটক করা হয়। এরপর এই বছরের এপ্রিলে তাকে যুক্তরাজ্যে ফেরত পাঠানো হয়।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn