বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে ভোর থেকেই বিভিন্ন বয়সের হাজার হাজার নারী-পুরুষ জড়ো হতে শুরু করেন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার সুখিয়া ইউনিয়নের চরপলাশ গ্রামে। কাঠুরিয়া কবিরাজ সবুজ মিয়া আসবেন বলে মাঠে মঞ্চও তৈরি করা হয় আগে থেকে। শনিবার সকাল হতে না হতেই হাজার হাজার নারী-পুরুষের উপস্থিতিতে কানায় কানায় ভরে ওঠে বিস্তীর্ণ মাঠ। স্থানীয় বাসিন্দা হৃদয় মিয়াসহ কয়েকজন জানান, কবিরাজ সবুজ মিয়ার ঝাড়ফুঁকের পানি খেলে এবং তেল মালিশ করলে সব রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে, মনের সব আশা পূর্ণ হবে—এমন বিশ্বাসে দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষের ঢল নামে এই মাঠে। বেলা ১১টার দিকে কবিরাজ সবুজ মিয়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। মাইকে তার আগমনের সংবাদ জানিয়ে সবাইকে ধৈর্য ধরে শান্ত থাকতে বলা হয়। তিনি মঞ্চে উঠে তাঁর প্রতি অগাধ বিশ্বাস রাখতে ১৫ মিনিটের মতো উপদেশ বাণী শোনান। তিনি বলেন, ‘এখানে আজকে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছেন। যেহেতু এক এক করে বোতলে ঝাড়-ফুঁক দেওয়া সম্ভব নয়, তাই আমি মাইকে ফুঁক দেব। আর আপনারা পানি ও তেলের বোতল উঁচু করে ধরবেন। মাইকে আমার ফুঁকের আওয়াজ যে পর্যন্ত যাবে, সে পর্যন্ত তেল-পানির বোতল কাজ করবে। কেউ ধৈর্য হারাবেন না। এমন ঘোষণা শোনার পর চারপাশে অবস্থান করা হাজার হাজার নারী-পুরুষ তেল-পানির বোতল উঁচু করে ধরেন। কাঠুরিয়া কবিরাজ মাইকে ফুঁ দেন। এরপর উপস্থিত লোকজন বাড়ি ফিরে যান। এ সময় কবিরাজের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও স্থানীয় সুখিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হামিদ।

জানা যায়, সবুজ মিয়া নামের ওই কবিরাজের বাড়ি ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার পাইলাবর গ্রামে। তিনি বনে কাঠ কেটে জীবিকা নির্বাহ করেন। সপ্তাহে চার দিন কাঠ কাটেন এবং তিন দিন কবিরাজি করেন। স্বপ্নে ফুঁ দেওয়ার এই তরিকা পেয়েছেন বলে দাবি তার। তবে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এ বিষয়ে পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি শান্ত রাখতে তিনি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। পাকুন্দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মফিজুর রহমান বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রেখে দ্রুততম সময়ে এ আয়োজন শেষ করা হয়েছে। পুলিশবাহিনীর সঠিক তৎপরতায় কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হয়নি। কিশোরগঞ্জের জামিয়া ফারুকিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. খলিলুর রহমান বলেন, কেউ একজন দূর থেকে মাইকে পানিতে ও তেলে ফুঁক দেবেন আর সেটা কাজ করবে, এটা ভ্রান্ত ধারণা। এটি কখনো বিশ্বাসযোগ্য নয়। আমাদের নবীজি কখনো দূর থেকে এভাবে পানি বা তেলে ফুঁক দেননি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn