মুকিত রহমানী- অসৎ উপায়ে সম্পদ অর্জন ও এ সম্পর্কে মিথ্যা বিবরণী জমা দেওয়ার অপরাধে সুনামগঞ্জ-৫ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি মুহিবুর রহমান মানিকের বড় ভাই মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা করেছিল ২০০৯ সালের এপ্রিলে। সিলেটের বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে এ মামলার বিচার কাজও শেষের দিকে। ইতোমধ্যে বাদীসহ ৯ সরকারি কর্মকর্তা সাক্ষ্য দিয়েছেন। সময়মতো সাক্ষ্য না দেওয়ায় চার সাক্ষীর বিরুদ্ধে সম্প্রতি গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও ইস্যু করেছেন আদালত। তবে মামলার আসামি মুজিবুর ২০১০ সালের ২২ মার্চ থেকেই ‘পলাতক’ রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকার পরও এতদিনেও তা তামিল করতে পারেনি পুলিশ। অথচ তিনি তার নিজ শহর ছাতকের মণ্ডলীভোগে নিজ বাসায় বসবাস ও ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। এমপির ভাই হওয়ার সুবাদে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।  আদালতের সূত্র মতে, অসৎ উপায়ে অর্জিত এক কোটি ৭৪ হাজার টাকার তথ্য গোপন করার এ মামলায় ইতোমধ্যে ১৮ সাক্ষীর মধ্যে মধ্যে ৯ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। ১ অক্টোবর মামলার ধার্য দিনে কোনো সাক্ষী উপস্থিত না থাকায় চারজনের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। আগামী ২৫ নভেম্বর মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য রয়েছে।

জানা গেছে, ২০০৮ সালে মুজিবের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জন সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত শুরু করে দুদক সমন্বিত সিলেট জেলা কার্যালয়। ওই বছরের ডিসেম্বরে নিজের সম্পদের হিসাব দাখিল করেন মুজিব। এরপর সম্পদ বিবরণী তদন্তে নামেন দুদক সিলেটের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক ঢালী আব্দুস সামাদ। তদন্তে তিনি মুজিবুর রহমানের ৪৪ লাখ ৫২ হাজার ২৩৪ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পত্তি গোপন করে মিথ্যা বিবরণী জমা ও জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত এক কোটি ৭৪ হাজার টাকা মূল্যের সম্পদ থাকার প্রমাণ পান। এ অভিযোগে ২০০৯ সালের এপ্রিলে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে মামলা করা হয়। তদন্ত শেষে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা দুদক সিলেটের তৎকালীন সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন।  স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৯ বছর ধরে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ঝুললেও মুজিব ছাতক শহরে প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ছাতক থানার ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবুর রহমান  জানান, তিনি দুই মাস হলো দায়িত্ব নিয়েছেন। ফাইল না দেখে বলতে পারবেন না ওয়ারেন্ট তামিল হয়েছে কি-না। জানা গেছে, এক সময় যুবদল করা মুজিব আশির দশকে ব্যবসা শুরু করেন। ওই সময় তিনি নকল প্রসাধন সামগ্রী তৈরি করে আলোচনায় আসেন। পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন।
সূত্র মতে, সিলেট বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে ২০১৫ সালে এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। তবে সময় মতো সাক্ষী হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। সময় মতো সাক্ষ্য না দেওয়ায় আদালত ছাতকের মুক্তিরগাঁওয়ের বেলাল আহমদ, ছাতক বাগবাড়ির লিপটন আচার্য, বাংলাদেশ ব্যাংক সিলেটের তৎকালীন সহকারী পরিচালক সৈয়দ শোয়েবুর রহমান ও ফার্স্ট সিকিউরিটিজের পরিচালক ঝুনু চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। তবে আদালতের পিপি লুৎফুল কিবরিয়া শামীম জানান, মামলার বিচারকাজ এগিয়ে চলেছে। সূত্র দৈনিক সমকাল
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn