ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ থেকে বাদ পড়েছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। গতকাল ১৬ জনের দল দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এদিকে গুঞ্জন, প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো রিয়াদকে টেস্ট থেকে অবসর নিতে বলেছেন। আর রিয়াদের বাদ পড়ার কারণ হিসেবে আলোচনা হচ্ছে সাম্প্রতিক বাজে পারফরম্যান্স। এখন পর্যন্ত দেশের হয়ে ৪৯ টেস্ট খেলা এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের শেষ ৮ ইনিংসে ফিফটি নেই একটিও। তবে মাহমুদুল্লাহকে দলে না রাখার কারণ হিসেবে পারফরম্যান্স বা কোচের অনিচ্ছার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। গতকাল সংবাদমাধ্যমকে মিনহাজুল আবেদীন বলেন, ‘অন্য কোনো কারণ নয়। ও একজন সিনিয়র প্লেয়ার। আমরা চিন্তা করেই এই সিরিজে বিশ্রাম দিয়েছি তাকে। নিজেদের মাটিতে খেলা তাই নতুন কিছু প্লেয়ারকে আমরা পরখ করতে চাইছি। কিছু  ক্রিকেটারকে আমরা পাকিস্তান সফরে নিয়েছিলাম। যার জন্য একটা বা দুইটা টেস্ট ম্যাচ বা তার বেশি ম্যাচ খেলেছে এমন প্লেয়ার আছে দলে। এই অভিজ্ঞতাকে আমরা কাজে লাগানোর জন্যই এটা চিন্তা করেছি।’ এছাড়াও দলে ফিরেছেন মুশফিকুর রহীম, তাসকিন আহমেদ, মেহেদী হাসান মিরাজ ও মোস্তাফিজুর রহমান। আর নতুন মুখ বলতে হাসান মাহমুদ ও ইয়াসির আলী রাব্বি। রিয়াদ ছাড়াও বাদ পড়েছেন রুবেল হোসেন, সৌম্য সরকার ও আল আমিন হোসেন। নির্বাচকদের ঘোষিত এই ১৬ সদস্যের দল চূড়ান্ত নয় বলেই জানিয়েছেন মিনহাজুল আবেদীন। তিনি বলেন, ‘এটাতো স্কোয়াড আপনাদের এখনো বলিনি। ১৬ জনের দলটি ১৮ তারিখ থেকে প্রিপারেশন ক্যাম্প শুরু হচ্ছে তার জন্য। এখান থেকে ম্যানেজমেন্ট সিদ্ধান্ত নিবে কোন ১১ জনকে খেলাবে, ১৩ জনের স্কোয়াড তখন হবে।’ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ টেস্টে বিশ্রামে থাকলেও খেলবেন ঘরোয়া ক্রিকেটে। চলতি বিসিএলের চতুর্থ রাউন্ডে তাকে মাঠে দেখা যাবে বলে জানিয়েছেন নান্নু্‌। শুধু তাই নয় তার অবসর নিয়ে কোচ কিছু বলেননি বলেই জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচক। তিনি বলেন, ‘এটা (রিয়াদ অবসরে) বলে নাই। রিটায়ারমেন্টের কথা বলে নাই আমাদের সঙ্গে। আমরা ছিলাম,  কি কথা হয়েছে সেটা আমরা জানি। এখানে সেরকম কিছু হয়নি।’

রুবেল আউট, মোস্তাফিজ-তাসকিন ইন
পাকিস্তান সফরে  রুবেলকে নেয়ার কারণ জানানো হয়েছিল অভিজ্ঞতা। তবে এবার তাকে বাদ দেয়ার কারণটাও অদ্ভুত। প্রধান নির্বাচক জানিয়েছেন রুবেলকে লাল বল নয়, সাদা বলেই বিবেচনা করছে টিম ম্যানেজমেন্ট। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানে ওটা পরিবর্তন নয়, ওকে (রুবেল) ব্যাক আপ বোলার হিসেবে নিয়েছিলাম। তারপর পাকিস্তানে গিয়ে যেহেতু আল আমিনের ইনজুরির জন্য ওকে ম্যাচে নিয়েছে। আমাদের ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে, টিম ম্যানেজমেন্ট ওকে চাচ্ছে সাদা বলে মনোযোগী হোক।’ অন্যদিকে মোস্তাফিজকে বাদ দেয়ার কারণ হিসেবে প্রধান কোচ বলেছিলেন তাকে সাদা বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। কিন্তু এবার তাকে দলে নেয়ার কারণ ঠিক বিপরীত। বিসিএলের এক রাউন্ডে ভালো করায়  তাকে ফেরানো হয়েছে। নান্নু বলেন, ‘আমাদের নির্বাচক প্যানেল থেকে এমন কিছু বলা হয়নি। কোচ এটা চিন্তা করেছিল। কিন্তু ও বিসিএলে যেভাবে ফিরে এসেছে আমরা ওকে ফেরানোর কথা ভেবেছি। এখন চিন্তা করছি অবশ্যই তাকে রেড বলে বিবেচনা করা যায়।’ এছাড়াও তাসকিনকে দলে নেয়ার কারণ তার দ্রুতগতির বোলিং বলে জানান প্রধান নির্বাচক।
কোচ-নির্বাচকদের দূরত্ব নেই
মাহমুদুল্লাহ, রুবেল ও মোস্তাফিজকে নিয়ে নির্বাচক ও প্রধান কোচের বক্তব্য এক নয়। সে কারণে প্রশ্ন উঠেছে তাদের মধ্যে দূরত্ব নিয়ে। যদিও তা উড়িয়ে দিয়েছেন নান্নু। তিনি বলেন, ‘না কমিউনিকেশন গ্যাপ না। এখানে পুরোপুরি বোঝাপড়ার মধ্যেই নেয়া হচ্ছে। ওরা যা চাইছে এবং আমরা যেটা চাইছি আর অধিনায়কের সঙ্গেও আমরা আলোচনা করে নিয়েছি। টিম ম্যানেজমেন্টে শুধু কোচ না, অধিনায়কের সঙ্গে আলোচনা করেই দল দেয়া হয়। কারণ গত ৬ মাস আমাদের পারফরম্যান্স আপ টু দ্যা মার্ক নয়। সবকিছু মাথায় রেখে এই সিরিজ দিয়ে নতুন করে শুরু করতে চাইছি। আমরা চাইছি যে ভালো ক্রিকেট খেলি এখানে।
ফিরলেন মুশফিক, নতুন মুখ হাসান মাহমুদ
পারিবারিক কারণে পাকিস্তান সফর থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন মুশফিকুর রহীম। যদিও গুঞ্জন ছিল তাকে এই ম্যাচে দলে নেয়া হবে না। তবে প্রধান নির্বাচক জানিয়েছেন দেশের সেরা ব্যাটসম্যানকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দলে না নেয়ার কারণ নেই। অন্যদিকে নতুন মুখ হাসান মাহমুদকে নিয়ে বলেন, ‘ওকে যখন আমরা একবছর আগে এইচপি স্কোয়াডে নিয়েছিলাম তখনই কিন্তু প্ল্যান ছিল আমরা জোরে বল করতে পারে এমন কাউকে নিবো। সেক্ষেত্রে আমাদের জোরে বল করা বোলারের অভাব ছিল যেটা ১৪০ এর কাছাকাছি ধারাবাহিক বল করতে পারে। সে হিসাবে ওর মধ্যে আমরা এই ট্যালেন্টটা দেখেছি। দুর্ভাগ্যবশত মাঝখানে সে কিছুটা লাইনচ্যুত ছিল। আবার কামব্যাক করেছে যার কারণে সিস্টেমের মধ্যে আমরা ওকে নিয়েছি।’ এছাড়াও এখন পর্যন্ত কোনো টেস্ট না খেললেও ফের দলে ডাক পেয়েছেন ইয়াসির আলী রাব্বি। অন্যদিকে বিয়ের কারণে সৌম্য, ইনজুরিতে আল আমিন দলে নেই বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচক।
বাংলাদেশ টেস্ট স্কোয়াড
মুমিনুল হক (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, সাইফ হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহীম, মোহাম্মদ মিঠুন, লিটন কুমার দাস, তাইজুল ইসলাম, আবু জায়েদ রাহী, নাঈম হাসান, ইবাদত হোসেন, তাসকিন আহমেদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, ইয়াসির আলী চৌধুরী।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn