বার্তা ডেক্সঃঃ করোনা মহামারি এবং বাংলাদেশের কাস্টমস বিভাগের কড়াকড়ির কারণে গত মার্চ মাস থেকে ব্রিটেন থেকে বাংলাদেশে কার্গো সার্ভিসের মাধ্যমে মালামাল প্রেরন বন্ধ রয়েছে। কার্গো সার্ভিস বন্ধ থাকায় যুক্তরাজ্যে এবং বাংলাদেশে প্রায় ৫ শতাধিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এই সেক্টরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১০ হাজারো মানুষের চাকুরি রক্ষায় বাংলাদেশের সরকারকে করোনাকালীন সময়ে কাস্টমম বিভাগে নিয়ম শিথিল করার আহবান জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের কার্গো ব্যবসায়ীরা।

২৫ আগস্ট মঙ্গলবার দুপুরে পূর্ব লন্ডনের বৃকলেইনের একটি রেস্টুরেন্টে অল-ব্রিটিশ বাংলাদেশী কার্গো এসোসিয়েশনের নেতাদের উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মহামারি এবং বাংলাদেশের কাস্টমস বিভাগের অতিরিক্ত কড়াকড়ির কারণে যুক্তরাজ্য থেকে মালামাল পাঠানো বন্ধ রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে এবিবিসিএ পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের চেয়ারম্যান ও জেএমজি এয়ার কার্গোর এমডি মোঃ মনির আহমেদ। সংগঠনের জেনারেল সেক্রেটারী মিটু পাল, প্রেসিডেন্ট মোঃ মিজানুল হক (আদিল) সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা বলেন, যুক্তরাজ্য থেকে ভারতে মালামাল পাঠাতে সহজেই শুল্ক ও কর পরিশোধ করে মালামাল পাঠানো গেলেও যুক্তরাজ্য-প্রবাসী বাংলাদেশীরা এ সুযোগ পাচ্ছেন না। কার্গো ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে প্রবাসের ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সমন্বয়ে একটি টার্সফোর্স গঠন করার আহবান জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা। এদিকে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে নেতৃবৃন্দ জানান, সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটে যে বেশ কয়েক টন কার্গো পণ্য কাস্টমস্ কর্তৃপক্ষ জব্দ করেছে, এর সাথে যুক্তরাজ্যের কার্গো বসসায়ীরা জড়িত নন বলে দাবি করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। যুক্তরাজ্য থেকে বর্তমান কিছু কিছু বানিজ্যিক কার্গো সার্ভিস চালু থাকলেও সাধারণ যাত্রী ও প্রবাসীদের জন্য কার্গো আবার কবে শুরু হবে, নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কার্গো ব্যবসায়ীরা। লিখিত বক্তব্যে নেতৃবৃন্দ বলেন, ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের অন্যতম একটি বাণিজ্যিক ক্ষেত্র হচ্ছে কার্গো ব্যবসা। ব্রিটেনে প্রত্যক্ষভাবে এ ব্যবসায় জড়িত আছেন প্রায় হাজারের উপরে ব্যবসায়ী। বাংলাদেশ এবং ইউকের মধ্যে এ ব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে প্রায় ১০ হাজারের বেশী মানুষের। ব্রিটেনে বাংলাদেশী মানুষের জন্য কার্গো পাঠানো নিত্য প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। দেশে প্রিয়জনের কাছে মালামাল পাঠানো এমনকি দেশে থাকা আপনজনের প্রয়োজনীয় আবদার মেটাতে কার্গো একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। পাশাপাশি প্রবাসীদের সাথে দেশের সেতুবন্ধন সৃষ্টি করে ।

প্রতিমাসে প্রায় শত শত টন পণ্য বাংলাদেশে যায় ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের মাধ্যমে। এর পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। আর এতে করে প্রতি বছর বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব খাতে গিয়ে জমা পড়ে কোটি কোটি টাকা। সাথে সাথে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লাভবান হচেছ । কার্গো ব্যবসায়ীরা শুধু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নয় কমিউনিটির মানুষকে সেবা প্রদানের জন্য তা পরিচালনা করে থাকেন। দুঃখজনক হলেও সত্য বিগত প্রায় পাচ মাস ধরে কার্গো ব্যবসায়ীরা দেশে মালামাল পাঠাতে পারছেন না। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় মার্চ মাসে ইউকে লকডাউন ঘোষণা করার পরে ব্যবসা বন্ধ হলেও লক ডাউন উঠে যাওয়ার পরেও কভিড-১৯ এর কারনে আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশীরা অনেকেই দেশে যাচ্ছেন না বিধায় মালামালও প্রেরণ করতে পারছেন না। এমতাবস্থায় ব্রিটেনে প্রবাসী বাংলাদেশীরা কঠিন সময় পার করছেন।বাস্তবতা হচ্ছে প্রবাসী কমিউনিটি তাদের প্রিয়জনের কাছে মালামাল পাঠাতে না পেরে হতশাগ্রস্ত । কভিড-১৯ এর কারণে এমনিতেই দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই নাজুক আর তাই এমন কঠিন সময়ে আমাদের প্রতিটি মুহূর্ত কাঠছে অনিশ্চিয়তায়। প্রতিদিন আমাদের অফিসে শত শত প্রবাসীদের ফোন কল রিসিভ করতে হচ্ছে। প্রবাসীদের ইনকুয়ারি একটাই কবে আমাদের পণ্য যাবে? কখন পাঠানো হবে? কবে পাঠানো যাবে? আমাদের কাছে এ সব প্রশ্নের কোন জবাব নেই। সংবাদ সম্মেলন থেকে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি বেশ কয়েকটি দাবী তুলে ধরা হয়। তা হচ্ছে

১. কোভিড-১৯ মাথায় রেখে প্রবাসীদের স্বার্থ বিবেচনায় সহজ শর্তে মালামাল পাঠানো এবং খালাসের ব্যবস্থা গ্রহণ করা ।
২. পার্শ্ববর্তী দেশের বসবাসরত প্রবাসী নাগরিকরা সহজেই শুল্ক করাদি আদায়পূর্বক মালামাল তাদের নিজের দেশে পাঠাতে পারলেও নন রেসিডেন্ট বাংলাদেশীরা এ সুযোগ পাচ্ছেন না । আমাদের আবেদন সহজ শর্তে এবং সুলভে শুল্ক করাদি আদায়পূর্বক বাংলাদেশে মালামাল পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহন করা ।
৩. প্রবাসী এবং বাংলাদেশের স্বার্থ সমুন্নত রেখে অতি শিগ্রীই কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করা। এক্ষেত্রে দেশ ও প্রবাসের ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দদের নিয়ে এবং সরকারী সংশ্লিষ্ট বিভাগের সমন্বয়ে একটি টার্সফোর্স গঠন করা।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn