আজ রানীগঞ্জ ‘গণহত্যা’ দিবস
জগন্নাথপুর :: আজ ১ সেপ্টেম্বর জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনীর স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় নৌ বন্দর হিসেবে খ্যাত কুশিয়ারা নদীর তীরে অবস্থিত জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ বাজারে গণহত্যা চালায়। পেট্রোল দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় পুরো রানীগঞ্জ বাজার। ইতিহাস মতে ৩১শে আগষ্ট শ্রীরামসি গণহত্যার পরদিন ১ সেপ্টেম্বর রানীগঞ্জ বাজারে এ গণহত্যা সংঘটিত হয়। ইতিহাসের বর্বর এই নারকীয় তান্ডবে দেড় শতাধিক লোক মারা গেলেও হত্যাযজ্ঞের পর ৩৪ জনের নাম পরিচয় পাওয়া যায়। অন্যদের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। রানীগঞ্জ বাজারের এই ধ্বংস যজ্ঞের খবর তৎকালীন সময় বিবিসিতে প্রচারিত হয়। বর্বরোচিত এ হত্যাকান্ড এখনো কাঁদায় রানীগঞ্জবাসীকে। ইতিহাস মতে, ৭১ এর পহেলা সেপ্টেম্বর রানীগঞ্জের সকল ব্যবসায়ী বিভিন্ন লাকা থেকে আসা ক্রেতা, বড় বড় নৌকার মাঝিসহ ক্রেতা-বিক্রেতাদের স্থানীয় রাজাকার এহিয়া ও রাজ্জাককে দিয়ে খবর পাঠানো হয় বাজারের রাজ্জাক মিয়ার দোকানে আসতে। এসময় কেউ কেউ ভয়ে পালালেও নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রক্ষা এবং ঝামেলা এড়ানোর জন্য শতাধিক মানুষ তাদের কথামতো উপস্থিত হন। সকলে জড়ো হবার পর কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই রশি দিয়ে বেঁধে ফেলা হয় শতাধিক মানুষকে। পরে এদের নিয়ে যাওয়া হয় পাশের কুশিয়ারা নদীর তীরে। সেখানে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে পেছন দিক থেকে গুলি করে রক্তে রঞ্জিত করে দেয় কুশিয়ারা নদী।
প্রথম গুলিতে মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়ায় একাধিকবার লাইনে দাঁড় করিয়ে হত্যা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রাণীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ীরা মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার সরবরাহ করত। বিষটি স্থানীয় কিছু রাজাকাররা পাক হানাদারদের জানিয়ে দেয় এবং পরে কিছু রাজাকারদের সহায়তায় পাক হানাদাররা বাজারের নিরীহ ব্যবসায়ী, নৌকার মাঝি, ব্যাপারী,সহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষদের গুলি করে হত্যা করে। নিহতদের লাশ নদীতে ফেলে দেওয়ায় অনেকের লাশও খুঁজে পাওয়া যায়নি। হত্যাকান্ডে শতাধিক মানুষ শহীদ হলেও ৩৪ জনের নাম পরিচয় পাওয়া গেছে। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে অনেক চেষ্টা করেও অন্যদের পরিচয় বের করা যায়নি। ১৯৮৭ সালে তৎকালীন জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু খালেদ চৌধুরীর প্রচেষ্ঠায় ৩৪জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম ও ছয় জন আহতের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়। ২০১০ সালে জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মুক্তাদীর আহমদ মুক্তার প্রস্তাবে শিরামিসি ও রানীগঞ্জ গণহত্যার স্মৃতিসৌধে প্রশাসনিকভাবে শ্রদ্ধা নিবেদনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সেই থেকে রানীগঞ্জ গণহত্যার দিবসে প্রশাসনের শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক রাজনৈতিক সংগঠনের উদ্যোগে শ্রদ্ধা নিবেদন সহ কর্মসূচী পালিত হয়। এবারও স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন সংগঠন দিবসটি পালন করবে। তবে বৈশ্বিক মহামারী করোনা পরিস্থিতিতে কর্মসূচি সীমিত পরিসরে পালিত হবে।