ভারতের রাজনীতিতে ফেসবুক বিতর্ক এখন তুঙ্গে। ফেসবুকের বিরুদ্ধে পক্ষপাত আর ঘৃণ্য বক্তব্য ছড়ানোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগে কঠোর সমালোচনা চলছে। ঠিক এ সময় ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি দলের নেতা টি রাজা সিংকে নিষিদ্ধ করল ফেসবুক। তিনি তেলেঙ্গানা রাজ্যের বিধায়ক। টি রাজা সিংহের বিরুদ্ধে ফেসবুকে ঘৃণ্য বক্তব্য ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। তবে তিনি টুইটারে এক ভিডিও পোস্ট দিয়ে দাবি করেছেন, ফেসবুকে তাঁর কোনো পেজ নেই। এনডিটিভি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিজেপি নেতা টি রাজা সিং অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছেন। তাকে নিষিদ্ধ করেছে ফেসবুক। তার বক্তব্য ফেসবুকের নীতিমালা ভঙ্গ করলেও ক্ষমতাসীন বিজেপি দলের নেতা হওয়ায় ফেসবুক তাকে ছাড় দিয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। ফেসবুকের একজন মুখপাত্র এক ই-মেইল বিবৃতিতে বলেন, আমরা রাজা সিংকে আমাদের নীতিমালা ভঙ্গের কারণে ফেসবুকে নিষিদ্ধ করেছি। আমাদের নীতিমালায় সহিংস ও ঘৃণ্য বক্তব্য প্রচার নিষিদ্ধ। সম্ভাব্য লঙ্ঘনকারীদের মূল্যায়ন করার প্রক্রিয়াটি বিস্তৃত এবং এটিই আমাদের ফেসবুকের অ্যাকাউন্টটি অপসারণের সিদ্ধান্তের দিকে পরিচালিত করেছে। ভারতে ফেসবুকের ওপর এখন রাজনৈতিক চাপ বাড়ছে। এ চাপের মুখে পড়েই তেলেঙ্গানার ওই বিধায়ককে নিষিদ্ধ করল ফেসবুক।

গতকাল বুধবার ফেসবুক কর্মকর্তা ভারতের সংসদীয় একটি কমিটির সামনে শুনানিতে উপস্থিত হন। ওই কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন কংগ্রেসের সাংসদ শশী থারুর। শুনানিতে রাজনৈতিক পক্ষপাত নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় ফেসবুকের কর্মকর্তাদের। গত মাসে রাজা সিং টুইটারে দাবি করেন, তার কোনো অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ নেই। তিনি এক ভিডিও বার্তায় বলেন, আমি জেনেছি অনেক ফেসবুক পেজে আমার নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, আমার কোনো অফিশিয়াল পেজ নেই। তাই কোনো পোস্টের জন্য আমি দায়ী নাই। তিনি সাম্প্রদায়িক সহিংসতা উসকে দেওয়া বিভিন্ন পোস্ট অস্বীকার করে বলেন, ২০১৮ সালে তার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ হ্যাক হয় এবং বন্ধ হয়ে যায়। ১৬ আগস্ট রাজা সিং ভিডিও টুইটে বলেন, তাকে এমনভাবে তুলে ধরা হচ্ছে যেন তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যক্তি। তিনি যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু বলেন, তখন কিছু ঘটে যায়। তার কেবল একটি অফিশিয়াল ইউটিউব ও টুইটার অ্যাকাউন্ট আছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে নাম প্রকাশ না করা অভ্যন্তরীণ সূত্রের বরাতে বলা হয়, ফেসবুকের ভারতীয় কর্মকর্তা আঁখি দাস অভ্যন্তরীণ যোগাযোগে রাজা সিংকে স্থায়ী নিষিদ্ধ করতে বাধা দেন।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভারতে ফেসবুকের একজন শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেপি নেতাদের বিদ্বেষমূলক ঘৃণ্য মন্তব্য মুছতে অস্বীকার করেন। এতে ফেসবুকের ব্যবসায়িক স্বার্থ নষ্ট হবে বলে তিনি এসব পোস্টের পক্ষে অবস্থান নেন। ফেসবুকের ওই কর্মীর নাম আঁখি দাস। তিনি ফেসবুকের ভারতের পাবলিক পলিসি এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ করেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, ভারতের মতো বড় বাজারকে কবজায় রাখতে গিয়ে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপির ক্ষেত্রে পক্ষপাতের অভিযোগ উঠছে ফেসবুকের বিরুদ্ধে। আঁখি দাসের বিরুদ্ধে এর মধ্যে মামলা হয়েছে। ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো ও উসকানির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে চণ্ডীগড়ে মামলা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে নিজেদের পক্ষে সাফাই গাইতে মুখ খুলেছেন ফেসবুক ইন্ডিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর অজিত মোহন। পক্ষপাতের অভিযোগ অস্বীকার করে অজিত বলেন, আমাদের প্ল্যাটফর্মে ঘৃণ্য বক্তব্য ঠেকাতে তা হালনাগাদ করেছি। আমাদের আরও অনেক কিছু করতে হবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn