অপরাধীর একমাত্র পরিচয় সে অপরাধী।
তারেক জামান (ফেসবুক থেকে)বাধীনতার পর পর রাজশাহী ইউনিভার্সিটির নিহারবানু হত্যাকান্ড সারা দেশকে নাড়া দিয়েছিলো। সেই হত্যাকাণ্ডের মূল নায়ক বাবু ছাড়া মনে হয় অন্যরা ধরা পড়েছিল, শাস্তিও হয়েছিল। এক অপরাধীকে আত্মরক্ষার্থে নিহারবানু কামড় দিয়েছিলো, অপরাধী স্থানীয় ডাক্তারের সেবা নিয়েছিল। সেই সূত্র ধরে পুলিশ অপরাধীদের ধরেছিলো। সাপ্তাহিক বিচিত্রায় কোর্টের প্রসিডিংস ও জেরা প্রকাশিত হতো। ছাত্র রাজনীতি তখনও ভালোদের অধিকারেই ছিল, এই হত্যাকান্ড নিয়ে কোন রাজনীতি হয়েছিল কিনা জানি না। ঠিক মনে নেই, ১৯৭৭ বা ‘৭৮ হবে ঢাকা ইউনিভার্সিটির জসিমুদ্দিন হলে দুই বোন এক সাথে রেপড হয়েছিল। বড়ো বোন তার প্রেমিকের সাথে এসেছিলো দেখা করতে, সাথে ছোট বোনকে নিয়ে। প্রেমিক সেদিন হলে ছিল না, ব্যাস! আমার এখনো খুব মনে আছে বিচিত্রার প্রচ্ছদ ছাপা হয়েছিল সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে এক মেয়ের লাল স্কেচ, হেডিং ছিল: আমি কিসের বিচার চাইবো? খুব অসহায় দুই বোন ও তাদের পরিবারের প্রতিবেদন পড়ে খুব খারাপ লেগেছিলো। বিচার কি হয়েছিল, মনে নাই।
১৯৯৩ বা ‘৯৪ এর শুরুতে, ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে আবারো এমন একটা অসভ্য ঘটনা ঘটে। শুরু হলো ঘটনার রাজনীতিকরণ। আমি Daily Star এ এই নিয়ে লিখেছিলাম। তারপর কি হয়েছিল কেউ জানে না। সাহিত্যের এক অধ্যাপক, বিশিষ্ট গীতিকার, গানও গাইতে পারতেন- তিনি এক হলের প্রভোস্ট থাকাকালীন রান্নাঘরে মশলা পিষতে আসা সাহায্যকারিণীকে রেপ করেছিলেন। এই নিয়ে ছাত্রদের মাঝে খুব হই চৈ হলেও সেই অধ্যাপকের কাহিনী কোন এক অদৃশ্য কারণে পত্রিকায় আসে নাই। তিনি তখন একনায়কের খুব কাছের, সেই একনায়কের কাহিনীতো সর্বজনবিদিত। এখানেও নোংরা রাজনীতি ছিল I
সম্প্রতি ঘটে গেলো সিলেটের মুরারী চাঁদ কলেজের হোস্টেলে আরেকটি জঘন্য ঘটনা, একদল ছাত্র নামধারী অসভ্য স্বামীর সাথে বেড়াতে আসা স্ত্রীকে রেপ করে। শুরু হয়েছে এই নিয়ে রাজনীতি, অভিযুক্ত অসভ্যগুলো কোন রাজনৈতিক দলের বা ছাত্র সংগঠনের অনুসারী। নামেতো মনে হয় এরা সবাই ইসলাম ধর্মের অনুসারী, কিন্তু এই নিয়ে কেউ কিছু বলছে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এদের ছবি ও বৃত্তান্ত দেখছি। যদি সত্যি এরা প্রাথমিক তদন্তে অভিযুক্ত প্রমাণিত হয়, এদের ধরে কোর্টের মুখোমুখি করতে অসুবিধা কোথায়? যারা এইসব দেখে দলবাজি করেন বা নিজের দল করে বলে চুপ মেরে আছেন, তারা শুধু চিন্তা করেন সেই ভদ্র মহিলা আপনার স্ত্রী, মা, কন্যা, বা বোন হতে পারতো। আমরা আসলেই বিশ্বাস করতে চাই: অপরাধীর একমাত্র পরিচয় সে অপরাধী।