বার্তা ডেস্ক :: যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অভিবাসীদের ধরপাকড় ও বিতাড়িত করার ঘটনা বেড়েই চলেছে। কঠোর হয়েছে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার নিয়মাবলিও। মূলত কাগজপত্রহীন মানুষ নির্বাচনী কঠোরতার টার্গেট হলেও বাদ পড়ছেন না গ্রিনকার্ডধারীরাও। সাত বছর আগের এক মামলায় সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয়েছে এক বাংলাদেশিকে। তিনি গ্রিনকার্ডধারী নাগরিক। নির্বাচনের এই সময়ে আশ্রয়প্রার্থী কোনো বিদেশির মামলা খারিজ হলে তাকে নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়প্রার্থী বাংলাদেশিরাও এ আইনের শিকার হচ্ছেন। এ নিয়ে সব দেশের অভিবাসীরাই উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার ২৪ সেপ্টেম্বর একটি সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, কোনো মামলা বোর্ড অব ইমিগ্রেশন অ্যাপ্লাইসে (বিআইএ) হস্তান্তর হলে তারা মামলাটি পুনর্মূল্যায়ন করে নতুন সিদ্ধান্ত জানাতে পারবেন। আগে বিআইএ শুধু পর্যালোচনা করে নির্দিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতেন।

এই নিয়মের পরিপ্রেক্ষিতে বেশিরভাগ আশ্রয় প্রার্থনা মামলা বিআইএ চাইলে খারিজ করে দিতে পারেন। এর অর্থ, যার মামলা খারিজ হলো তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করা হবে। উইলিয়াম বার পরের দিন আরেক সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। তাতে বলা হয়, আশ্রয়প্রার্থীদের মামলায় বিশেষজ্ঞ সাক্ষীর ক্ষেত্রে বিচারকদের নির্দিষ্ট করে বলতে হবে শতকরা কতভাগ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সাক্ষীর ওপর। বিষয়টি মামলার রায়ে লিখিত আকারে থাকতে হবে। যেমন সাক্ষীর ওপর ৮০ শতাংশ বা ৫০ শতাংশ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সাক্ষীদের ওপর এভাবে শতকরা মূল্যায়নের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে নজিরবিহীন। এটি খুবই হতাশাব্যঞ্জক বিষয়। অ্যাটর্নি জেনারেলের সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো আদালত মানতে বাধ্য। ফলে এটি আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য খারাপ খবর। নিউইয়র্কের অভিবাসনবিষয়ক আইনজীবী অশোক কর্মকার বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেলের এ দুই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিআইএ এখন বিচারকের ওপর বড় বিচারক। যে বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করা হয়েছে, হত্যা বা এ ধরনের অপরাধের অভিযুক্ত নয়। যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়প্রার্থীদের কারও বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলা থাকলে তার আবেদন গ্রহণ করা হয় না। তিনি বলেন, গত সাত বছর আগে কর্মস্থলে এক নারী মামলা করছিলেন ওই বাংলাদেশির বিরুদ্ধে। সাধারণত এই মামলায় জরিমানা হয়; কিন্তু তার ক্ষেত্রে হয়ে গেল ডিপোর্টেশন অর্থাৎ নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার শাস্তি। এমন ঘটনার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এই সময়ে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা থাকলে এবং তিনি নির্বাচনী কড়াকাড়ির কারণে গ্রেফতার হলে তার ডিপোর্টেশন হয়ে যেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস) এবং ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টম এনফোর্সমেন্ট (আইস) কারও বাড়ির দরজা ভেঙে প্রবেশ করে না। যদি তাদের অনুমতি না দেন, তাহলে তারা বাড়িতে প্রবেশ করতে পারবে না। কিন্তু গ্রেফতার হওয়া ওই বাংলাদেশি দরজা খুলে দেওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। দরজা না খুললে তাকে গ্রেফতার করতে পারতেন না। নির্বাচনকালীন আইনের কড়াকড়ির কারণে উদ্বেগে থাকা অভিবাসী আমির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা দুই প্রার্থীর সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছি। অভিবাসী হিসেবে আমরা নিরাপত্তা চাই। তাছাড়া আশ্রয়প্রার্থীদের ওপর যাতে দমন-পীড়ন চালানো না হয় এবং তাদের ধরপাকড়ের আতঙ্কে রাখা না হয়, সে বিষয়ে আমরা স্পষ্ট ঘোষণা শোনার অপেক্ষায় আছি’। আগামী ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এবারও নির্বাচনে অভিবাসন নীতি অভিবাসীদের মধ্যে প্রভাব ফেলবে। সম্প্রতি জরিপ থেকে দেখা গেছে, বাংলাদেশ, ভারতসহ এশীয় ভোটারদের মধ্যে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন জনপ্রিয়। তবে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থন আগের বারের চেয়ে বেড়েছে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে অভিবাসীদের বিষয়ে ট্রাম্প কঠোর অবস্থানে থাকলেও এবারের নির্বাচনী প্রচারে তিনি বেকারত্ব, অর্থনীতি ও পররাষ্ট্রনীতিতে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn