বার্তা ডেস্ক :: সিলেটের আলোচিত রায়হান আহমদ হত্যা মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এ তদন্তাধীন। গত ১৩ অক্টোবর পিবিআই’র কাছে মামলাটি আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)।  পিবিআই ওই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর ঘটনার সেই রাতে বন্দর ফাঁড়িতে দায়িত্বে থাকা তিন কনস্টেবল দেলোয়ার, শামীম ও সাইদুরকে ১৯ অক্টোবর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক জিহাদুর রহমানের খাস কামরায় নেয়া হয়। ১৬৪ ধারায় সেখানে দেয়া তাদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন বিচারক। এই তিন পুলিশ সদস্যের বর্ণনায় উঠে আসে সেই রাতের ভয়ঙ্কর অনেক তথ্য।

কনস্টেবল শামীম মিয়া জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, ‘১০ অক্টোবর রাত ২টার দিকে বিভাগীয় পদোন্নতি পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক পড়াশোনা শেষ করে ফাঁড়ির মুন্সির কক্ষে তিনি ঘুমিয়ে যান। রাত ৩টার পর কক্ষের ভেতরেই কান্নার আওয়াজ শুনে তার ঘুম ভেঙে যায়। দেখতে পান রায়হানের দুই হাত পেছনের দিকে হাতকড়া লাগানো। মেঝেতে বসে চিৎকার করছেন তিনি। কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস মোটা লাঠি দিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করছেন। একপর্যায়ে তিনি ডান দিকে কাত হয়ে মেঝেতে শুয়ে পড়লে কনস্টেবল টিটু তার পায়ের তলায় আঘাত করে। তখন কনস্টেবল হারুনুর রশিদ রুমে প্রবেশ করেন। তিনিও রায়হানকে মারধর শুরু করেন। এ সময় এএসআই আশেক এলাহী ও কুতুব উদ্দিন রুমে উপস্থিত ছিলেন। আর রুমের দরজায় দাঁড়ানো ছিলেন কনস্টেবল তৌহিদ ও সজিব। এর কিছুক্ষণ পর রুমে প্রবেশ করেন ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন। তিনি টিটুর হাতের লাঠি নিয়ে রায়হানকে তার নাম-ঠিকানা জিজ্ঞাসা করেই বেধড়ক পেটাতে শুরু করেন। তার মারমুখী আচরণ দেখে এএসআই কুতুব আকবরকে বলেন, স্যার আর মাইরেন না। তখন আকবর রুমের একটি বিছানায় লাঠি হাতে নিয়ে বসে যান।

সকাল সাড়ে ৭টায় সিয়েরা-৪ ডিউটিতে যাওয়ার জন্য ঘুম থেকে উঠে দেখি রায়হানকে যেখানে মারধর করা হয়েছে সেই স্থানটি ভেজা। সকাল ৯টায় আমরা ওসমানী মেডিকেলের ক্যাজুয়ালটি বিভাগের স্টোরে গিয়ে দেখি একটি লাশ রাখা আছে। পাশে দাঁড়িয়ে আছে কনস্টেবল তৌহিদ। তখন লাশটি দেখে আমি চিনতে পারি।’ এদিকে সাইদুর তার জবানবন্দিতে বলেন, ‘বন্দরবাজার ফাঁড়ির মুন্সি কনস্টেবল আমিনুলের রুমে কনস্টেবল হারুন রায়হানের পা উঁচু করে ধরে রাখেন আর এসআই আকবর ও কনস্টেবল টিটু তার পায়ের পাতা এবং পায়ে আঘাত করেন। এ সময় এএসআই আশেক এলাহী আকবরকে বলেন, রায়হান পুলিশের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে তার পায়ে মারেন। পায়ে মারলে সমস্যা নেই। তখন আকবর আমাকে ধমক দিয়ে সেন্ট্রি পোস্টে পাঠিয়ে দেন। এরপর বেশ কয়েকবার রায়হানের চিৎকার শুনতে পাই। ভোর ৪টায় কনস্টেবল দেলোয়ারকে আমি ডিউটি বুঝিয়ে দিয়ে চলে যাই। সাইদুর আদালতকে বলেন, পরদিন দুপুর সাড়ে ১২টায় বন্দরবাজার ফাঁড়ির মুন্সি কনস্টেবল আমিনুল ডিসি স্যারের (এসএমপির উপকমিশনার উত্তর আজবাহার আলী শেখ) কথা বলে ফাঁড়িতে ডাকেন।

আসার পর আকবর স্যার বলেন, ‘সিনিয়র স্যাররা এলে বলবি, ফাঁড়িতে কোনো লোক এনে নির্যাতন করা হয় নাই। সে (রায়হান) কাস্টঘর থেকে গণপিটুনি খেয়ে ধরা পড়েছে। তাকে সরাসরি ওসমানী হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।’ আমি যা বলছি তাই বলবি। আমার বুকে হাত দিয়ে আকবর স্যার হুমকি দিয়ে আরও বলেন, ‘সত্য কথা বললে বুকে গুলি করব, পিঠ দিয়ে বের হবে।’ তৃতীয় পুলিশ সদস্য দেলোয়ার বলেন, ‘সাইদুরের মতো একইভাবে এসআই আকবর কনস্টেবল দেলোয়ার হোসেনকেও হুমকি দিয়েছেন বলে তিনি আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে জানিয়েছেন। দেলোয়ার আদালতে বলেন, কনস্টেবল তৌহিদ ফাঁড়ির সেন্ট্রি পোস্টে তার সঙ্গে গল্প করছিল এ সময় আকবর স্যার তৌহিদকে ডেকে নেন। এরপর তৌহিদ এসে জানায়, আকবর স্যার তার মোবাইল নিয়ে রায়হানকে দিয়ে তার বাসায় কল দিয়ে ১০ হাজার টাকা নিয়ে ফাঁড়িতে আসতে বলেছেন। এরপর আকবর স্যার এএসআই আশেক এলাহীকে বলেন, আমি ঘুমিয়ে গেলাম।

কিছুক্ষণ পর রায়হানকে হাসপাতালে নিয়ে যেও। ফজরের আজানের পরপর রায়হানের চাচা এলে তাকে নিয়ে নামাজে যান এএসআই আশেক এলাহী। নামাজ থেকে এসে আশেক এলাহী রায়হানের চাচাকে বলেন, স্যার ঘুমিয়ে গেছেন আপনি সকাল ৯টার পর আসেন। সকাল ৬টা ২০ মিনিটের দিকে এএসআই আশেক এলাহী ও কনস্টেবল হারুন রায়হানকে ধরে বের করে নিয়ে আসেন এবং সিএনজি আটোরিকশায় তোলেন। তারা আমাকে জানান তাকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আধাঘণ্টা পর আকবর স্যার ঘুম থেকে উঠে তাড়াহুড়া করে ফাঁড়ি থেকে বেরিয়ে যান। সকাল ৮টায় আমি কনস্টেবল ইলিয়াসকে ডিউটি বুঝিয়ে দিয়ে চলে যাই।’-সৌজন্যে : যুগান্তর

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn