বার্তা ডেক্সঃঃনতুন ধরনের করোনা সংক্রমণের ভয়ে বৃটেনের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে ভারতসহ ৩০টি দেশ। আরো অনেক দেশ যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়ার চিন্তা করছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে উদ্বেগ দেখা দিলেও বিমান যোগাযোগের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে ফ্লাইট বন্ধের চিন্তা আছে। লন্ডনের সঙ্গে এখন সপ্তাহে দু’টি ফ্লাইট চলাচল করছে।  ওদিকে বৃটেনে করোনার নয়া সংস্করণ চিহ্নিত হওয়ার পর দেশটির সরকার নতুন করে কড়াকড়ি আরোপের পরই একের পর এক দেশ বিমান যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। এশিয়ার দেশগুলোও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

সর্বশেষ ভারতের তরফে বৃটেনের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়ার তথ্য জানানো হয়। ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বুধবার থেকে। তা বহাল থাকবে বছরের শেষ পর্যন্ত। তার আগে বৃটেন থেকে আসা সব যাত্রীকে বিমানবন্দরে পরীক্ষা করা হবে। ভারতের বেসামরিক মন্ত্রণালয়ের এক টুইটকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল বিষয়ক মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, যদি আমরা তথ্য পাই অন্য স্থানে নতুন ধরনের করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঘটছে, তাহলে আমরা সে মতো ব্যবস্থা নেবো।  তবে এ নিয়ে প্যানিক বা পীড়া সৃষ্টির কোনো প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী। যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ভারতে। তাদের সংখ্যা এক কোটির বেশি। মারা গেছেন কমপক্ষে এক লাখ ৪৫ হাজার মানুষ। ওদিকে আগামী মাস থেকে নাগরিকদের করোনার টিকা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত সরকার।
উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ: করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ বিশেষ করে বৃটেনে নতুন ধরনের ভাইরাস বিস্তারের প্রেক্ষিতে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ। দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশ বিমানের দু’টি ফ্লাইট ছাড়াও নানা মাধ্যমে যোগাযোগ রয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটসহ বৃটেন কানেক্টেড ফ্লাইটগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। তবে গণহারে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট বন্ধের ‘গুঞ্জন’ নাকচ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা সংক্রান্ত’ ৫ সদস্যের কমিটির প্রধান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন গতকাল সন্ধ্যায় মানবজমিনের সঙ্গে আলাপে বলেন, গণহারে ফ্লাইট বন্ধের বিষয়ে এখনো কোনো চিঠি চালাচালি, আলোচনা বা সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বৃটেনের অবস্থা নিয়ে আমাদের মধ্যে যথেষ্ট উদ্বেগ রয়েছে। আমরা এর নেতিবাচক প্রভাবগুলোর ওপর ঘনিষ্ঠভাবে নজর রাখছি। সপ্তাহে বংলাদেশ বিমানের যে দু’টি ফ্লাইট লন্ডনে যাতায়াত করে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ওই ফ্লাইটদ্বয় বন্ধের সুপারিশ করা হতে পারে। তাছাড়া বৃটেন থেকে আসা যাত্রী-পরিবহনের সম্পৃক্ত ফ্লাইটগুলোর বিষয়ে আমরা নিশ্চিতভাবে সচেতন থাকবো। প্রয়োজনে ওই ফ্লাইটও বন্ধ হতে পারে। তবে আবারো বলছি, এখনো এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা বা সিদ্ধান্ত হয়নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন অবশ্য গতকাল বলেছেন, দ্বিতীয় দফায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যেন মারাত্মক আকার ধারণ না করে, সে জন্য ঝুঁকিপূর্ণ আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন। গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে তিনি এ-ও উল্লেখ করেন- গত মার্চে ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত যাত্রীদের মাধ্যমেই দেশে করোনার সংক্রমণ ঘটেছিল। যা পরবর্তীতে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা সারা দেশে বিস্তৃতভাবে ছড়িয়ে ছিল। এ কারণে এবার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক রুটে পরিচালিত ফ্লাইটের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি সরকার সচেতনভাবে বিবেচনা করছে বলে আভাস দেন মন্ত্রী। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করোনা সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানান, কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় গত ১লা নভেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে সচিব পর্যায়ের একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। বিদেশ থেকে আসা কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে যাতে দেশে বিশেষ ধরনের কোভিড-১৯ ছড়াতে না পারে সেটি ওই কমিটি পর্যবেক্ষণ করবে। তারা জানান, রিপোর্ট বলছে- দুনিয়ার দেশে দেশে বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। এটি নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে দেশে দেশে উদ্বেগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। উল্লেখ্য, দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর বৃটেনে দ্রুতগতিতে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানার মুহূর্তে ঢাকা-লন্ডন ফ্লাইট সচল হয়। সেই সময় এ নিয়ে কড়া সমালোচনা হয়েছিল। কিন্তু তখন সরকারের নীতি নির্ধারকদের তরফে বলা হয়েছিল, বৃটেনসহ পৃথিবীর কয়েকটি দেশে করোনা পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকার বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় রয়েছে। পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্মরণ করা যায়, বৃটেনে নতুন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ করোনাভাইরাস বিস্তারের প্রেক্ষিতে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। ২৫টির বেশি দেশ তাৎক্ষণিক বৃটেনের সঙ্গে যোগাযোগ অর্থাৎ আকাশ, নৌ ও স্থল পথে যাত্রী পরিসেবা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে কার্যত বৃটেন একটি দ্বীপে পরিণত হয়েছে। ভারত কোরিয়া ছাড়া পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্য কোনো দেশগুলো এখনো শক্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ রিপোর্ট লেখার মুহূর্তে ভারত থেকে বৃটেনের সব ফ্লাইট বাতিলের খবর এসেছে। তবে চীন জাপানসহ অন্যরা তখনও পরিস্থিতি নিবিড় পর্যবেক্ষণে ছিল।
সৌদিগামী বাংলাদেশ বিমানের সব ফ্লাইট বাতিল, আকাশে থাকা অন্য উড়োজাহাজও সৌদিতে নামতে পারেনি: করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় কেবল বৃটেন নয়, আন্তর্জাতিক সব ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে সৌদি আরব। সৌদি সরকারের বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞার কারণে ২১শে ডিসেম্বর থেকে এক সপ্তাহের জন্য জেদ্দা, রিয়াদ ও দাম্মামগামী বাংলাদেশ বিমানের সকল ফ্লাইট বাতিল করে বিমান কর্তৃপক্ষ। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স-এর উপ-মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার স্বাক্ষরিক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, বাতিলকৃত ফ্লাইটসমূহের যাত্রীদের ফ্লাইট পুনরায় চালুর পর আসন খালি সাপেক্ষে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আসন বরাদ্দ করা হবে। এদিকে এভিয়েশন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক সব ফ্লাইট বন্ধের নোটিশ জারির পর সৌদি কর্তৃপক্ষ দেশটির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে আকাশে উড়া ফ্লাইটগুলোও আটকে দেয়। গত রোববার সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে জেদ্দার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ইত্তেহাদ এয়ারওয়েজের ফ্লাইটটি আবুধাবিতে যাত্রা বিরতির পর সৌদি যাওয়ার ক্লিয়ারেন্স পায়নি। ফলে বিপাকে পড়া যাত্রীদের নিয়ে প্রায় ১১ ঘণ্টা পর ইত্তেহাদের ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করতে বাধ্য হয় বলে জানা গেছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn