বার্তা ডেক্সঃঃপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিবাসী কর্মীদের নিবন্ধন এবং প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে এসব বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, বিদেশ গমনেচ্ছুরা নিবন্ধন করে নিয়মমাফিক যান, সেটাই আমরা চাই। কেননা, প্রবাসী কর্মীদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য আমাদের সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে আরো নজরদারি করতে হবে এবং বিদেশে কর্মী পাঠানোয় সম্পৃক্তদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রবাসীদের কর্মসংস্থান ঠিকমতো হচ্ছে কিনা, কর্মস্থলের নিরাপত্তা, বিশেষ করে নারী কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়ে সকলকেই লক্ষ রাখতে হবে। কারণ দায়িত্বটা আপনাদের ওপরই বর্তায়।

প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের মূল অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, অনেকেই এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ না নিয়ে কোনোভাবে একটি সার্টিফিকেট নিয়ে নেন এবং বিদেশে গিয়ে সমস্যায় পড়েন। কাজেই, এই কাজটি না করে আন্তরিকতার সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিয়ে গেলে কেউ আর বিদেশ গিয়ে হেনস্থার শিকার হবেন না। তিনি বলেন,আমরা যে সমস্ত ডিজিটাল সেন্টার করেছি, তার মাধ্যমে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধন করার যে সুযোগ রয়েছে তাকে কাজে লাগান। যেখানেই কাজের সুযোগ হয় সেখানে নিবন্ধিতদের মধ্য থেকেই প্রেরণ করা হয়।

কাজেই ধৈর্য্য ধরতে হবে। নিজেদের নিরাপত্তার কথা এবং পরিবারের কথাটা সব সময় চিন্তা করতে হবে। ভাগ্যোন্নয়নে বিদেশ যেতে গিয়ে দালালের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হওয়া থেকে শুরু করে অন্ধকার পথে পা বাড়ানোর বিষয়ে তিনি পুনরায় সকলকে সতর্ক করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারো প্ররোচনায় বিদেশে গিয়ে কেউ বিপদে পড়লে সেটা নিজেদের জন্য এবং তার পরিবারের জন্য খুবই ক্ষতিকর এবং কষ্টদায়ক হয়। গত মে মাসে যুদ্ধবিগ্রহ চলমান তেলসমৃদ্ধ দেশ লিবিয়াতে মরুভূমি পেরিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ কালে পাচারকারি চক্রের নির্যাতন ও হত্যার শিকার বাংলাদেশিদের হৃদয়বিদারক ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, কিছুদিন আগে লিবিয়াতে কতজনকে জীবন দিতে হলো। এই পরিস্থিতির শিকার যেন আমাদের দেশের মানুষকে আর হতে না হয়। তিনি সেখানে আটকে পড়াদের আর্থিক সহায়তা প্রদান থেকে শুরু করে উদ্ধারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও উল্লেখ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশে এখন কাজের যেমন অভাব নেই তেমনি আল্লাহ্‌র রহমতে খাবারেরও অভাব নেই। কাজেই এখন সেই সোনার হরিণ ধরার পেছনে কেউ আর দয়া করে অন্ধের মতো ছুটবেন না। প্রাবাসী কল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন- সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ইমরান আহমেদ। মন্ত্রণালয়ের সচিব মুনীরুছ সালেহীন স্বাগত বক্তৃতা করেন। প্রাবাসী কল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং রিক্রুটিং এজেন্টদের সংগঠন ‘বায়রা’র সাবেক সভাপতি বেনজির আহমেদ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া, গণভবন প্রান্তে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মন্ত্রী ইমরান আহমেদ প্রবাসী বাংলাদেশিদের মেধাবী সন্তানদের মধ্যে শিক্ষাবৃত্তির চেক এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে সিআইপি ক্রেস্ট এবং সনদ বিতরণ করেন।

বৈধ চ্যানেলে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রদানকারী হিসেবে মাহতাবুর রহমান এবং জেসমিন আক্তারকে পুরস্কৃত করা হয় এবং অনিবাসী বাংলাদেশি হিসেবে দেশে সরাসরি বিনিয়োগের জন্য কল্লোল আহমেদ সিআইপি ক্রেস্ট লাভ করেন। ২০০৯ থেকে অদ্যাবধি মোট ১৫৫ জনকে সিআইপি মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের কর্মীরা যেসব দেশে কাজ নিয়ে যান সেখানকার সরকার ও রাষ্ট্র প্রধান এবং নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনায় তিনি এবং তার সরকার সব সময় সে দেশের উন্নয়নে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ভূমিকা তুলে ধরেন। সরকার প্রধান বলেন, আমার দেশের মানুষ আমার কাছে অনেক সম্মানের এবং বাইরে গিয়ে যেন তারা অসম্মানে না পড়েন, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করছি। সে জন্যই চলমান মুজিববর্ষে এবারের আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের জন্য আমাদের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘মুজিববর্ষের আহ্বান দক্ষ হয়ে বিদেশ যান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষ কর্মী তৈরির লক্ষ্যে কারিগরি প্রশিক্ষণের জন্য বিদ্যমান ৭০টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অচিরেই যুক্ত হবে উপজেলা পর্যায়ে আরো ৪০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এছাড়া, মুজিববর্ষেই উপজেলা পর্যায়ে আরো ১০০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।

যাতে নিজের এলাকায় বসে প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ কারিগর হিসেবে প্রবাস গমনেচ্ছুরা যেতে পারেন। তিনি বলেন, বিদেশ ফেরত কর্মীদের আর্থিকভাবে পুনর্বাসনের জন্য ৭শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ‘প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক’-এর মাধ্যমে সহজ শর্তে ও স্বল্পসুদে প্রবাসীগণ এই ঋণ নিতে পারবেন। তিনি আরো বলেন, ‘আপনারা হতাশ না হয়ে পূর্ণোদ্যমে নিজেরা নিজের দেশে কাজ করুন। তিনি বলেন, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ যেমন আসছে তেমনি প্রবাসী বাংলাদেশিরাও দেশে বিনিয়োগ করতে পারেন। কারণ, প্রবাসীদের জন্য তিনটি ব্যাংকের কর্মকাণ্ড চালুর পাশাপাশি, আমরা বিভিন্নভাবে সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn