বার্তা ডেস্ক :: সতীন মানে শত্রু এমন প্রচারণা থাকলেও অনেক সময় এর ব্যতিক্রমও দেখা যায়। অনেক সময় সতীন আপনও হয়। এমনটি হচ্ছে বগুড়ার শিবগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে ২নং সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর মাজেদা বেগমের। তার জয়ের জন্য দুই সতীন দিনরাত নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। একইসঙ্গে তিন সতীন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট ভিক্ষা করছেন। এদিকে তাদের আরেক সতীন সরকারি স্কুলের শিক্ষক হওয়ায় তিনি সরাসরি প্রচারণায় অংশ নিতে পারছেন না। তবে তিনি তাদের সার্বিক সহযোগিতা করছেন। এদিকে সতীনরা মাঠে থাকায় ভোটারদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ ও কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে। ভোটাররা বলছেন, এক সতীনকে বিজয়ী করার জন্য জন্য অপর তিনজনের পরিশ্রম দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

নির্বাচন অফিস ও স্থানীয় সূত্র জানায়, তৃতীয় ধাপে আগামী ৩০ জানুয়ারি বগুড়ার শিবগঞ্জসহ পাঁচ পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। শিবগঞ্জ উপজেলার বন্তেঘরী গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আব্দুস সামাদের মোট পাঁচজন স্ত্রী। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রাহেলা বেগম, গৃহিণী ডলি বেগম, পৌর কাউন্সিলর মাজেদা বেগম, মিনি বেগম ও রেনু বেগম। দ্বিতীয় স্ত্রী ডলি বেগমের মৃত্যুর পর তিনি চারজনকে নিয়ে সংসার করছেন। রাহেলা বেগম সরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করায় তার নির্বাচন করার ইচ্ছা নেই। বর্তমান কাউন্সিলর মাজেদা বেগম, মিনি বেগম ও রেনু বেগম আসন্ন শিবগঞ্জ পৌর নির্বাচনে ২নং সংরক্ষিত আসনে (ওয়ার্ড নম্বর ৪, ৫ ও ৬) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছা পোষণ করেন।

তফসিল ঘোষণার আগেই শিক্ষক আব্দুস সামাদ স্ত্রীদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। সিদ্ধান্ত হয়, তৃতীয় স্ত্রী মাজেদা বেগম আবারো প্রার্থী হবেন। আর চতুর্থ ও পঞ্চম স্ত্রী তাকে প্রত্যক্ষ ও দ্বিতীয় স্ত্রী পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করবেন। রাহেলা ছাড়া অপর তিন সতীন একসঙ্গে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাবেন। তাদের কাছে ভোট চাইবেন। নির্বাচনে মাজেদা বেগম আনারস প্রতীক পেয়েছেন। সিদ্ধান্ত মোতাবেক তিন সতীন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাক ডাকা ভোর থেকে রাত অবধি ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। জয়ের আশায় তারা ক্লান্তিহীনভাবে তিন ওয়ার্ডে ছুটে চলেছেন। তাদের সঙ্গে থাকছেন, স্বামী আব্দুস সামাদ। তাদের এ প্রচারণায় ভোটারদের মাঝে ব্যাপক কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে।

বন্তেঘরী গ্রামের ভোটার ফজলুর রহমান, মিজানুর রহমান, মিনারা বেগম প্রমুখ ভোটার জানান, ‘সতীন মানেই যে শত্রু বা খারাপ নয় তা শিক্ষক সামাদের তিন স্ত্রী প্রমাণ করেছেন। তিন সতীনের প্রচারণা ভোটারদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। মাজেদা বেগম এখন পৌরসভার আলোচিত প্রার্থী।’ সতীন মিনু বেগম বলেন, ‘আমাদের আলাদা আলাদা হাঁড়ি। কিন্তু সবাই আপন বোনের মতো। শুধু ভোট নয়, সকল সুখে-দু:খে আমরা একে অন্যের পাশে দাঁড়ায়।’ মাজেদা বেগম বলেন, ‘সতীন মানেই মনে করা হয় শত্রু, কিন্তু আমি ভাগ্যবতী। সতীনরা আমার কাছে বোনের মত, অতি আপনজন। আমি নির্বাচিত হতে পারলে এলাকায় নারী নির্যাতন ও বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে সক্রিয় ভূমিকা রাখবো।’ আব্দুস সামাদ বলেন, ‘স্ত্রীদের নিয়ে আমি খুশি। তারা সব সমস্যাকে মিলেমিশে মানিয়ে নিতে পারে। আর তাদের এই মধুর সম্পর্কের কথা জানতে পেরে ভোটারেরা অনেক খুশি।’ গত নির্বাচনেও তারা একইভাবে প্রচারণা চালিয়ে ভোটারদের মন জয় করেছিলেন।- যুগান্তর

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn