শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদকে ছিনতাইকারীর হত্যা করেছে, পুলিশের এমন দাবি বিশ্বাস করে না নিহতের পরিবার। রোববার ছেলের ক্যাম্পাসে আসেন বুলবুলের মা ইয়াসমিন বেগম। সঙ্গে ছিলেন তার আরেক মো. জাকারিয়া ছেলে ও দুই মেয়ে। বুলবুল বিশ্ববিবদ্যালয় হলের যে কক্ষে থাকতেন তা ঘুরে থাকেন তা মা ও ভাইবোনেরা। এসময় কান্নায় ভেঙ্গে পরেন সকলেই। কাঁদতে কাঁদতেই বুলবুলের মা ইয়াসমিন বেগম বলেন, ‘কেবল ছিনতাইেয়র জন্য তারে মারা হইছে এটা বিশ্বাস করি না। তারে কেউ মারাইছে।’
তিনি এঘটনার ‘আরও ভালো তদন্ত’ করার দরকার উল্লেখ করে বলেন, আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। রোববার দুপুরে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসেন বুলবুলের পরিবারের সদস্যরা। শাহপরান হলের অতিথি কক্ষে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক মিজানুর রহমান খানের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলেন তারা। এরপর হলে বুলবুলের কক্ষ (২১৮) ঘুরে দেখেন তারা। পরে বুলবুলের ল্যাপটপ, হাতঘড়ি, তোষক, টেবিল ল্যাম্প, কাপড়সহ তার ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী বুঝে নেন ইয়াসমিন বেগম। গত ২৫ জুলাই সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গাজীকালুর টিলায় ঘুরতে যান লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদ। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীও তার সঙ্গে ছিলেন। তাদের দুজনের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা গেছে। ওই টিলায়ই ছুরিকাহত হন বুলবুল। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
রোববার ক্যাম্পাসে এসে ঘটনার দিন বুলবুলের সাথে ওই টিলায় যে ছাত্রী ছিলেন তার সঙ্গে সঙ্গে কথা বলতে চান ইয়াসমিন। তবে মামলা তদন্তনাধীন থাকায় ওই ছাত্রীর সঙ্গে বুলবুলের মাকে দেখা করতে দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জালালবাদ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) দেবাশীষ দেব। এরআগে গত ২৭ জুলাই জালালাবাদ থানায় সংবাদ সম্মেলন করে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ জানান, ছিনতাইয়ে ব্যর্থ হয়েই বুলবুলকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার ঘটনায় প্রেমঘটিত দ্বন্দ্বের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
আজবাহার আলী বলেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর গাজীকালুর টিলা এলাকায় ঘুরতে যান বুলবুল ও এক ছাত্রী। অপেক্ষাকৃত নির্জন এলাকায় তাদের একা পেয়ে আবুল হোসেন, কামরুল ইসলাম ও মোহাম্মদ হাসান তাদের কাছে মোবাইল ও টাকা দাবি করে। একপর্যায়ে বুলবুলের সঙ্গে তাদের ধাক্কাধাক্কি ও ধস্তাধস্তি হয়। তখন বুলবুলকে ছুরিকাঘাত করে তারা। তবে পুলিশের এমন বক্তব্যের সাথে ভিন্নমত জানিয়ে বুধবার কাম্পাসে এসে বুলবুলের ভাই মো. জাকারিয়া বলেন, আমার ভাইয়ের হত্যা মামলা তদন্তনাধীন থাকলেও মনে হয় না সুষ্ঠু তদন্ত হবে। কারণ, হত্যাকাণ্ডের যিনি প্রত্যক্ষদর্শী (বুলবুলের বান্ধবী) তার সঙ্গে আমাদের কথা বলতে দেওয়া হয়নি। তাকে কেন আড়ালে রাখা হচ্ছে, বুঝতে পারছি না। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন, সপ্তাহখানেক পরে নাকি মেয়েটির সঙ্গে আমাদের কথা বলিয়ে দেবেন।
আমার ভাই হারিয়েছি। তার অন্তিম সময়ে সেই মেয়েটিই কাছে ছিল। তার কাছ থেকে দুটি কথা শুনতে পারতাম, কী ছিল বুলবুলের শেষ কথা। তিনি আরও বলেন, আমার ভাই আমার চেয়ে ৫ আঙুল লম্বা ছিল। তার মতো ছেলেকে ২-৩ টা কিশোর ছেলে মেরে ফেলতে পারে, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। বুলবুলের ভাই বলেন, আমরা চার ভাই-বোনের মধ্যে বুলবুল সবার ছোট ছিল। সাত মাস আগে আমাদের বাবা মারা যান। বুলবুলকে এ অবস্থায় পড়াশোনা করাতে গিয়ে বেগ পেতে হয়েছে আমাদের। অনেক স্বপ্ন ছিল আমাদের। কিন্তু সন্ত্রাসীরা তা শেষ করে দিল। আমার মা হত্যাকারীদের বিচার দাবি করেছেন। আমারা সকলেই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ন্যায় বিচার দাবি করছি।
রোববার বুলবুলের পরিবার এলেও কাম্পাসে ছিলেন না উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ। তবে বুলবুলের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাত হয়েছে জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ইশরাত ইবনে ইসমাইল বলেন, আমরা কথা দিচ্ছি বুলবুল হত্যার ন্যায় বিচার হবে। আমাদের ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। পুলিশের পাশপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এ ঘটনার তদন্ত করছে।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১০০ বার