জাকির হোসেন পিংকু-

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়নের একটি বাড়ি জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে বুধবার ভোর থেকে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা ঘিরে রাখার পর সোয়াট এর নেতৃত্বে সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে শুরু হওয়া ‘অপারেশন ঈগল হান্ট’ অভিযান রাত সাড়ে আটটার পর রাতের মত স্থগিত ঘোষনা করা হয়েছে।

রাত সোয়া ৯টার দিকে রাজশাহী পুলিশের উপকমিশনার ( সোয়াটের দায়িত্ত্বে থাকা কর্মকর্তা) প্রলয় কুমার জোয়ার্দ্দাার সাংবাদিকদের সাড়ে আটটার পর রাতের মত অপারেশন স্থগিতের খবর জানান। তিনি বলেন, সকালে অপারেশন আবার শুরু করা হবে। তবে প্রায় দু’ঘন্টাব্যাপী চলা অভিযান বা হতাহতের ব্যাপারে কিছু বলেননি তিনি।

এর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশ সুপার মোজাহিদুল ইসলাম অভিযান শুরুর সত্যতা নিশ্চিত করেন। অভিযান শুরুর পর ঘটনাস্থল থেকে প্রচুর গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তবে কোনো পক্ষের কোনো হতাহতের পাওয়া যায়নি। ঠিক কত জন ওই বাড়িতে থাকতে পারে এবং তাঁদের পরিচয় কি তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ।

শিবগঞ্জ-গোমস্তাপুর আঞ্চলিক সড়কের শিবনগর ত্রিমোহনী এলাকায় অবস্থিত ওই বাড়িটি শিবগঞ্জ থানা পুলিশ গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিত্বে ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ঘিরে ফেলে। সরিয়ে নেয়া হয় আশপাশের বাড়ির বাসিন্দাদের। স্থানীয় সুত্র জানায়, পরে সকালে তাঁরা ঘটনাস্থল থেকে গুলির শব্দ পেয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, সকাল থেকে তাদের সাথে ওই বাড়িতে অবস্থানকারীদের গুলি বিনিময় হয়েছে। এলাকার বৈদ্যূতিক সংযোগ বিছিন্ন রয়েছে। এলাকার চারপাশে জন নিরাপত্তার স্বার্থে সকাল ৬ টা থেকে ১৪৪ ধারা জারি করেছেন স্থানীয় প্রশাসন। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এটি বহাল থাকবে বলে জানিয়েছেন ইউএনও শফিকুল ইসলাম।

গত ৩ মাস যাবৎ ওই বাড়িতে স্থানীয় আবু (৩০) নামে মসলা বিক্রেতা এক যুবক পরিবার নিয়ে ওই বাড়ীতে থাকে। তার স্ত্রী ও নাবালক দুই মেয়ে রয়েছে। তিনি ওই এলাকারই আফসার আলীর ছেলে। বাড়ীর মালিক সাইদুর রহমান ওরফে জেন্টু বিশ্বাস। আবু এর আগে পাশের এলাকায় স্মশুর বাড়ীতে থাকতেন। নিজ বাড়িতে বনিবনা না হওয়ায় তিনি বাড়ি ছাড়েন।

তার ধর্ম পালন রীতি কিছুটা ভিন্ন। তিনি সৌদি রীতিতে ঈদ পালন করেন। তিনি স্থানীয় মাদ্রাসায় কিছুদিন পড়াশোনা করেন। এর বাইরে তার সম্পর্কে তেমন কিছু জানাতে পারেনি এলাকাবাসী। আবুকে জঙ্গি বলে সন্দেহ করছে পুলিশ। তার ওই বাড়িতে কি পরিমাণ বিস্ফোরক বা গোলাবারুদ আছে, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সকাল থেকে বাড়িতে অবস্থানরতদের হ্যান্ড মাইকে আত্মসমর্পণের জন্য বলা হলেও অভিযান শুরুর আগ পর্যন্ত কেউ আত্মসমর্পণ করেননি। আবুর মা ও পরিবারের সদস্যদের দিয়ে বিকেলে তাকে আত্মসমর্পনের জন্য বলা হলেও তাতে কাজ হয়নি। বাড়িতে নারী ও শিশু রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তবে এর বাইরেও লোক রয়েছে বলে ধারণা পুলিশের। শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুল ইসলাম জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তারা এলাকায় রয়েছেন। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে সাংবাদিকসহ কাউকেই ওই এলাকায় প্রবেশ করতে দিচ্ছে না পুলিশ। ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটকের কোন সংবাদ নিশ্চিত করেনি পুলিশ। তবে স্থানীরা গত রাতে দু’জনকে আটকের খবর জানিয়েছেন।

বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে দুটি হেলিকপ্টারে সোয়াট সদস্যরা শিবগঞ্জ আসার পর বিকেল পাঁচটায় ঘটনাস্থলে পৌঁছে বলে শিবগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস নিশ্চিত করেছে। বাড়িটি ঘিরে ফেলার আগে ভোররাত সাড়ে তিনটা থেকে এলাকার বিভিন্ন স্থানে আরও কয়েকটি বাড়িতে তল্লাশী চালায় পুলিশ। এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস দল ও এ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রয়েছে। প্রায় ১৪ ঘন্টা ঘিরে রাখার পর রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ সোয়াট এর নেতৃত্ত্বে আমবাগান ঘেরা বাড়িটিতে ‘অপারেশন ঈগল হান্ট’ নামের অভিযান চলছিল বলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ কর্মকর্তারা জনিয়েছেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn