সৌদি আরবের শপিংমল গুলোতে আর কাজ করতে পারবেন না বিদেশিরা। এ ঘোষণা দিয়েছে সেখানকার শ্রম মন্ত্রণালয়। সৌদি নাগরিকদের জন্য কর্মসংস্থান সৃৃষ্টিতে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সৌদি নাগরিকদের দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পের অংশ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী পত্রিকা সৌদি গেজেটের এই তথ্য উঠে আসে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে দেশটিতে কর্মরত অন্য বিদেশিদের সঙ্গে কয়েক হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বেন। এ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন দেশটির শপিংমলে কর্মরত বাংলাদেশিরা।
অন্যদিকে দেশটির নাগরিকদের জন্য ১৫ লাখ কর্মসংস্থান তৈরী হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শ্রম মুখপাত্র। তবে রাতারাতি চাকরি হারাবেন না বিদেশিরা। চাকরিরত শ্রমিকদের সঙ্গে সংস্থার চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে পুনঃ চুক্তি করা যাবে না ? এমনটাই জানিয়েছেন দেশটির শ্রম দপ্তরের মুখপাত্র খালেদ আবাল খাইল। সৌদি আরবের  বাজারের পরিস্থিতির ওপর এই প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়টি নির্ভর করছে। সৌদি আরব তেলনির্ভর অর্থনীতি ছেড়ে বের হওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালাচ্ছে। সেজন্য দক্ষ শ্রমিক তৈরির ওপর জোর দিচ্ছে সে দেশের সরকার। সৌদি আরবে গত ত্রৈমাসিকে বেকারত্বের হার ছিল ১২ দশমিক ৩ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। মহিলাদের ক্ষেত্রে এই হার ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ। সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র খালিদ আবাল খাইল টুইটারে শপিং সেন্টারগুলোতে শুধু সৌদি নারী ও পুরুষের কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। শপিং মলগুলোর ভেতরে নারীদের পোশাকের দোকানগুলোতে নারী বিক্রয়কর্মী নিয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছে। ২০৩০ সাল নাগাদ সৌদি নাগরিকদের বেকারত্বের হার ১১ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনার যে লক্ষ্য সৌদি সরকারের রয়েছে, সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সৌদি সরকারের এ প্রচেষ্টা ‘ভিশন-২০৩০’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। সৌদি আরবে তেল উৎপাদন বা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা ও বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য এ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
ভিশন-২০৩০ অনুযায়ী, খুচরা দোকানগুলোতে ১৫ লাখ শ্রমিক রয়েছে। এদের মধ্যে মাত্র ৩ লাখ সৌদি নাগরিক। সৌদি ভিশন- ২০৩০ এর আওতায় ‘ন্যাশনাল ট্রান্সফরম্যাশন প্রোগ্রাম (এনটিপি)’র অধীনে সৌদি আরব ২০২০ সাল নাগাদ বেসরকারি খাতে সাড়ে ৪ লাখ সৌদি নাগরিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে চাইছে দেশটির সরকার। এমটি জানিয়েছেন বার্তা সংস্থা এএফপি’র, সৌদি আরব মূলত তেলনির্ভর অর্থনীতির দেশ। এখানকার নাগরিকদের বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত করার ব্যাপক কর্মসূচি গত বছর হাতে নেয় সরকার। সর্বশেষ এ উদ্যোগ সেই কর্মসূচির অংশ। তবে এ পরিকল্পনা কবে থেকে এবং কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয় নি।
উল্লেখ্য, সৌদি আরবে রাস্তা পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ছোটখাটো কাজে নিয়োজিত বিদেশি শ্রমিকরা। এর বড় একটি অংশ বাংলাদেশি। ২০১৫ সালের শেষ নাগাদ সৌদি আরবে কর্মরত ছিলেন প্রায় ৯০ লাখ বিদেশি। এক্ষেত্রে সরকারি খাতে চাকরিকেই বেশি পছন্দ করেন সৌদি আরবের নাগরিকরা। কারণ, সরকারি চাকরিতে কর্মঘণ্টা কম। ছুটি বেশি। বেশ কয়েক বছর ধরে দেশটির সরকার সেখানকার বিভিন্ন কোম্পানিতে সৌদি আরবের অধিক পরিমাণ নাগরিকদের নিয়োগ দেয়ার জন্য ভর্তুকি প্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছে। যারা এ ক্ষেত্রে টার্গেট পূরণ করতে পারছে না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়। নতুন নীতির অধীনে যেসব কোম্পানি সৌদি আরবের নাগরিকদের চেয়ে বেশি সংখ্যক বিদেশি নাগরিক কাজে নিয়োগ দেবে তাদের মাসিক ফি বৃদ্ধি করার কথা রয়েছে।
এদিকে সৌদি আরবের এ সিদ্ধান্তে শঙ্কায় রয়েছেন দেশটির বিভিন্ন শপিংমলে কর্মরত বাংলাদেশিরা। তারা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে বেকার হয়ে পড়বেন বহু সংখ্যক বাংলাদেশি। দেশটিতে ক্ষুদ্র ব্যবসা করেন এমন এক জন চট্টগ্রামের দিদারুল ইসলাম চৌধুরী তিনি লোকাল ব্যবসা করেন তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র শপিংমলে কর্মরতদের জন্যই কার্যকর হবে। তবে তার সঙ্গে অনেক বাংলাদেশির কথা হয় যারা শপিংমলে কাজ করেন। তারা কাজ হারানোর ভয়ে বেশ শঙ্কিত। এই সময়ের মধ্যে তারা অন্য কোনো জায়গায় কাজ জুটিয়ে না নিলে দেশে ফিরে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। এমনকি যেসব শপিংমলে বাংলাদেশি নারীরা কাজ করতো সেসব জায়গায় এখন আর বিদেশি কোনো নারী কাজ পাচ্ছেন না।  আবার কর্মরত কেউ কেউ নিয়মিত বেতনও পাচ্ছেন না।
এ ব্যাপারে সৌদি আরবে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সিআইপি আলহাজ্ব আব্দুর রহমান সৌদিআরবের কর্মরত বাংলাদেশীদের হতাশ না হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, অনেক আগে থেকেই সৌদি সরকার এমন ঘোষণা দিয়ে আসছেন। কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন করাটা তাদের জন্য বেশ কঠিন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn