ছাতকের ধনীটিলায় চলছে পাথর খেকোদের তান্ডব
চান মিয়া-
ছাতকে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে পাথর খেকোদের তান্ডব। লিজ নামের সাইন বোর্ডের আড়ালে ধনীটিলায় অবাধে পাথর উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। ফলে পাথর খেকোদের তান্ডবে অচিরেই হারিয়ে যেতে বসেছে ধনীটিলার মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ। এদের তান্ডব থেকে বাদ পড়েনি কবরস্থান, মসজিদ, ঈদগাহ, খেলার মাঠ, গির্জাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্টানের ভূমি। তাদের দোর্দন্ড প্রতাপ-প্রতিপত্তির কাছে অসহায় স্থানীয় লোকজন। অব্যাহত পরিবেশ বিপর্যয়ের সাথে জড়িতদের কাছ থেকে পরিবেশ অধিদপ্তর, ভূমি অফিস ও পুলিশসহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারি সংস্থা সূযোগ-সুবিধা ভোগ করছে বলে জানা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইসলামপুর ইউপির ভারতীয় সীমান্তবর্তী রাসনগর-মনিপুরী বস্তির ধনীটিলায় পাথর উত্তোলন নিয়ে সরকারের তারকা চিিহ্নত (অর্থাৎ ৩০পার্সেন্ট কোটার) দু’টি গ্রুপ এখন মূখোমুখি অবস্থানে। এর দখল নিয়ে রয়েছে খুনোখুনির আশংকাও। সরকারের ৩০পার্সেন্ট কোটার খোদ মনিপুরী সম্প্রদায়ে রয়েছে দল, উপ-দল। একের বিরুদ্ধে করছেন অপরে কড়া বিষোদগার। সরকারের ৩০পার্সেন্ট কোটার অধিকারি অপর দল হচ্ছে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। দু’পক্ষের একজন লিজ ও অপর পক্ষে দখল দাবি করলেও প্রকৃত পক্ষে টিলা কেটে পাথর উত্তোলনে কারো বৈধতা নেই। এরপরেও টিলা কেটে পাথর উত্তোলনে কেউ থেমে থাকেনি। মনিপুরি ব্রজেন্দ্র সিংহ ২০০৪সালের খনিজ মন্ত্রণালয়ের লিজ দাবি করলেও এনিয়ে রয়েছে ভিন্নমত। টিলাকাটা নিষিদ্ধ থাকায় ৭.৩৭একর ব্যক্তি মালিকানাধিন আমন জমি উল্লেখ করে পাথর উত্তোলনের জন্যে লিজ নিয়েই শুরু করেন বেচা-বিক্রি। একই ভূমি একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে বিক্রিত ভূমি অনেক ক্রেতাকে সমজিয়ে দিতে রিতীমতো শুরু করেন টালবাহানা। এছাড়া ২৩মার্চ ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধা তাদের দখলীয় ভূমি থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ ও ইজারা বাতিলের দাবিতে এসিল্যান্ডের কাছে লিখিত আবেদন করেন।
এর কোন সুরাহা না হওয়ায় গত ১মে’ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে পৃথক আবেদনে ৫২জেএলস্থিত ধনীটিলা মৌজার ১নং খতিয়ানের ১০দাগের ১২.৩০একর ভূমির লিজ দাবি করা হয়। ইসলামপু ইউপি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইন্তাজ আলী আবেদনে তাদের অর্ধশতাধিক বছর থেকে ভোগ দখলিয় টিলারকম ভূমি দাবি করে ১মে’ জনৈক ব্রজেন্দ্র সিংহ ও আব্দুল কুদ্দুছের বিরুদ্ধে জবর-দখলের অভিযোগ করেন। এদিকে ২৫এপ্রিল টিলা থেকে পুলিশ পাথর উত্তোলনের সরঞ্জামাদি ও পাথরসহ ৩টি ট্রাক্টর আটক করে। প্রায় ২০০৪সাল থেকে পাথর উত্তোলন হলেও চলতি মে’ মাসের প্রথম দিকে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বন্ধ রয়েছে। তবে ব্রজেন্দ্র সিংহ বিভিন্ন মাধ্যমে পাথর উত্তোলন করছেন বলে জানান স্থানীয়রা। এভাবে ১৩এপ্রিল দিন-দুপুরে ব্রজেন্দ্র সিংহের খড়ের ঘরে রহস্যজনক অগ্নিকন্ডে থানায় দেয়া এজাহারে প্রতিবাদি লোকজনকে অভিযুক্ত করা হয়। ইসলামপুর ইউপি আ’লীগের সহ-সভাপতি জামাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই, সদস্য মানিক মিয়া ও শাহ আলমসহ অনেকে জানান, নিজেদের মালিকানা ভূমি থাকার পরও পরিবেশ রক্ষায় তারা এখান থেকে পাথর উত্তোলনে বিরত রয়েছেন।
এরপরেও তাদের বিরুদ্ধে একটি চক্রের নানা অপ-প্রচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। ছাতক এসিল্যান্ড সাবিনা ইয়াসমিন জানান, পাথর উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়। তবে টিলা কেটে পাথর উত্তোলন বন্ধের ব্যাপারে একাধিকবার মন্ত্রনালয়ে চিটি দেয়া হয়েছে। সুনামগঞ্জের সহকারি পুলিশ সূপার (ছাতক-দোয়ারা সার্কেল) মো. দুলন মিয়া জানান, ধনীটিলায় পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। এটা ভুমি মন্ত্রনালয় সংক্রান্তর বিষয়। এখানে আইন-শৃংখলার অবনতি ঘটার আশঙ্কা দেখা দিলে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিবে।