বাবুর্চির তদবীরে’র কাছে পরাজিত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ভূমি মন্ত্রণালয়ের আদেশ লঙ্ঘণের মাধ্যমে যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও পঙ্গু সাংবাদিককে উপেক্ষা করে স্বজনপ্রীতির আশ্রয়ে জেলা প্রশাসকের বাংলোর বাবুর্চিকে ভিপি বাড়ী বন্দোবস্ত প্রদানের ঘটনায় সুনামগঞ্জের সারা কালেক্টরেক্ট জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে কে বড় ভূমিমন্ত্রী নাকি জেলা প্রশাসকের বাবুর্চি ? জানা যায়,সুনামগঞ্জ পৌরসভার ষোলঘর মৌজার ১১২নং জেএলস্থিত,১১৪ খতিয়ানের, ৫১ দাগের ৭ শতক জায়গার উপর ২টি টিনসেড ভিটেবাড়ি রয়েছে। যাহা ভিপি মোকদ্দমা নং ২৮৬/৬৬-৬৭ এর আওতাভূক্ত পৃথক ২টি ভিটেবাড়ি। বর্ণিত ভূমি বন্দোবস্ত পাওয়ার জন্য সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ক্যাপ্টেন অব: তাজুল ইসলাম বীরপ্রতিক,সুনামগঞ্জ ৫ আসনের এমপি মুহিবুর রহমান মানিক,সুনামগঞ্জ ৪ আসনের এমপি বেগম মমতাজ ইকবাল,সুনামগঞ্জ ৩ আসনের এমপি এম.এ মান্নান,সুনামগঞ্জ ২ আসনের এমপি সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত ও সুনামগঞ্জ ১ আসনের এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের লিখিত সুপারিশের ভিত্তিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করলে গত ৬/৫/২০০৯ ইং তারিখে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূ :ম/শা-৬/অর্পিত/বিবিধ/০৪/২০০৫/-২৫৩ নং স্মারকে সুনামগঞ্জের সিনিয়র সাংবাদিক আল-হেলালের আবেদন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মোতাবেক ভিপি বাড়ী দুটির যেকোন একটি বন্দোবস্ত লাভের জন্য গত ৯ মে সর্বশেষ বর্তমান জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলামের কাছে লিখিত আবেদন করেন আল-হেলাল। এর আগেও একাধিক লিখিত আবেদন করেছেন তিনি। বিষয়টি জেলা ও সদর উপজেলা প্রশাসনের প্রত্যেক সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীরাই অবগত রয়েছেন। কিন্তু ১১ মে বিদায়ী জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম একজন পঙ্গু সাংবাদিক ও যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের দীর্ঘ ৯ বছরের ধারাবাহিক প্রচেষ্টাকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করে অধীনস্থ ৩ কর্মচারীকে স্বজনপ্রীতির আশ্রয়ে বন্দোবস্ত দিয়েছেন। এর আগে আবেদনকৃত ঐ ভিটেবাড়ীতে জেলা প্রশাসক থাকার জন্য জায়গা দেন নিজ বাংলোর বাবুর্চি মীরু হাওলাদার আলীকে। একটি ভিটেবাড়ীতে স্বপরিবারে অবস্থান করে মীরু হাওলাদার আলী তার ভিটের কিছু অংশ মাসিক ২ হাজার টাকায় অবৈধভাবে ভাড়া দেয়। বছরের পর বছর ধরে আদায়কৃত ভাড়ার টাকা সরকারী কোষাঘারে জমা নাদিয়ে নিজ পকেটস্থ করেছে সে। ১১ মে ঐ বাড়ী বন্দোবস্ত লাভের আগে বর্ণিত ভিটায় স্বপরিবারে বসবাস করলেও তার মাসিক বেতন হতে বাড়ীভাড়া বাবত কোন টাকা সে সরকারী কোষাঘারে জমা দেয়নি বা তার কাছ থেকে ভূমি বা প্রশাসন হতে কোন বাড়ী ভাড়া নেয়া হয়নি।
অভিযোগে প্রকাশ, ভিপি ভিটেবাড়ীর বন্দোবস্ত গ্রহীতা জেলা প্রশাসকের বাংলোর বাবুর্চি মীরু হাওলাদার আলী মাদারীপুর জেলার স্থায়ী বাসিন্দা। জীবিকার তাগিদে সে ঢাকা শহরে রিক্সা চালাতো। তার কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার ভূয়া নাগরিকত্ব ও ৮ম শ্রেণি পাশের জাল সনদ দিয়ে সরকারী চাকুরী ভাগিয়ে নিয়ে সদর উপজেলার রঙ্গারচর ইউনিয়নের বনগাঁও এলাকায় মায়ের নামে খাস জমি বন্দোবস্ত নেয়। পরে ঐ জমি অন্যের কাছে বিক্রয় করে। সুনামগঞ্জ পৌরসভার ওয়েজখালী-গনিপুরে এবং পাটানপাড়ায় তার রয়েছে বিশাল ভূসম্পত্তি। আরো জানা যায়,সদর উপজেলার মোহনমুকুন্দ মৌজার ৩৪৬ নামজারী খতিয়ানের ৩৮১ নং দাগভূক্ত ৭ শতক জায়গা স্ত্রী কলি আক্তারের নামে হাতিয়ে নেয় বাবুর্চি আলী। সদর উপজেলা তহসিল অফিসের নামজারী খাতায় উক্ত বাবুর্চি আলী নিজেকে মাদারীপুর জেলার সদর উপজেলার উত্তর দুতপাখী গ্রামের বাসিন্দা হিসেবে উল্লেখ করেছে। তার পিতার নাম ইসলাম উদ্দিন হাওলাদার। নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে শহরের হাজীপাড়া আবাসিক এলাকার বাসিন্দা হিসেবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা প্রশাসনের কোন কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বলেন,বিশাল ভূসম্পত্তির অধিকারী হওয়া স্বত্তেও সরকারী ভিপি বাড়ী বন্দোবস্ত নিয়েছে আলী। সে একখান ছিজ বটে। ১ম দফায় সুনামগঞ্জের ভূয়া নাগরিক সেজে,দ্বিতীয় দফায় লেখাপড়া না জানা স্বত্তেও ৮ম শ্রেণি পাশের জাল সনদ নিয়ে সরকারী চাকুরী লাভ করেছে। তৃতীয় দফায় ভিপি ভিটেবাড়ী বন্দোবস্ত নিয়ে সকল জালিয়াতি প্রতারণাকে জায়েজ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।