পশ্চিমবঙ্গের লেখক ও মানবাধিকার কর্মী ড. পার্থ ব্যানার্জির অকপট স্বীকারোক্তি, ‘বাংলাদেশ যতদিন বিশ্বে সরব থাকবে ততদিনই বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি বহাল থাকবে। কলকাতা অথবা পশ্চিমবঙ্গে বাংলা রক্ষায় আন্তরিকতা তেমন একটি নেই।’ ১৮ মে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে জড়ো হওয়া বেশ ক’জন বাংলাদেশী কবি, সাহিত্যিক, লেখক, প্রকাশক এবং সাংবাদিকের সাথে প্রবাসের লেখক-লেখিকাদের প্রানবন্ত এক আড্ডায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলা হারিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশের খ্যাতনামা কবি-সাহিত্যিক-লেখকদের নাম আনন্দবাজার, দেশ সহ বিভিন্ন পত্রিকায় বিকৃতি করে প্রকাশের অভিযোগও করা হয়। কবি শামসুর রাহমানের নাম কখনোই শুদ্ধ করে লিখেনি এসব মিডিয়া। সব সময় শামসুর রহমান লিখতো বলেও উল্লেখ করেন ঢাকার ক্ষুব্ধ কবি-সাহিত্যিকরা।
নিউইয়র্কে ৩দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব ও বইমেলা উপলক্ষে আগত লেখক-লেখিকারা জ্যাকসন হাইটসের পালকি পার্টি সেন্টারে এ আড্ডায় মেতেছিলেন। বাংলা উৎসবের আহবায়ক ফেরদৌস সাজেদীন এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেতা ও নাট্যকার জামালউদ্দিন হোসেনও ছিলেন এ আড্ডায়। ঢাকার কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে ছিলেন আমিরুল ইসলাম, আহমাদ মাযহার, সাইমন জাকারিয়া, হুমায়ূন কবীর ঢালী, জার্মানীর লেখিকা নাজমুন্নেসা পিয়ারি,.কানাডার লুৎফর রহমান রিটন এবং জসীম মল্লিক, অঙ্কুর প্রকাশনীর মেজবাউদ্দিন আহমেদ, প্রথমা প্রকাশনের জাফর আহমেদ রাশেদ, ইত্যাদির জহিরুল আবেদীন জুয়েল, কথা প্রকাশের মোহাম্মদগ জসীমউদ্দিন, আকাশ প্রকাশনের আলমগীর শিকদার লোটন, স্টুডেন্ট ওয়েজের মোহাম্মদ মাশফিকুল্লাহ তন্ময় প্রমুখ। আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি লাবলু আনসার, নির্বাহী সদস্য কানু দত্ত এবং নির্বাচন কমিশনার ও সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের আহবায়ক রাশেদ আহমেদও ছিলেন সরব। ছড়াকার রিটন জোরালো যুক্তির অবতারণা করে দাবি করেন যে, ‘কলকাতায় বাংলা সাহিত্য চর্চা বিশুদ্ধভাবে করার মত সাহিত্যিক তৈরী হচ্ছে না। ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে কলকাতায় সাহিত্য ও বাংলা সংস্কৃতি চর্চা। অথচ এক সময় অনেকেই কলকাতাকে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির রাজধানী হিসেবেও দাবি করতেন। যদিও কখনোই তা সঠিক ছিল না।’
এ আড্ডায় ছিলেন ড. পার্থ ব্যানার্জি। কলকাতার সন্তান এবং একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেছেন। ঘটিকাহিনীসহ বেশ কটি গ্রন্থ রয়েছে তার। নিউইয়র্ক টাইমসসহ বিখ্যাত পত্রিকায় তার সমসাময়িক লেখাও প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমান নিউইয়র্কে একটি শ্রমিক ইউনিয়ন পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন শ্রমিকদের অধিকার সম্পর্কে সজাগ করতে। পার্থ ব্যানার্জি অকপটে স্বীকার করে বললেন, ‘প্রকৃত সত্য হচ্ছে, বাংলাদেশ নামক ভ’খন্ডটি হারিয়ে গেলে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির অস্তিত্ব আর থাকবে না। পশ্চিমবঙ্গে আমরা যারা রয়েছি, তারা ক্রমান্বয়ে কর্পোরেট কালচারে ধাবিত হচ্ছি। শেকড়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হচ্ছে দ্রুত গতিতে।’
১৯, ২০ ও ২১ মে এ বাংলা উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান এবং কলকাতার সাহিত্যিক পবিত্র সরকার মেলার উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ সময় শনিবার সকালে। এবারও এ উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। ‘বই হোক প্রজন্ম-সেতু’ স্লোগানে উজ্জীবিত এই ‘২৬তম বইমেলা’র উদ্বোধন হবে ২৬টি মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn