আবারো বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করেছেন কানাডার ফেডারেল। শুধু তাই নয় ফেডারেল কোর্টের এই রায়ে বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ চেয়া করা আবেদনও নাকচ করে দিয়েছেন বিচারক। বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতার আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত লিখিত রায়ে তার নাম প্রকাশ না করে ‘এস এ’ আদ্যক্ষরে বর্ণনা করতে নির্দেশ দেন। ‘কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন’- এই তথ্য প্রকাশ পেলে বাংলাদেশে তার জীবন নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়বে বলে উল্লেখ করে তিনি আদালতের কাছে তার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানালে আদালত তা গ্রহন করেন। এর আগে বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবী দলের একজন কর্মীর রাজনৈতিক আশ্রয় সংক্রান্ত জুডিশিয়াল রিভিউর আবেদনে ফেডারেল কোর্টের বিচারক জাস্টিস ব্রাউন বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। এবার একই কোর্টের আরেক বিচারক একই ধরনের মন্তব্য করলেন।নথি থেকে জানা গেছে , ‘এস এ’ আদ্যক্ষরের ব্যক্তিটি ২০০৪ সালে বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র যুব শাখা জাতীয়তাবাদী যুবদলে যোগ দেয়। ২০১২ সালে তিনি বিএনপির নির্বাহী কমিটির জয়েন্ট সেক্রেটারির দায়িত্ব পান। ২০১৪ সালে তিনি কানাডায় এসে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন।

২০১৬ সালের আগস্ট মাসে ইমিগ্রেশন ডিভিশন তার আবেদনের শুনানি করে ওই দিনই সিদ্ধান্ত জানায়। ‘এস এ’ নিজেকে বিএনপি নেতা হিসেবে দাবি করেছেন উল্লেখ করে ইমিগ্রেশন ডিভিশন তাকে কানাডায় প্রবেশের অযোগ্য হিসেবে ঘোষণা করে। ইমিগ্রেশন ডিভিশনের সিদ্ধান্তে বলা হয়, বিএনপি সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত আছে, সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত ছিল, সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত হতে পারে’- এটা বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে। কাজেই বিএনপির সদস্য হিসেবে ‘এস এ’ ইমিগ্রেশন ও রিফিউজি প্রোটেকশন অ্যাক্ট এর ৩৪ (১)(এফ) ধারা মোতাবেক কানাডায় প্রবেশের অযোগ্য। ইমিগ্রেশন ডিভিশনের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ফেডারেল কোর্টে জুডিশিয়াল রিভিউর আবেদন করেন ‘এস এ’। ফেডারেল কোর্টের বিচারক জে, ফদারগিল আবেদনটি খারিজ করে দিয়ে রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তি করেন। একই সঙ্গে ফেডারেল কোর্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগের আবেদনটিও তিনি নাকচ করে দেন। রায়ের নথিতে বলা হয়েছে, আদালতের বিবেচ্য বিষয় ছিল- কানাডার ইমিগ্রেশন ও রিফিউজি প্রোটেকশন অ্যাক্ট এর ৩৪(১)(এফ) ধারা মোতাবেক ‘এস এ’কে কানাডায় প্রবেশের অযোগ্য বলে দেওয়া ইমিগ্রেশন ডিভিশনের সিদ্ধান্ত যথাযথ কী না এবং আবেদনকারীকে আপিলের সুযোগ দিতে আবেদনকারীর উপস্থাপিত তিনটি প্রশ্ন সত্যায়িত করা হবে কীনা।

রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি করতে গিয়ে বিচারক বলেন, ইমিগ্রেশন ডিভিশনের পর্যালোচনায় আমি কোনো ভুল খুঁজে পাইনি। কানাডার আইনে সন্ত্রাসের বিস্তৃত যে সংজ্ঞা দেওয়া আছে তার বিবেচনায়, বিএনপির হরতাল ডাকার উদ্দেশ্য এবং ইচ্ছা, হরতালে যে সন্ত্রাস এবং স্বাভাবিক জীবনের বিঘ্ন ঘটেছে এবং এই কাজের(হরতালের) ফলে সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে বিএনপির সচেতনতা বিবেচনায় নিয়ে ইমিগ্রেশন ডিভিশন যুক্তিসঙ্গতভাবেই উপসংহারে পৌঁছেছেন যে বিএনপি হচ্ছে একটি সংগঠন যেটি সন্ত্রাসে লিপ্ত ছিল,আছে বা সন্ত্রাসে লিপ্ত হবে। আদালত বলেন, ইমিগ্রেশন ডিভিশন দীর্ঘ দালিলিক তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে উপসংহারে পৌঁছেছেন। তারা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল,হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা থেকে তথ্য উপাত্ত নিয়েছেন। এগুলোর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কোনো মহলেই কোনো বিতর্ক হয়নি। ইমিগ্রেশন ডিভিশন উপসংহার টেনেছেন,’ তাদের(বিএনপির) কাজের(হরতালের) ফলে কি ঘটছে বা ঘটতে যাচ্ছে সে ব্যাপারে বিএনপির যথেষ্ট ওয়াকিবহাল ছিল, সচেতনতা ছিলো। তাদের এই পদক্ষেপের ফলে চরম সন্ত্রাস, নির্বিচারে মানুষ হত্যা এবং ভয়াবহ ধরনের অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ঘটনা ঘটেছে।। ইমিগ্রেশন ডিভিশন তাদের পর্যালোচনায় নিশ্চিত হয়েছেন যে, বিএনপি এইসব সন্ত্রাসের নিন্দা করেনি এবং সেটি না করে তারা সন্ত্রাসকে গ্রহণ করে নিয়েছে। নতুন দেশ.কম।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn