বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা সাবেক সংসদ সদস্য কলিম উদ্দিন আহমদ মিলনকে সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি’র জেলা সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন। তাঁর পদ পাওয়ার এই বিষয়টিকে ‘ডিমোশন নিয়ে প্রতিপক্ষ ঠেকানো’ হিসেবে মন্তব্য করছেন বিএনপি’র অনেক নেতা-কর্মী। কারণ জেলা বিএনপি পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার শেষ পর্যায়ে এসে মিলনের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সাবেক ছাত্রনেতা মিজানুর রহমান চৌধুরী’র নাম সভাপতি পদে আলোচনার শীর্ষে ছিল। বিএনপিতে ‘এক পদে এক নেতা’ নীতি কার্যকর থাকায় জেলা সভাপতি থেকে পদ মর্যাদার দিক থেকে উপরের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক পদটি ছেড়ে দিতে হবে মিলকে। মঙ্গলবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি’র দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও জেলা নেতাদের ডেকে সভাপতি পদে কলিম উদ্দিন মিলন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে নূরুল ইসলামের নাম মৌখিকভাবে ঘোষণা করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকার বাইরে থাকায় বুধবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত খালেদা জিয়া ঘোষিত কমিটির লিখিত অনুমোদন হয়নি। দলীয় সূত্র জানায়, সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক ও দোয়ারাবাজার) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কলিম আহমদ মিলন ও বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী’র দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক বিরোধ একই আসনে দলীয় টিকেটে প্রার্থী হওয়া নিয়ে। যে কারণে জেলা বিএনপি’র পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী এই নেতা বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছিলেন। এক পর্যায়ে এসে সভাপতি পদে আলোচনার শীর্ষে চলে আসেন ছাতকের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজান চৌধুরী। এর আগে বর্তমান আহ্বায়ক নাছির উদ্দিন চৌধুরী ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান জয়নুল জাকেরীনের নাম সভাপতি পদে চেয়ারপার্সনের টেবিলে ওঠলেও কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে থাকায় মিলন ছিলেন আলোচনার বাইরে। বেগম খালেদা জিয়া কর্তৃক কমিটি ঘোষণার কয়েক দিন আগে যখন সভাপতি পদে নাছির চৌধুরী ও জয়নুল জাকেরীনের নাম জোরের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছিল তখন এ প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে জেলা সভাপতি হতে অনাগ্রহের কথা জানান জেলা বিএনপি’র কমিটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত কলিম উদ্দিন মিলন। পরবর্তীতে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে জেলা নেতাদের একাধিক সাক্ষাতের সময় বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনে নাছির ও জাকেরীনের ‘দুর্বলতা’ ফুটে ওঠলে সভাপতির পদটি ‘প্রায় নিশ্চিত’ হয়ে যায় মিজান চৌধুরী’র। দলের বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, মিজান সভাপতি, নূরুল সম্পাদক – এমন সিদ্ধান্ত যখন প্রায় চূড়ান্ত ঠিক সেই সময় কলিম উদ্দিন মিলনকে সভাপতি করার দাবি ওঠে জেলা বিএনপি’র একাংশের পক্ষ থেকে। মাঠের একাংশের দাবি আর পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত কেন্দ্রীয় এক প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে মিলনের সখ্যতা – দুয়ে মিলে সকল জল্পনার অবসান ঘটিয়ে কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ ছেড়ে দেয়ার শর্তে জেলা সভাপতি হন কলিম উদ্দিন মিলন। পদপদবীর ‘ডিমোশন’ হলেও এতে করে আগামী নির্বাচন কেন্দ্রিক মাঠ পর্যায়ের রাজনীতিতে মিলন খানিকটা সুবিধা পাবেন বলে মনে করছেন তাঁর সমর্থকরা। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাখাওয়াত হাসান জীবন বলেন, ‘সভাপতি পদে অনেকের নামই আলোচনায় ছিল। সর্বশেষ আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কলিম উদ্দিন মিলন ও মিজান চৌধুরীকে ডেকে নিয়ে বলে দিয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি’র ব্যাপরে আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তোমরা দু’জনে মাঠে গিয়ে কাজ করো।’

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn