মিতু আক্তার তখন ক্লাস ফোরের ছাত্রী। আর দুলাভাই জামাল খন্দকারের বয়স চল্লিশ। দুজনের অসম প্রেম। দীর্ঘ এক যুগ ধরে চলে আসা তাদের প্রেমে ঘটেছে নানা ঘটনা। এখন মিতুর বয়স সতের। এ অবস্থায় জামাল নিজেকে প্রেম থেকে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। অন্যদিকে তাকে পাওয়ার জন্য মরিয়া মিতু। দুলাভাইকে বিয়ে করতে নানা চাপ।

শুক্রবার বিকালে মিতুর ছুড়ে মারা সেলেরেসের আঘাতে প্রাণ হারায় দুলাভাই জামাল। অসম প্রেমের বলি হলো নিজেই। আর গতকাল শনিবার সেই পূর্বাপর ঘটনার বর্ণনা দিয়ে দুলাভাইকে খুনের কথা ১৬৪ ধারায় দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আদালতে স্বীকার করেছে মিতু। রাজধানীর কদমতলী থানার মুক্তাধারা আবাসিক এলাকায় ঘটে ওই হত্যাকাণ্ড। গত শুক্রবার বিকাল ৩টার পর বেলালের ১৬১৭ নম্বর ভাড়া বাসার নিচ তলায় ঘটনাস্থলেই জামালের মৃত্যু হয়। ওই দিন সুরতহালের পর গতকাল শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। ঘটনার দিনই মিতুকে আটক করেছে পুলিশ।

গতকাল তাকে আদালতে নেয়া হয়। নিহত জামালের সৎ মা নূরজাহান বেগম বাদী হয়ে কদমতলী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম মুহামাদ মাজহারুল ইসলামের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার পর তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে পাঠানো হয়েছে।

খুনের ২০ মিনিট আগেও মিতু, জামাল, শারমিন এবং তাদের দু’শিশু কন্যা লায়সা (৯) ও জারিন (৪) এক সঙ্গে দুপুরের খাবার খায়। মিতুর বরাত দিয়ে এ বিষয়ে পুলিশ জানায়, খাওয়ার সময় জামাল বলে, ‘আমি তোমাদের দুজনের কাউকে নিয়ে থাকবো না। শারমিন গ্রামে চলে যাবে। আর মিতু যেখানে ইচ্ছে চলে যাবে।’ তখন শারমিন বলে, ‘আমি বাচ্চাদের ছাড়া থাকতে পারবো না।’ এই বলে শারমিন দ্বিতীয় তলায় একটি বাসায় যায়।

জামাল মিতুকে একা পেয়ে আবারো বলে, ‘তুমি চলে যাও। তোমাকে বিয়ে দেব। গার্মেন্টে চাকরি দেব। আমাকে ছেড়ে দাও।’তখন মিতু বলে, ‘না, আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না।’ এর জবাবে জামাল বলে, ‘তাহলে তুমি কী চাও?’ উত্তরে মিতু বলে, ‘আমি একটা জিনিস চাই। তা একটু পরেই বলবো। এই বলে এদিক-ওদিক তাকায়। পাশে সেলেরেসটা দেখতে পেয়ে হাতে তুলে নেয়। পাশে খাটে শুয়ে থাকা জামালের দিকে সজোরে ছুড়ে মারে। তার বাম কানের উপরে মাথায় আঘাত করে।

এতে জামালের দু’ইঞ্চির মতো ফেটে যায়। রক্ত ঝরতে থাকে। এই আঘাতের পর সে একই অবস্থায় ছিল। কোনো আকুতি বা নড়াচড়া হয়নি। চোখ খোলা অবস্থায়ই কিছুক্ষণের মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে জামাল। আর মিতু ছোটাছুটি করেনি। চেষ্টা করেনি পালানোর। এরপর উপর থেকে শারমিন এসে তাকে এ অবস্থায় দেখে পুলিশে খবর দিলে লাশ উদ্ধার করা হয়। আটক করা হয় মিতুকে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn