সুনামগঞ্জ জেলার খরস্রোতা নদী গুলোতে এক সময়ে কার্গো-জাহাজ চলাচল করলেও এখন আর ঐ নদীগুলোতে ‘ঘটি’ও ডোবেনা। পৌষ মাসের প্রথম থেকেই ভারতের মেঘালয়ের পাহাড় থেকে উৎপত্তি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ উপজেলা দিয়ে প্রবহমান সীমান্ত নদী জাদুকাঁটা, রক্তি, বৌলাই ও পাটলাই এই চার নদীতে ভারত হতে প্রবাহিত বিভিন্ন পাহাড়ি ছড়া দিয়ে নেমে আসা বালিমাটি ও পলি জমে নদীর উৎস মুখ ভরাট হয়ে যাওয়ায় ১৩৬ কিলোমিটার নৌ-পথজুড়ে দেখা দিয়েছে চরম নাব্যতা সংকট।

বৈশাখ মাসেই নদীগুলো দিয়ে আকস্মিক পাহাড়ি ঢল ও অকাল বন্যার পানিতে সুনামগঞ্জের হাজার হাজার একর বোরো ফসল পানির নিচে তলিয়ে যায়। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে নদীগুলোতে দেখা দেয় চরম পানি সংকট। গত ২০১০ সালের ১০ নভেম্বর তাহিরপুরে মহা কৃষক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় বিভিন্ন সমস্যা সহ নদীগুলো ড্রেজিংয়ের আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়নে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

যাদুকাঁটা নদীর বুকে বর্ষা মৌসুমে কয়েক হাজার বারকি শ্রমিক বালি-পাথর উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করলেও যাদুকাঁটা নদীর ২৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বুকে এখন অসংখ্য চর জেগে উঠেছে। নাব্যতা সংকটের কারণে কার্ত্তিক মাস হতেই নদী পথে নৌ-চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে ফলে বালি পাথর ব্যবসায়ীরা পুরো ছয় মাস বসে থাকতে হয় বর্ষার অপেক্ষায়। প্রতি বছর সরকার যাদুকাটা নদী হতে বালি ও পাথর থেকে কয়েক কোটি রাজস্ব আদায় করলেও নদী খনন করে এর গভীরতা বাড়াতে সরকারের কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি।

১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রক্তি নদী পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ায় যাদুকাঁটা ও সুরমা নদীর সঙ্গে নৌ-পথের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় একই সময়ে। এতে করে এখান কার বালিপাথর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সহস্রাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। তাহিরপুরও জামালগঞ্জ উপজেলাকে সংযোগকারী ৫৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বৌলাই নদীতে পলি জমে নদীর বুক পানি শূন্য হয়ে পড়ায় রীতিমত ফুটবল খেলার মাঠে পরিণত হয় কার্ত্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে।

ট্যাকেরঘাট বড়ছড়া শুল্ক স্টেশন থেকে কয়লা পরিবহনের জন্য কয়লা ব্যবসায়ীদের একমাত্র নির্ভর ৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পাটলাই নদীর উৎস মুখে পানি না থাকায় কয়লা পরিবহনে দেখা দেয় নানা সমস্যা ও বিড়ম্বনা। নাব্যতা সংকটের কারণে নৌ-জটের সৃষ্টি হয় এবং নৌ-জটকে কেন্দ্র করে পাটলাই নদীতে শুরু হয় বেপরোয়া চাঁদাবাজি।

তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি হাজী আলকাছ খন্দকার জানান, বড়ছড়া শুল্ক স্টেশনকে ঘিরে প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পাটলাই নদী দিয়ে যেখানে ইঞ্জিন চলিত ট্রলার ও কার্গোতে করে প্রতিদিন হাজার হাজার টন কয়লা ও চুনাপাথর সারা দেশে সরবরাহ করে থাকে সেই নদীর উৎস মুখেই পাহাড়ি ছড়া দিয়ে নেমে আসা বালি ও পলিমাটি পড়ে ভরাট হয়ে প্রতি বছরেই পানি শূন্য হয়ে নৌজটের সৃষ্টি হয়ে থাকে।

সুনামগঞ্জ ১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হুসেন রতন বলেন, বর্তমান সরকার দেশ ব্যাপী নদী-খাল খনন, সংস্কার ও দখলকৃত নৌপথ পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করার সাথে সাথে ভাটি অঞ্চলের নদীগুলোর খনন, সংস্কার, নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ইতি মধ্যে সরকার গুরুত্ব দিয়েছে। হাওরের ফসল রক্ষা করতে হলে ভারত হতে প্রবাহিত বিভিন্ন নদী ও ছড়া গুলোকে খনন করা জরুরী হয়ে পড়েছে।আশা করি অচিরেই হাওর বান্ধব আওয়ামীলীগ সরকার নৌ-পথের নাব্যতা সংকটের বৃহত্তর সমস্যা নিরসনে অচিরেই কাজ শুরু করবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn