সিলেট সংবাদদাতা: ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচন নিয়ে সিলেটবাসীর মধ্যেও আগ্রহের কমতি নেই। বিশেষ করে সিলেটের বিশ্বনাথের মেয়ে রুশনারা আলীকে নিয়েই আলোচনা মুখে মুখে। ব্রিটেনের বাঙালি অধ্যুষিত ‘বেথনালগ্রিন বো’ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হওয়ার জন্য টানা তৃতীয়বারের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি।

রুশনারা আলী সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের ভূরকি গ্রামের প্রবাসী আফতাব আলী ও রানু দম্পত্তির দ্বিতীয় কন্যা। এবারের নির্বাচনে জয়ী হলে প্রথম বাঙালি হিসেবে বিদেশের মাটিতে টানা তিনবার এমপি নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড গড়বেন সিলেটের কন্যা রুশনারা। আবার এমপি নির্বাচিত হয়ে দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনবেন রুশনারা, এই আশায় বুক বেঁধে আছেন তার জন্মস্থান বিশ্বনাথবাসী। রুশনার আলীর প্রচার-প্রচারনায় ব্যস্ত সময় পার করেছেন ব্রিটেনে বসবাসরত সিলেটি তথা তার জন্মস্থান বিশ্বনাথের মানুষ।

বিশ্বনাথের লামাকাজি ইউনিয়নের ব্যবসায়ী সাদিক উদ্দিন বলেন, ‘আমরার ফুরি (মেয়ে) রুশনারা হিরিয়া (আবার) জিতিবো। এবার জিতলে তাইর (তার) হ্যাটট্রিক হইবো। তারাবির নামাজের পরে মসজিদে দোয়া অইছে (হয়েছে)।’

রুশনারা আলী শুধু সিলেটের গর্ব নয় সে পুরো বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে উল্লেখ করে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা শতভাগ আশাবাদী রুশনারা আলী এবারও বিশাল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবেন। দেশের বাইরে কোনও বাংলাদেশি নির্বাচন করে বিজয়ী হন সেটা আমাদের জাতির জন্য অনেক বড় গৌরবের বিষয়। আর রুশনারা আলী সিলেটের’ই মেয়ে, তাকে নিয়ে আমাদের গর্বের শেষ নেই।’

জানা গেছে, ‘বেথনালগ্রিন-বো’ নির্বাচনি আসনটি লেবার পার্টির অন্যতম ঘাঁটি। ২০০৫ সালের নির্বাচনে রেসপেক্ট পার্টির জর্জ গ্যালাওয়ে ছাড়া আর কোনও প্রার্থী এ আসনে বিজয়ী হতে পারেননি। আর আসনটি পুণরুদ্ধারের জন্য ওই বছর লেবার পার্টি প্রথম কোনও বাঙালি প্রার্থী হিসেবে রুশনারা আলীকে মনোনয়ন দেয়। রুশনারা আলী লেবার পার্টির মর্যাদার সেই আসনটি পুনরুদ্ধার করেন। ২০১০ সালের ৬ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ২১ হাজার ৭৮৪টি ভোট পেয়ে বৃটেনে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এমপি নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৫ সালের ৮ মে বৃটেনের জাতীয় নির্বাচনে দ্বিতীয় বারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়েছেন রুশনারা আলী। অ্যান্ড বো আসন থেকে লেবার পার্টির প্রার্থী রুশনারা আলী ৩২ হাজার ৮৮৭ ভোট পান। তার পক্ষে ভোট পড়েছিল ৬১ শতাংশ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির ম্যাথিউ স্মিথ পেয়েছিলেন ৮ হাজার ৭০ ভোট। রুশনারা আলী ২৪ হাজার ৮১৭ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন।

এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর রুশনারা আলী লেবার পার্টির ছায়া মন্ত্রিসভায় ‘শিক্ষা ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক’ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি পরামর্শক সংস্থা ইয়ং ফাউন্ডেশনের সহযোগী পরিচালকের দায়িত্বও পালন করছেন।

১৯৭৫ সালের ১৪ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন রুশনারা আলী। তার ডাক নাম স্বপ্না। বাবার বাড়ি ও মামার বাড়ি পাশাপাশি হওয়ার কারণে রুশনারা আলীর ছেলেবেলা কেটেছে নানী মরহুমা গুলেস্তা বিবির সান্নিধ্যে। মাত্র ৭ বছর বয়সে উপজেলার ভূরকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করার সময় বাবা-মায়ের সঙ্গে ব্রিটেনে পাড়ি জমান রুশনারা। সেখানে যাওয়ার পর তিনি যুক্তরাজ্যের লন্ডনের মালবেরি স্কুল ও টাওয়ার হ্যামলেটস কলেজে লেখাপড়া শেষে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতি, অর্থনীতি ও দর্শনে ডিগ্রি অর্জন করেন। রুশনারা আলী ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ছাড়াও পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও কাজ করেছেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn