হাতে লেখা চিঠি দুনিয়ার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে পৌঁছে যায়। তবে আর হয়তো বেশিদিন এই চিঠি এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাওয়া-আসা করবে না। আর হয়তো কখনও চিঠির মাধ্যমে কোনো প্রেমিক তার প্রেমিকাকে বলবে না, প্রিয় সুরভী, গতকাল তোমার চিঠি পেয়েছি। তোমার অনিন্দ্য সুন্দর হাতের লেখা কতদিন পর পেলাম। মা তার দূরে অবস্থানরত প্রাণপ্রিয় সন্তানকে চিঠির মাধ্যমে বলবে না, বাবা, ঠিকমতো লেখাপড়া করবি। নিজের শরীরের প্রতি খেয়াল রাখতে ভুল করিস না।
চিঠিপত্র আদান-প্রদানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রটির নাম ডাকপিয়ন। খাকি রঙের পোশাকে টুং-টাং বেলের শব্দে সবার দৃষ্টি কেড়ে নেয় রানার। প্রবাসে থাকা ছেলের পাঠানো টাকা, নববধূর কাছে লেখা স্বামীর চিঠি ইত্যাদি মানুষের দোরগোড়ায় নির্ভুলভাবে পৌঁছে দেয় ডাকপিয়ন। রাতদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করার পর মাস শেষে যে সামান্য কিছু টাকা মাসোয়ারা পায়, তা দিয়েই ডাকপিয়ন পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবন চালায়। ডাকপিয়ন যাতে তার কাজটা দ্রুত গতিতে করতে পারে সেজন্য দরকার হয় ডাকঘরের। এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত বাংলাপিডিয়ার তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে ডাকঘরের সংখ্যা ৯ হাজার ৮৮৬। ডাকবিভাগকে ডিজিটালাইজড করার নানা উদ্যোগ সরকার নিলেও পরিকল্পনা অনুসারে এর বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বিজ্ঞানের কল্যাণে গোটা বিশ্ব আজ সবার হাতের মুঠোর মধ্যে চলে এসেছে। আমরা আজ খুব দ্রুত পৃথিবীর অপর প্রান্তের খবরাখবর জানতে পারছি। কম্পিউটার, মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট-ফেসবুক আবিষ্কার হওয়ার পর ডাকপিয়নরা প্রায় বেকার হয়ে পড়েছে।
বলতে গেলে এখন আর কেউ চিঠি লিখে তার মনের ভাব প্রকাশ করে না। কোনো খবর জানা বা জানানোর জন্য চিঠির ওপর ভরসা করে কেউ বসে থাকে না। কারণ তা ইন্টারনেট তথা ইমেইলের মাধ্যমেই সবাই জেনে নেয়। মাত্র কয়েক সেকেন্ডে কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে খবর পৌঁছে দেয়া যায়। এছাড়া প্রেমিক-প্রেমিকারা তাদের মনের কথাগুলো লিখে মোবাইলে এসএমএস করে পাঠিয়ে দেয়। সেকেন্ডের মধ্যেই কাক্সিক্ষত বার্তাটি আমরা আমাদের মোবাইলের ইনবক্সে পেয়ে যাচ্ছি। এছাড়া আমাদের ফেসবুকের বন্ধু লিস্টে যারা আছে, তাদের সবকিছুই ফেসবুকের মাধ্যমে আমরা জানতে পারছি প্রতি মুহূর্তে। কবে কোথায় কোন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে, সেটা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে সবাইকে জানিয়ে দিতে পারছি। কে কখন অসুস্থ হচ্ছে, কোথায় বিপদে পড়েছে, সবকিছু মোবাইলের মাধ্যমে সবাইকে জানিয়ে দিতে পারছি। এখন আর আমরা কোনো খবর জানার জন্য ডাকপিয়নের পথের পানে চেয়ে থেকে সময় নষ্ট করি না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, চিঠি যুগের সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে অচিরেই।

সাদত আল মাহমুদ : নাট্যকার

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn