সুনামগঞ্জের হাওরবাসীর মাঝে অতিথি আপ্যায়নে রয়েছে সুখ্যাতি। রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্যের যা চির ভাস্বর হয়ে আছে বংশ পরমপরা ধরে। আপন মহিমায় হাওরপাড়ের মানুষ গুলো সকল প্রতিকুলতা কাটিয়ে সবসময় উদ্ভাসিত থাকে। এবার অকালে একের পর এক হাওর ডুবে যাওয়ায় জেলার ৯০শতাংশ বোরো ধান পানিতে তুলয়ে গেছে। জেলার দিরাই,শাল্লা,জগন্নাথপুর,ধর্মপাশা,জামালগঞ্জ,দোয়ারা বাজার,ছাতক,বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলা সহ ১১টি উপজেলার দ্বীপ সাদৃশ্য গ্রাম গুলোয় রয়েছে গ্রামীন জীবন-যাপনে গরিব-ধনী সকল স্থরের লোকজনের মাঝে চিরা-চরিত সামাজিক,সাংস্কৃতিক,আতিথেয়তা,চাল-চলন,স্বতন্ত্র ঐতিহ্যের বৈশিষ্ট্য ও সাফল্যের সুখ্যাতি। কিন্তু বার বার হাওরপাড়ের কৃষক পরিবার গুলো আকাল বন্যায় বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নেই কোন আনন্দ উচ্ছাস। এখন নেই হাতে নগদ টাকা কড়ি। শুন্য গোলা,শুন্য গোয়াল,শুন্য পকেট তাই নেই আগের মত রমজান মাসের শুরুতেই বিভিন্ন রখমের ইফতারির আয়োজন নিয়ে মেয়ের জামাই বাড়িতে ধাপে ধাপে যাওয়ার রীতি। প্রতি বছরেই হাওরাঞ্চলের ঐতিহ্য পবিত্র রমজান মাসে মেয়ের শশুর বাড়িতে ইফতারি নিয়ে যাওয়ায় রেওয়াজ। বর্তমানে চিরাচরিত পুরোনো এ রীতি এখন ম্লান হয়ে গেছে।

ইফারির আয়োজন রমজানের প্রথম দশ দিনে একবার ও পরের দশ রমজানের একবার ছেলে,মেয়ে বা খুব নিকট আতœীয় মাধ্যমে সকল আয়োজন সম্পন্ন করেন হাওর পাড়ের কৃষক পরিবারে মা,বাবারা। আনুষ্টানিক বা অনানুষ্টানিক ভাবে মেয়ের জামাই বাড়িতে রমজান মাসেই ইফতারির দেয়ার রীতি আবহমান কাল ধরে চলে আসছে। হাওরাঞ্চলে মেয়ের জামাই বাড়িতে যাওয়ার জন্য শহরের নামী-দামি ধনাঢ্য পরিবারের লোকজনদের মত আপ্যায়ন না করতে পারলেও হাওর পাড়ের তৈরী করা নানান সব পিঠা,পায়েস সহ বিভিন্ন ফলাদি নিয়ে হাজির হয়। এই ইফতারির আয়োজন কয়েক দফা হয়। রমজানের শেষ দশ দিনে মধ্যে মেয়ের বাবা শেষ সাপ্তাহ ইফতারির আয়োজন নিয়ে হাজির হয়। আর এই সময় মেয়ের শশুর বাড়ির সবাইকে দাওয়াত দেয়। আর এর পর পরেই মেয়ের জামাইও শশুর,শাশুড়ি,নানা-নানী,দাদা,দাদি সহ বাড়ির সবার জন্য ইফতারি,নতুন কাপড় সহ ঈদের দাওয়াত দেওয়ার জন্য হাজির হয়। মেয়ের জামাই আসায় আনন্দের বন্যা বয়ে যায় পরিবারের সবার মাঝে। হাওর পাড়ের লোকজন জানান,এবার ত সব শেষ। হাওর ডুবে যাওয়ায় এখন মেয়ের শশুর বাড়ি যাওয়া খুবেই কষ্টের হয়ে গেছে। গরিব হলেও প্রতি বছর রমজান মাসে আমরা হাওর পাড়ের মেয়ের মা,বাবারা মেয়ের সম্মান ও খুশির জন্য তার শশুর বাড়িতে ধুমদামের সাথেই ইফতারি নিয়ে যাই। সাথে থাকে অনেক আয়োজন। আবার কোথাও কোথাও মেয়ের জামাই,মেয়ের শশুড়,শাশুড়ি মেয়ের জা,দের জন্য আলাদা করেও থালা সাজিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। নতুন বিয়ে হলে মেয়ের শশুড় বাড়ি একটু আলাদা করেই যাওয়া হয়। এসব আয়োজনে থাকে-মিষ্টি,জিলাপি,হান্দেশ,ছই পিঠা,চিতল পিঠা,তালের পিঠা সহ নানান রখমের পিঠা। এছাড়াও বিভিন্ন রখমের ফল,দামী ঈদ কাপড় সহ নানান আয়োজন।

এবার সব শেষ কি করব ভাবতে পারছি না। এক ফসলী বোরো ধান আমাদের এক মাত্র সম্পদ পর পর দু বছর ধরেই পানিতে তলিয়ে গেছে কি করে জীবন আর সংসার চলবে ভেবে পাই না। পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক পিযুস পুরকাস্থ টিটু সহ জেলার সচেতন মহল মনে করেন-এই সময় হাওরবাসীরা মহা আনন্দের সাথে মেয়ের শশুর বাড়িতে জাকঁজমকপূর্ন ভাবেই ইফতারি নিয়ে যেত কিন্তু এবার তা হয় নি। এই বেকার জনগোষ্টীকে সম্পদে পরিনত করার জন্য মিল-কলখারকানা স্থাপন,কুটির শিল্পের সাথে যুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করলে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল হতে পারত অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখত এই হাওরবাসীরাই। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কারুজ্জামান কামরুল জানান-প্রতি বছরেই মেয়ের শশুর বাড়িতে ইফতারি নিয়ে যায় হাওরবাসী এবার তা হয় নি জাকঁজমক ভাবে অনেক পরিবার যায় নি মেয়ের শশুর বাড়িতে। এবার বোরো ফসল হানীর কারনে। যদি হাওরবাসীর জন্য এখানে বিকল্প কাজের ব্যবস্থা,শিক্ষা,স্বাস্থ্য,যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে হাওরবাসীরা তাদের জীবন মানের উন্নয়ন গঠাতে সক্ষম হত।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn