রাজীব চৌধুরী একজন তরুণ কবি ও প্রকাশক। পুরো নাম জাহিদুল হক চৌধুরী রাজীব। পারিবারিকভাবে সাহিত্যচর্চার আবহ দেখে বইয়ের প্রতি তার ভালোলাগা তৈরি হয়। রাজীবের নানা নুরুল হক ছিলেন বৃহত্তর সিলেটের কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের প্রতিষ্ঠাতা। তার মা লেখালেখি করেন। এক খালা প্রতিষ্ঠিত শিশু-সাহিত্যিক। একসময় লিটলম্যাগ সম্পাদনা করে এ পথে পা বাড়ানো সুনামগঞ্জের ছেলে রাজীব হয়ে উঠছেন একজন সফল ও সৃজনশীল প্রকাশক।

রাজীব চৌধুরীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নাম চৈতন্য প্রকাশনী। এরমধ্যে দু’বার অমর একুশে বইমেলায় অংশ নিয়ে সুনাম কুড়িয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। চৈতন্যর গল্পটা জানা গেল রাজীবের কাছ থেকে। ২০০৬ সালে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে বাংলায় অনার্সে পড়ার সময় রাজীব ‘চৈতন্য’ নামে লিটলম্যাগ সম্পাদনা শুরু করেন। নিয়মিত বের হতো এটি। সেসময় থেকেই বিভিন্ন পর্যায়ের লেখকদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু। রাজীব জানতেন না তিনি একসময় প্রকাশক হবেন। ২০১৩ সালের ঘটনা। এরইমধ্যে রাজীব তার লিটলম্যাগের লেখক স্থানীয় কয়েক জনের বই ছাপানোর কাজ করেন। ২০১৪ সালে সিলেটে অফিস নেন। এভাবেই পেশাদারিত্ব শুরু। মাঝে একবার একুশে বইমেলায় লিটলম্যাগ সম্পাদকদের সঙ্গে বসার জায়গা পান। পরেরবার মূল মেলায় স্টল পেলেন। ২০১৭ সালের বইমেলাতেও চৈতন্য বড় আয়োজন নিয়ে অংশ নিয়েছিল। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লেখকরা চৈতন্যের ডাকে সাড়া দিয়েছেন।রাজীব বলেন, ‘চৈতন্যের শুরুটা সিলেট-কেন্দ্রিক হলেও দেশের নবীন ও প্রবীণ লেখকরা এখানে বই প্রকাশে আগ্রহ দেখিয়েছেন, দেখাচ্ছেন।’ কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, অনুবাদ, শিশুসাহিত্যের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই প্রকাশে চৈতন্য আন্তরিক। মানসম্পন্ন বই প্রকাশ করতে তারা কাজ করছেন। তবে তরুণদের বই-ই করছেন বেশি।

জানা গেল, চৈতন্যের সঙ্গে একদল লেখকের একটা প্যানেল আছে, যারা কোনো সম্মানী ছাড়াই কাজে সহযোগিতা করেন। রাজীব বললেন, ‘তরুণ লেখকদের বইপ্রকাশ করার ব্যাপারে বড় প্রকাশকদের অনীহা রয়েছে। এতে অনেক লেখকরাই হতাশ হন। এমন লেখকদের বই প্রকাশ করে পাঠকের কাছে নিয়ে যাচ্ছে চৈতন্য।’ এখন পর্যন্ত চৈতন্যের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা দুইশ’র বেশি। প্রয়াত কবি সৈয়দ শামসুল হক থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের অনেক খ্যাতিমান লেখকের বই আছে এই তালিকায়। এখন পর্যন্ত কোনো বাধা বা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে কি না জানতে চাইলে রাজীব বলেন, ‘নতুন লেখকদের সৃজনশীল বইয়ের পাঠক কম। এছাড়া বিপণনে কখনো কখনো সমস্যার পড়তে হয়। তবে চৈতন্যের যাত্রা এখন পর্যন্ত সফল।’ তিনি আরও জানান, তার ভবিষ্যত্ পরিকল্পনা হলো কাজের পরিধি আরও বাড়াতে চান। চৈতন্যকে জাতীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত প্রকাশনী হিসেবে দেখতে চান।

সৈয়দ তাওসিফ মোনাওয়ার

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn