কানাডার ফেডারেল সরকার বাংলাদেশে বসবাসরত সালমান হোসেনকে গ্রেপ্তারে কার্যকর ও পর্যাপ্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যদিও অন্টারিওর ওই ব্যক্তির ইহুদিদের বিরুদ্ধে গণহত্যায় উস্কানি দেয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। কানাডীয় রক্ষণশীল বা টোরি রাজনীতিকরা এ অভিযোগ তুলেছেন। উল্লেখ্য, কানাডার প্রধান বিরোধী দল কানজারভেটিভ পার্টি ২০০৬ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত কানাডার ক্ষমতায় ছিল। ৩৩৮ সদস্যের সংসদে ৯৯টি এবং ১০৫ সদস্যের সিনেটে তাদের ৩৮টি আসন রয়েছে।   বিরোধীদলীয় জননিরাপত্তা বিষয়ক ভাষ্যকার টনি ক্লিমেন্ট বলেছেন, ‘আমি অবশ্যই বিশ্বাস করতে চাইছি যে, এ সমস্যার সমাধানে ফেডারেল সরকারের উচিত ছিল অনেক বেশি মাত্রায় সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করা। এই ইস্যুতে এটাই হলো কনজারভেটিভ দলের অবস্থান।’
শুক্রবার এক বিবৃতিতে কানাডা গত ৯ই জুন ন্যাশনাল পোস্টকে বলেছেন, তারা এটা শুনে বিক্ষুব্ধ হয়েছেন যে, ৩২ বছর বয়স্ক সালমান হোসেন একটি গণহত্যায় উস্কানি দেয়ার অভিযোগে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অভিযুক্ত ব্যক্তি। অথচ দীর্ঘ সাত বছর ধরে সবার ধরা ছোঁয়ার বাইরে তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার মাইকেল মুস্তিম বলেছেন, এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, মি. হোসেন বাংলাদেশে অবাধে বিচরণ করছেন। এবং তিনি কফির মগে আয়েশ করে চুমুক দিচ্ছেন। তিনি প্রশ্ন রাখেন যে, এই ঘটনা আমাদের জন্য কি বার্তা বহন করে এনেছে? তাই কানাডার উচিত হবে বিষয়টি সরকারের কাছে তোলা। কানাডার দি ন্যাশনাল পোস্ট সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠে একটি বিলাসবহুল রেস্তরাঁয় হোসেনকে চিহ্নিত করেছে। এবং গত সপ্তাহান্তে একটি কফি শপের বাইরে তার আলোকচিত্র তুলতে সক্ষম হয়েছে। তার বিরুদ্ধে একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি থাকা সত্ত্বেও তাকে অবাধে ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে।
২০১০ সালের জুলাই মাসে অন্টারিওর প্রাদেশিক পুলিশ ইহুদিদের বিরুদ্ধে একটি গণহত্যায় মদত দেয়ার দায়ে ওই সাবেক টরেন্টো বাসিন্দাকে অভিযুক্ত করেছে। তার বিরুদ্ধে দুই কাউন্টের অভিযোগ আনা হয়েছে। একই সঙ্গে ইহুদিদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর দায়ে অতিরিক্ত তিন কাউন্ট অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগ অনুমোদিত হওয়ার আগেই তিনি দেশ ছেড়ে চলে যান। যদিও একটি ইন্টারপোলের রেড নোটিশে বিশ্বব্যাপী তার অবস্থান শনাক্ত এবং তাকে গ্রেপ্তারের আহ্বান জানানো বহাল ছিল। কিন্তু বাংলাদেশি কর্মকর্তারা বলেছেন, কানাডা কখনো নির্দিষ্টভাবে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে বলেনি। ঢাকার পত্রিকার রিপোর্ট অনুসারে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, কানাডীয় সরকার এখনো পর্যন্ত তার গ্রেপ্তার কিংবা প্রত্যাবাসনে কোনো অনুরোধ জানায়নি। তিনি আরো বলেছেন, হোসেন বাংলাদেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছিলেন। গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা এই বিষয়টি ইতিমধ্যে বিচার মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করেছে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের কোনো মুখপাত্র এই বিষয়ে এই যুক্তিতে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন যে, কোনো ব্যক্তিকে প্রত্যর্পণ করার অনুরোধ করা হলে সে বিষয়টি এক রাষ্ট্রের সঙ্গে অন্য রাষ্ট্রের গোপনীয় যোগাযোগের বিষয় হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে।
মি. মস্তিন বলেছেন, ‘আমরা কানাডার আইন ও বিধি-বিধান বিষয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে হেইট ক্রাইম সংক্রান্ত বিধি-বিধানের বিষয়ে আমরা একথা জানিয়ে দিতে চাই যে, এসব বিধি-বিধান যেভাবে প্রয়োগ করা উচিত, সেভাবে তা প্রয়োগ করা হচ্ছে না। আমি শুধু এটাই বলতে চাই যে, সালমানের এই ঘটনা আমাদের চোখে আঙ্গুল দেখিয়ে দিচ্ছে যে, কাগজে কলমে হেইট ক্রাইম দণ্ডণীয় থাকলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ নেই। কানাডা এবং বাংলাদেশের মধ্যে কোনো বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি নেই। যদিও সালমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ যখন ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন আরসিএমপি’র জ্যেষ্ঠ অপারেশন কর্মকর্তা বলেছিলেন, তারা তার গ্রেপ্তার দেখতে চান। এবং তাকে বিচারের জন্য কানাডায় ফিরিয়ে আনবেন।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সালমান হোসেন ইহুদিদের বিরুদ্ধে অনলাইনভিত্তিক এক্সটারমিনেশন প্রোগ্রাম বা নির্মূল কর্মসূচি বাস্তবায়নে উস্কানি দিয়ে চলছিলেন। গত সেপ্টেম্বরে এক ভিডিওতে তিনি আইএসের প্রতি ইসরাইল এবং ইহুদিদের টার্গেট করার আহ্বান জানান। ইউটিউব থেকে ভিডিওটি অপসারণ করা হয়েছে। মি. ক্লিমেন্ট বলেছেন, এ পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে যা যা করা হয়েছে তা যথেষ্ট নয়। এটা একটি মারাত্মক বিষয়। তাকে অবশ্যই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। এবং আমাদের দিক থেকে এটাই বলবো যে, সালমানের বিরুদ্ধে আরো অনেক কিছু করা যেতে পারে এবং আরো অনেক কিছুই করা উচিত।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn