সদ্য কেনা বাসার ড্রাইভওয়েতে দুর্বৃত্তের গুলিতে প্রাণ গেল বাংলাদেশী মোস্তাফিজুর রহমানের। ৪৮ বছর বয়েসী এই বাংলাদেশির বাড়ি জামালপুর জেলা সদরে। ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের বাংলাদেশী অধ্যুষিত লসএঞ্জেলেস সিটি থেকে ১৮০ কিলোমিটার দূর বেকার্সফিল্ড সিটিতে দুই পুত্র, এক কন্যা এবং স্ত্রীসহ বাস করছিলেনবেকার্সফিল্ড তিনি।  ১২ জুন সোমবার ভোর পাঁচটায় তার লাশ তার রক্তাক্ত নিথর দেহ অবিস্কার করেন তার স্ত্রী বাসার সামনে ড্রাইভওয়েতে।আর্তচিৎকার করে পুলিশকে ফোন করেন মিসেস মোস্তাফিজ। এ্যাম্বুলেন্সসহ পুলিশ এতে মোস্তাফিজকে নিকটস্থ হাসপাতালে নেয়ার পর জরুরী বিভাগের কর্মকর্তারা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। প্রাথমিক তদন্তে চিকিৎসকরা জানান যে, তার বাম বুকে ৮টি বুলেট বিদ্ধ হয়েছে। অর্থাৎ বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করা হয়েছে পরপর ৮ বার। এসব তথ্য জানান মোস্তাফিজের বন্ধু লসএঞ্জেলেস প্রবাসী কামরুল ইসলাম শিপন। সম্প্রতি তিনি ক্রয় করেন এই বাড়ি এবং মাসখানেক আগে উঠেছিলেন। এ উপলক্ষে সোমবারই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছিলেন মোস্তাফিজ।
জামালপুরের সন্তান মোস্তাফিজ ডিভি লটারিতে জয়ী হয়ে ২ পুত্র, এক কন্যা এবং স্ত্রীসহ ২০১০ সালে লসএঞ্জেলেসে এসেছিলেন। বছরখানেক পরই তিনি বেকার্সফিল্ডে ‘আমেরিকান এতক্সপ্রেস ট্যাক্সি’ নামক একটি ট্যাক্সি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। খুব দ্রুত সেটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। তিনি নিজেও ট্যাক্সি চালাতেন। রাতের শিফটে কাজ করে প্রতিদিন ভোর চারটার দিকে ঘরে ফিরতেন। সোমবার নির্ধারিত সময়ে তিনি ঘরে ফিরে না আসায় তার স্ত্রী ঘরের বাইরে এসে দেখেন তার গাড়ি পার্ক করা এবং তার লাশ ড্রাইভওয়েতে পড়ে আছে।
এই সিটিতে শিখ সম্প্রদায়ের লোক বেশী। বাংলাদেশী ২০/২৫টি পরিবার বাস করছেন। মোস্তাফিজুরের ট্যাক্সি কোম্পানীর ঈর্ষনীয় সাফল্য দেখে কেউ প্রতিহিংসাপরায়ন হয়ে তাকে এমন নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে কিনা, সে গুঞ্জনও রয়েছে। কারণ, ব্যক্তিগতভাবে তিনি ছিলেন খুবই অমায়িক। টার্গেট করেই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রবাসীদের ধারণা। তবে এখন পর্যন্ত হত্যার কারণ উদঘাটনে সক্ষম হয়নি পুলিশ। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারকে জানানো হয়েছে যে, ঘাতক গ্রেফতারে তারা তৎপর রয়েছেন। লসএঞ্জেলেস কম্যুনিটি লিডার মমিনুল হক বাচ্চু এ ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে এ এলাকায় দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হলেন ৩ বাংলাদেশী। মোস্তাফিজুর রহমানের কন্যা এবারই হাই স্কুল গ্র্যাজুয়েশন করেছেন। দুই পুত্র যাচ্ছে হাই স্কুলে। স্ত্রী কাজ করেন স্থানীয় একটি হাসপাতালে, নার্স হিসেবে। যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগে মোস্তাফিজুর এ্যাকনি ল্যাবরেটরির আঞ্চলিক ম্যানেজার ছিলেন। মরহুমের জানাযা অনুষ্ঠিত হবে ১৬ জুন শুক্রবার বাদ জুমআ ডাউন টাউন মসজিদে। একইদিন বিকেলে তাকে স্থানীয় মুসলিম গোরস্তানে দাফন করা হবে। শিপন তার আত্মার মাগফেরাত কামনায় সকলের দোয়া চেয়েছেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn