সাঙ্গাকারা হতে পারবেন ‘স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান’ মুশফিক?
মুশফিকের মতো কুমার সাঙ্গাকারাও ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে উইকেটকিপার কাম ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছেন। শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন এই দ্বৈত ভূমিকাতেই। তবে এক সময় দলের ব্যাটিংয়ের কথা ভেবে সাঙ্গাকারা গ্লাভসজোড়া ছেড়ে হয়ে যান শুধুই স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান। নতুন এই পরিচয়ে সাঙ্গাকারা নিজেকে নিয়ে যান অন্য উচ্চতায়। সাঙ্গাকারা ক্যারিয়ারে ১৩৪ টেস্টে করেছেন ৫৭.৪০ গড়ে ১২০০০ রান। এর মধ্যে উইকেটকিপার হিসেবে খেলেছেন ৪৮টি টেস্ট। তাতে ৪০.৪৮ গড়ে করেছেন ৩১১৭ রান। সেঞ্চুরি ৭টি। এর মধ্যে একটি মাত্র ডাবল সেঞ্চুরি। সেখানে স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে সাঙ্গাকারা ৮৬ টেস্টে করেছেন ৯২৬৩ রান, গড় ঈর্ষণীয় ৬৬.৭৮! শুধু তাই নয়, ক্যারিয়ারের সব বড় ইনিংসগুলোই বলতে গেলে সাঙ্গাকারা খেলেছেন স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে। ক্যারিয়ারের ৩৮টি সেঞ্চুরির ৩১টিই স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যানরূপে। যার মধ্যে ১০টি ডাবল সেঞ্চুরি! একমাত্র ট্রিপল সেঞ্চুরিটিও করেছেন এই ভূমিকাতেই!
সেই সাঙ্গাকারার দলের বিপক্ষে সিরিজ দিয়েই শুরু হচ্ছে নতুন রূপের মুশফিকের যাত্রা! অবশ্য একেবারেই নতুন নয়। ক্যারিয়ারের ৫২টি টেস্টের মধ্যে ৫টিতে কিপিং করেননি মুশফিক। এর মধ্যে দুটিতে অবশ্য কিপিং করেননি চোটের কারণে। সেই দুই টেস্টে কিপিং করেছেন লিটন দাস। এবারও তার গ্লাভসজোড়া উঠতে যাচ্ছে সেই লিটন দাসের হাতেই। ঘটনাক্রমে বলতেই হয়, স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে সেই ৫ টেস্টে মুশফিকের পারফরম্যান্স কিপার কাম ব্যাটসম্যান মুশফিকের পারফরম্যান্সের চেয়েও বিবর্ণ। এই ৫ টেস্টে ১৭ গড়ে করেছেন মাত্র ১১৯ রান! একটি মাত্র হাফসেঞ্চুরি। তবে সেটা ওই ৫ টেস্টের শেষটিতে। ২০১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে এক ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে খেলেছিলেন ৬৫ রানের ইনিংস।
তবে এই তথ্য দিয়ে বর্তমান মুশফিককে মাপলে চলবে না। বর্তমানের মুশফিক দলের সেরা ব্যাটসম্যান। অধিনায়কের গুরুদায়িত্বও কাঁধে। কিপিংয়ের ঝামেলা দূর হওয়ায় এই দুটো ভূমিকাতেই বেশি মনোযোগ দিতে পারবেন। শুধু তাই নয়, কিপিংয়ের ঝামেলা কাঁধে থাকায় দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হয়েও তাকে ব্যাট করতে হয়েছে ৬ নম্বরে! কিপিং ক্লান্তি দূর করতেই ব্যাট করেছেন নিচের দিকে। এখন থেকে নিশ্চিতভাবেই উপরের দিকে ব্যাটিং করবেন মুশফিক। তার একটা ড্রেস রেহার্সেলও হয়ে যাচ্ছে মোরাতুয়ায় শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট প্রেসিডেন্ট একাদশের বিপক্ষে দুইদিনের প্রস্তুতি ম্যাচে।
বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া প্রস্তুতি ম্যাচে ৪ নম্বরে ব্যাটিং করেছেন মুশফিক। ব্যাটিং অর্ডারে তার এই উন্নতিতে উলটপালট হয়েছে অন্যদের ব্যাটিং পজিশনও। ৪ নম্বরে ব্যাটিং করা মাহমুদউল্লাহ যেমন এদিন ব্যাটিং করলেন ৬ নম্বরে। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের পরিবর্তিত ব্যাটিং অর্ডার কেমন হয়, সেটা জানা যাবে টেস্ট মাঠে গড়ালেই। তবে আপাত ধারণা করে নেওয়াই যায়, প্রস্তুতি ম্যাচের ব্যাটিং ক্রমটা বজায় থাকবে টেস্টেও। প্রস্তুতি ম্যাচের ব্যাটিং ক্রমটা এমন-তামিম-সৌম্য ওপেনিংয়ে। ওয়ান ডাউনে মুমিনুল হক। চারে মুশফিক, পাঁচে সাকিব, ছয়ে মাহমুদউল্লাহ, সাত নম্বরে লিটন দাস। লিটনকে জায়গা দিতে বাদ সাব্বির রহমান।
মানে মুশফিকের কাঁধ থেকে কিপিং বোঝা কমানোয় ভাগ্য খুলছে লিটন দাসের, কপাল পুরেছে সাব্বিরের। তবে কার ভাগ্য খুলল, কার কপাল পুরল সেটা বিবেচনার বিষয় নয়। নির্ভার হয়ে মুশফিক নিজের ব্যাটিংয়ের কতটা উন্নতি করতে পারেন, সেটাই বড় কথা। মুশফিক প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবেন তো?