০১:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ

রিপোর্টার
  • সময় : ০৯:১১:০০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
  • / ৫৮ ভিউ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময়ের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে লোকবল নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও ক্রয় সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ শেষ করতে হবে। এছাড়া বিগত তিন বিতর্কিত নির্বাচনে যে সমস্ত কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের বাদ দিয়ে নির্বাচন করার বিষয়টিও খতিয়ে দেখতে বলেছেন সরকার প্রধান। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক এক বৈঠকে এসব নির্দেশনা দেন তিনি। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.), জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বকশ চৌধুরী, পুলিশের আইজি, বিজিবি’র ডিজি, কোস্ট গার্ড প্রধান, আনসারের ডিজি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘ দুই ঘণ্টার বৈঠক পরবর্তী রাত ৮টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে ডিসেম্বরের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে প্রায় ১৭ হাজার লোকবল নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। সেক্ষেত্রে তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া, প্রশিক্ষণ এ সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেক পাঁয়তারা হয় যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয় সেজন্য তিনি জানিয়েছেন এখন থেকে যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর হয়।তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় ৮ লাখ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য ডিউটি করবেন। সেক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে তাদের সকল প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করতে বলেছেন। আর ১৮ থেকে ৩৩ বছর বয়সীদের জন্য পৃথক ভোটার তালিকা এবং ভোটিং বুথ রাখার বিষয়ে যেন খতিয়ে দেখেন সেই নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্বাচনকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন হবে সেসব নিয়ে আলোচনা হয়। ৮ লাখ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে ৫ লাখ ৭০ হাজার আনসার এবং ১ লাখ ৪১ হাজার পুলিশ বাহিনীর সদস্য। ৪৭ হাজারের মতো ভোটিং কেন্দ্র থাকবে। এর মধ্যে ১৬ হাজারের মতো ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই তিনি এসব ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে কীভাবে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনটা হয় সে নির্দেশনা দিয়েছেন। এক্ষেত্রে পুলিশের বডি ক্যামেরা ও প্রত্যেক কেন্দ্র সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। এই সিসিটিভিগুলো যাতে মনিটরিং ঠিকমতো হয় সে বিষয়ে তিনি কাজ করতে বলেছেন। এছাড়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের কীভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখা যায় সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

শফিকুল আলম বলেন, আগে নির্বাচনের সময় ৪দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকতো সেটি এবার ৭দিন করা হচ্ছে। যাতে নির্বাচনের পরেও ভায়োলেন্স ঠেকানো যায়। আর নির্বাচনের আগে ডিসি, এসপি, ওসিদের বদলি করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এক থানার পুলিশ সদস্যদের অন্য থানায় দায়িত্ব দেয়া যায় কি না সে বিষয়েও নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। অন্যদিকে কোনো আসনে ব্যাপক অনিয়ম হলে সে আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে পুনরায় দেয়া যায় কি না সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, গত তিন নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসারসহ যে সমস্ত কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের বাদ দিয়ে নির্বাচন করার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এছাড়া সব কেন্দ্রে সিসি টিভি বসিয়ে জেলা, উপজেলাসহ কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচন মনিটরিং করা হবে যাতে অনিয়ম হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া যায়। এক্ষেত্রে ভোটারদের জন্য হটলাইন নম্বর চালু হবে। 

প্রেস সচিব বলেন, আগের তিন নির্বাচন ছিল মুখ দেখানো। আন্তর্জাতিকভাবে কোনো গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। তাই এবারের নির্বাচন স্বচ্ছ করতে সব ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কিছু ভিডিও ডকুমেন্টারি করে সেগুলো টেলিভিশন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। এছাড়া অর্ধেক ভোটার যেহেতু নারী তাদের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, আগের মতো এবারের নির্বাচনে ইন্টারনেট ধীর গতি করা নয়, বরং যেন ভালোভাবে সচল থাকে সে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মিডিয়ার ক্ষেত্রেও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা থাকতে যেগুলো নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করবে। আমরা চাই কেউ যেন মিডিয়ার নাম ব্যবহার করে দলীয় লোক কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠাতে না পারে। একই সঙ্গে পর্যবেক্ষণের নামে দলীয় লোক পাঠানোও বন্ধ হবে।

ব্রিফিংয়ে উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর ও সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহমদ উপস্থিত ছিলেন।

এই পোস্টটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ

সময় : ০৯:১১:০০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময়ের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে লোকবল নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও ক্রয় সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ শেষ করতে হবে। এছাড়া বিগত তিন বিতর্কিত নির্বাচনে যে সমস্ত কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের বাদ দিয়ে নির্বাচন করার বিষয়টিও খতিয়ে দেখতে বলেছেন সরকার প্রধান। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক এক বৈঠকে এসব নির্দেশনা দেন তিনি। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.), জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বকশ চৌধুরী, পুলিশের আইজি, বিজিবি’র ডিজি, কোস্ট গার্ড প্রধান, আনসারের ডিজি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘ দুই ঘণ্টার বৈঠক পরবর্তী রাত ৮টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে ডিসেম্বরের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে প্রায় ১৭ হাজার লোকবল নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। সেক্ষেত্রে তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া, প্রশিক্ষণ এ সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেক পাঁয়তারা হয় যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয় সেজন্য তিনি জানিয়েছেন এখন থেকে যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর হয়।তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় ৮ লাখ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য ডিউটি করবেন। সেক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে তাদের সকল প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করতে বলেছেন। আর ১৮ থেকে ৩৩ বছর বয়সীদের জন্য পৃথক ভোটার তালিকা এবং ভোটিং বুথ রাখার বিষয়ে যেন খতিয়ে দেখেন সেই নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্বাচনকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন হবে সেসব নিয়ে আলোচনা হয়। ৮ লাখ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে ৫ লাখ ৭০ হাজার আনসার এবং ১ লাখ ৪১ হাজার পুলিশ বাহিনীর সদস্য। ৪৭ হাজারের মতো ভোটিং কেন্দ্র থাকবে। এর মধ্যে ১৬ হাজারের মতো ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই তিনি এসব ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে কীভাবে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনটা হয় সে নির্দেশনা দিয়েছেন। এক্ষেত্রে পুলিশের বডি ক্যামেরা ও প্রত্যেক কেন্দ্র সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। এই সিসিটিভিগুলো যাতে মনিটরিং ঠিকমতো হয় সে বিষয়ে তিনি কাজ করতে বলেছেন। এছাড়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের কীভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখা যায় সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

শফিকুল আলম বলেন, আগে নির্বাচনের সময় ৪দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকতো সেটি এবার ৭দিন করা হচ্ছে। যাতে নির্বাচনের পরেও ভায়োলেন্স ঠেকানো যায়। আর নির্বাচনের আগে ডিসি, এসপি, ওসিদের বদলি করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এক থানার পুলিশ সদস্যদের অন্য থানায় দায়িত্ব দেয়া যায় কি না সে বিষয়েও নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। অন্যদিকে কোনো আসনে ব্যাপক অনিয়ম হলে সে আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে পুনরায় দেয়া যায় কি না সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, গত তিন নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসারসহ যে সমস্ত কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের বাদ দিয়ে নির্বাচন করার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এছাড়া সব কেন্দ্রে সিসি টিভি বসিয়ে জেলা, উপজেলাসহ কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচন মনিটরিং করা হবে যাতে অনিয়ম হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া যায়। এক্ষেত্রে ভোটারদের জন্য হটলাইন নম্বর চালু হবে। 

প্রেস সচিব বলেন, আগের তিন নির্বাচন ছিল মুখ দেখানো। আন্তর্জাতিকভাবে কোনো গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। তাই এবারের নির্বাচন স্বচ্ছ করতে সব ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কিছু ভিডিও ডকুমেন্টারি করে সেগুলো টেলিভিশন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। এছাড়া অর্ধেক ভোটার যেহেতু নারী তাদের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, আগের মতো এবারের নির্বাচনে ইন্টারনেট ধীর গতি করা নয়, বরং যেন ভালোভাবে সচল থাকে সে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মিডিয়ার ক্ষেত্রেও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা থাকতে যেগুলো নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করবে। আমরা চাই কেউ যেন মিডিয়ার নাম ব্যবহার করে দলীয় লোক কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠাতে না পারে। একই সঙ্গে পর্যবেক্ষণের নামে দলীয় লোক পাঠানোও বন্ধ হবে।

ব্রিফিংয়ে উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর ও সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহমদ উপস্থিত ছিলেন।