সন্ত্রাসবাদী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হয়েছে ব্রঙ্কস বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান। বাংলাদেশের ৪৭ তম বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে ব্রঙ্কসের বাংলাবাজার খ্যাত ওলমস্টেড এভিনিউর এশিয়া ড্রাভিইং স্কুল পার্টি সেন্টারে গত ১৫ ডিসেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় আয়োজন করা হয় মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা ও বিজয় উৎসবের। বিনম্র শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর উৎসবমুখর পরিবেশে ক্রেষ্ট প্রদান ও গলায় লাল-সবুজের উত্তরীয় পরিয়ে সম্মাননা জানান হয় বাংলাদেশের ১০ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশী-আমেরিকান কমিউনিটি কাউন্সিল’র প্রেসিডেন্ট প্রবাসী আইনজীবী মোহাম্মদ এন মজুমদার। সংগঠনটির সভাপতি মোহাম্মদ এ ইসলাম মামুনের সভাপতিত্বে এবং ডা. নাহিদ খানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী, মামুন’স টিউটরিয়ালের প্রিন্সিপাল মূলধারার ম্যাথ টিচার শেখ আল মামুন, বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রুহুল আমিন সিদ্দীকি ও সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ সোহাগ, মানবাধিকার উন্নয়ন সংস্থা হিউম্যান সাপোর্ট করপোরেশনের সভাপতি ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রবাসী কল্যাণ সম্পাদক মো: সোলায়মান আলী ও বাংলাদেশ কমিউনিটি অব নর্থ ব্রঙ্কসের সাধারণ সম্পাদক মনজুর হোসেন চৌধুরী জগলুল। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মোজাফফর হোসেন।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট ৮৭ এর জুডিশিয়াল ডেলিগেট রেক্সোনা মজুমদার, মুক্তিযোদ্ধা আবু কায়সার চিশতী, মুক্তিযোদ্ধা আবুল মুনসুর, অয়েল কেয়ারের আনোয়ার হোসেন, বৃহত্তর কুমিল্লা সোসাইটি’র সিনিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট খবির উদ্দিন ভূইয়া প্রমুখ। অনুষ্ঠানে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মমতাজ উদ্দিন এবং পবিত্র গীতা থেকে পাঠ করেন সুভঙ্কর গাঙ্গুলী। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের সংগীত পরিবেশন করেন আনোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, বিভিন্ন কমিউনিটির নের্তৃবৃন্দসহ বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী উপস্থিত ছিলেন। পরে ১০ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। সম্মাননা প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা হলেন, আব্দুল হালিম মুন্সী, আবু কায়সার চিশতী, মুন্সী বশির উদ্দিন, মনির হোসেন, আবু মোহাম্মদ সাকিব রহমান, আজিজুল ইসলাম, আবদুল জলিল, এম এ কাশেম, হেদায়েত উল্লাহ খান ও ফজলুর রহমান চৌধুরী। এছাড়া ম্যারাথনার রাশেদ মজুমদার, সিক্স হান্ড্রেড বুক রিডার খাদিজা ভূইয়া এবং নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ৪৩ পুলিশ প্রিসেনক্টেকেও সম্মাননা প্রদান করা হয়। সম্মাননা পাওয়া মুক্তিযোদ্ধারা আবেগ আপ্লুত কন্ঠে আয়োজনদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। এসময় তারা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে বলেন, সুদুর প্রবাসেও মুক্তিযোদ্ধাদের এমন সম্মাননা জানানোর অনুভূতি ভাষায় ব্যক্ত করার মত নয়। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের বক্তব্যে স্বাধীনতা বিরোধীরা যেন আর কখনো রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকার অনুরোধ জানান। আগামী জাতীয় নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে আবারও রাষ্ট্র ক্ষমতায় আনতে সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখারও আহ্বান জানান তারা।

আইনজীবি মোহাম্মদ এন মজুমদার তার বক্তৃতায় বলেন, প্রবাসে জন্ম নেয়া ও বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে বাংলাদেশের গৌরবজ্জ্বোল ইতিহাস। তাদের কাছে তুলে ধরতে হবে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট। ছড়িয়ে দিতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। তাদের সেভাবে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে তারাই এদেশের বিভিন্ন ইভেন্টে বাংলাদেশকে তুলে ধরবে। বয়ে আনবে বাংলাদেশের জন্য গৌরব ও সম্মান।
মোহাম্মদ এন মজুমদার আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশ জাতি ও দেশ হিসেবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সে বিশ্বাসী। ঘৃনাভরে প্রত্যাখান করে সন্ত্রাসকে। আত্মঘাতি বিস্ফোরণকারি আকায়েত উল্লাহ ‘বাংলাদেশি অভিবাসী’ হলেও সে কিছুতেই বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে না। সে কেবলই একজন সন্ত্রাসী। তার দায় কমিউনিটি নিতে পারে না। এ সন্ত্রাসীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় বাংলাদেশ ও বাংলাদেশী কমিউনিটি।অনুষ্ঠানে বক্তারা মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে অভিহিত করে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারীদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেন। তারা বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছেন। এজন্য পুরো জাতি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। বক্তারা নিউইয়র্কে সন্ত্রাসবাদী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে প্রবাসী বাংলাদেশীদের আরো সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ম্যানহাটানে পোর্ট অথরিটি বাস টার্মিনালে বাংলাদেশি আকায়েদ উল্লাহর জঘন্য বোমা হামলা ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানান। তারা আতœঘাতি বিস্ফোরণকারি আকায়েত উল্লাহর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বলেন, সকলকে এসব নোংরামির বিরুদ্ধে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সব ধরণের সন্ত্রাসবাদী কর্মকান্ডের মূল উৎপাটন করতে হবে। সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ এ ইসলাম মামুন অনুষ্ঠানে আগত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে দেশ, জাতি ও বিশ্ব মানবতার শান্তি ও কল্যাণ কামনায় বিশেষ দোয়া মুনাজাত করা হয়। মুনাজাত পরিচালনা করেন মুক্তিযোদ্ধা আবু কায়সার চিশতী।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn