অ্যাটর্নি জেনারেলকে ‘জারজ’ বললেন কামাল হোসেন
দেশের সর্বোচ্চ আদালতে প্রধান বিচারপতির এজলাসে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলমকে ‘জারজ’ বললেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামাল হোসেন।বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নিয়োগপ্রাপ্ত ১৩৮ জন চিকিৎসকের নিয়োগের বৈধতা নিয়ে এক মামলার শুনানিতে বুধবার এই ভাষা ব্যবহার করেন তিনি। আদালতে চিকিৎসকদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামাল হোসেন, এম আমীর উল ইসলাম ও কামরুল হক সিদ্দিকী। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া ও তানিম হোসেইন শাওন। অপরদিকে বিএসএমএমইউর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও আইনজীবী তানজিব উল আলম। মাহবুবে আলম বক্তব্য উপস্থাপনের পর আদালত কামাল হোসেনের বক্তব্য জানতে চান।
এ মামলার আইনগত (মেরিট) বিষয়ে না গিয়ে তখন কামাল হোসেন বলেন, “সিন্ডিকেটে এক সময় (বিএনপি-জামায়াত জোটের সময়) ডাক্তারদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এখন ওনারা সেই সিন্ডিকেটের বিপক্ষে স্ট্যান্ড নিচ্ছে। এগুলো হলো ইন্টেলেকচুয়াল প্রস্টিটিউশন।” এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল দাঁড়িয়ে এ ধরনের শব্দ চয়নে আপত্তি জানান। তখন তাকে উদ্দেশ্য করে কামাল হোসেন বলেন, “শাটআপ, বাস্টার্ড। ইউ টেক ইউর সিট।” অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম (ফাইল ছবি) অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম (ফাইল ছবি) প্রতিক্রিয়ায় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “ইউ ক্যান নট আটার্ড দিজ ওয়ার্ড।” এ সময় প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপে কামাল হোসেন তার আসনে বসে পড়েন। ওই সময় প্রধান বিচারপতি ড. কামাল হোসেনকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, “আপনি একজন সিনিয়র আইনজীবী, এ ধরনের শব্দ চয়ন ঠিক না।”
তখন অ্যাটর্নি জেনারেল প্রধান বিচারপতিকে বলেন, “আপনিতো ওনাকে তোষামোদ করলেন। একজন সিনিয়র অ্যাডভোকেট যেভাবে আমাকে গালি দিল এটার কী হবে?” এই পর্যায়ে আদালত বিরতিতে যায়। পুনরায় আদালত বসার পর কামাল হোসেন এ ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে ক্ষমা চান। পরে এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য সুপ্রিম কোর্টে কামাল হোসেনের চেম্বারে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৫ সালের ১৮ অক্টোবর চিকিৎসক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ। ওই বছর ডিসেম্বর থেকে ২০০৬ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত কয়েকশ চিকিৎসককে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই বিজ্ঞপ্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) বর্তামান সভাপতি অধ্যাপক এম ইকবাল আর্সলান।
ওই রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাই কোর্ট নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়। হাই কোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা আপিলের অনুমতি (লিভ টু আপিল) চেয়ে আবেদন করেন। শুনানির পর আপিল বিভাগ গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি লিভ টু আপিল খারিজ করে হাই কোর্টের রায় বহাল রাখে। এই খারিজের আদেশ পুনর্বিবেচনা চেয়ে ১১০ জন চিকিৎসক আবেদন (রিভিউ) করেন। এই আবেদনের শুনানি নিয়ে গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ রিভিউ গ্রহণ করে আপিল করার অনুমতি দেয়। এরপর ওই চিকিৎসকরা পৃথক পাঁচটি আপিল করেন, যার ওপর শুনানি বুধবার শেষ হল। আগামী ২১ মে আপিল বিভাগ আবেদনগুলোর ওপর আদেশের দিন রেখেছেন বলে আইনজীবী তানিম হোসেইন শাওন জানান। তিনি বলেন, ২০১৬ সালের মার্চ থেকে ওই চিকিৎসকরা বেতন পাচ্ছেন না। ওই বছরের এপ্রিল থেকে তাদের হাজিরায় সই করতে দেওয়া হচ্ছে না।