মেহেদী হাসান-আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারো বড় বিজয়ে আত্মবিশ্বাসী আওয়ামী লীগ। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নৌকার বিজয় জোটের আত্মবিশ্বাস আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও তার শরিকদের মধ্যে একটা স্বস্তি বিরাজ করছে। ক্ষমতাসীন দলগুলোর নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, বিজয়ের ধারা শুরু হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত রেখে টানা তৃতীয় মেয়াদের সরকার গঠন করে রেকর্ড গড়া সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে হ্যাটট্রিক বিজয়ের পথে মূল ট্রাম্পকার্ড হবে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে উেক্ষপণের মাধ্যমে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের ১৭৩ দেশের মধ্যে সততায় তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন। এতদিন আওয়ামী লীগের ভাবনায় ছিল ব্যাপক উন্নয়ন হলেও হয়তো অভ্যন্তরীণ কোন্দল নির্বাচনে দলকে বেকায়দায় ফেলবে। কিন্তু খুলনায় বিজয়ের মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, বৃহত্তর স্বার্থে আওয়ামী জোট ঐক্যবদ্ধ আছে এবং থাকবে। সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় এখনো নিজেদের অপ্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছেন মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী এ দলটির নীতিনির্ধারকরা। এদিকে বিগত কয়েকটি নির্বাচন জোটগতভাবে হয়ে আসছে। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ দেখে জোটের শরিক দলগুলোও আশাবাদী হয়ে উঠেছে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি দলীয় ফোরামের চারটি সভায় আগামী সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার আত্মবিশ্বাস ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি রাজনৈতিক দলের টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার নজির বাংলাদেশে নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে সেই নজির স্থাপন করবে। জনগণের জন্য রাজনীতি করা ও তাদের ভাগ্য বদল করাই শেখ হাসিনার রাজনীতির মূল লক্ষ্য। আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম ও সম্পাদকমণ্ডলীর তিন জন সদস্য জানান, ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে শেখ হাসিনার এই আত্মবিশ্বাস দলের নেতাদের উজ্জীবিত করেছে। দলীয় সভানেত্রীর এমন প্রত্যয় নেতাদের মধ্যে দ্বিগুণ মাত্রায় শক্তির সঞ্চার করেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, জনগণের কাছে ভোট চাওয়ার কোনো মুখ বিএনপির নেই। বিএনপি এখন জনবিচ্ছিন্ন। আন্দোলনের নামে জ্বালাও- পোড়াও ও মানুষ হত্যা করায় জনগণ বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, এতিমের টাকা আত্মসাত্কারী, অর্থ পাচারকারী দুর্নীতিবাজ, লুটেরাদের দল বিএনপি-জামায়াত ক্রমাগত জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। তাদের জন্য আরো বড় পরাজয়ের পরিণতি অপেক্ষা করছে। খুলনা সিটিতে বিজয় হওয়ার কারণ তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকারের উন্নয়ন-অর্জনের কারণে জয় এসেছে। সমুদ্র ও সীমান্ত বিজয় হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ। পারমাণবিক ক্লাবে যোগ দেওয়া এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উেক্ষপণে ঐতিহাসিক সাফল্যের কারণে মানুষ নৌকার প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জয়ী করেছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করবে বলে ওবায়দুল কাদের দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। আগামীতেও তাই উন্নয়ন প্রশ্নে জনগণ আওয়ামী লীগের বিকল্প চিন্তা করবে না বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে। জানা গেছে, একাদশ নির্বাচনে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন ও শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তাকে ট্যাম্পকার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে চায় আওয়ামী লীগ। ইতিমধ্যে দলীয় এমপি-মন্ত্রী এবং দলের সব স্তরের নেতাকর্মীদের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে নির্বাচনী প্রচারণা এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এখন থেকে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত ব্যাপকভাবে এই প্রচার-প্রচারণা চালাতে চায় দলটি। তাদের মতে, সরকার যে উন্নয়ন করেছে, সেগুলো মানুষের মধ্যে প্রচার করতে পারলে তারাই আবার ক্ষমতায় আসবে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আওয়ামী লীগের হাত ধরেই এ দেশের সব অর্জন। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ সার্বিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই দেশের উন্নয়নের স্বার্থে আগামী নির্বাচনে জনগণ ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করবে। তিনি বলেন, টানা দুইবার সরকারে থেকে আবারো ক্ষমতায় আসার মতো কাজ করে দেখিয়েছে আওয়ামী লীগ। তাই তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার আত্মবিশ্বাস আওয়ামী লীগের থাকাটাই স্বাভাবিক। আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করেছে। জনগণ এর প্রতিদান দেবে, এটাই তো নিয়ম। আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী জানান, বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে রাখার জন্য শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প নেই। সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া ক্ষমতাসীন জোটের আবার বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের এত উন্নয়নের পরও কেন বিজয়ী হবো না? গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত্ হোসেন বলেন, ১৪ দলীয় জোট যে আবাবো ক্ষমতায় আসবে তার প্রমাণ খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে জোটের প্রার্থীর জয় হওয়া। আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনা আবারও ক্ষমতায় আসবেন এমন আভাস জনগণ দিয়েছে দাবি করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, জনগণ মঙ্গলবার রায় দিয়ে প্রমাণ করেছে, আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn