নাজনীন আক্তার হ্যাপি-

একটা সময় রূপালি পর্দার আলোর ঝলকানিতে কাটতো তার রঙিন সময়। লাইট, ক্যামেরা, ট্রলি, ক্রেন এসবে ঘেরা থাকতো চারপাশ। আনন্দ-উল্লাসে গ্ল্যামার দুনিয়া তিনি মাত করতেন রূপের জাদুতে। আর সেই তিনি এখন নিজের রূপ দেখাতে চান না কাউকে! সত্যিই সময় মানুষকে বদলে দেয়।

যিনি এক সময় পরতে পছন্দ করতেন বোল্ড আর হট লুকের ড্রেস, তিনিই এখন বোরকার আড়ালে নিজেকে ঢেকে রাখেন সারাক্ষণ। চলচ্চিত্র পাড়া থেকে অনেক আগেই বিদায় নিয়েছেন তিনি। বদলে ফেলেছেন নিজের নাম-ধামও। পাঠক নিশ্চয়ই ধরতে পারছেন কার কথা বলছিলাম এতক্ষণ? হ্যাঁ, সেই আলোচিত নাজনীন আক্তার হ্যাপির কথা বলছি। ‌

হ্যাপি থেকে নাম বদল করে তিনি হয়েছেন আমাতুল্লাহ্। তিনি সম্প্রতি তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে- এ যুগের মেয়ে, দেন মোহর ও সন্তান পালন সম্পর্কে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি যা লিখেছেন, সেটি নিচে তুলে দেওয়া হলো:

‘আমার বিয়েতে মোহরানা ছিল মোহরে ফাতেমী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মা ফাতেমার জন্য যে মোহরানা নির্ধারণ করেছিলেন সেটাকে মোহরে ফাতেমী বলে, যা বর্তমান হিসাবে ১ লক্ষ ৯৮ হাজার টাকা।

বরকতের জন্য আমি নিজেই এই মোহরানা ঠিক করতে বলি আলহামদুলিল্লাহ! আমি আমার বিয়ের আগে জানতে চাইনি আমার স্বামীর মাসিক ইনকাম কত বা আমার শ্বশুরের কত সম্পত্তি আছে! এসব জানতে চাইনি, কারণ এসব আমার চাওয়া ছিল না। চাওয়া ছিল শুধু একজন দ্বীনদার স্বামী।

যে কি না আমাকে ছোট্ শিশুর মতো আগলে রাখবে, আমার দ্বীন মানার ব্যাপারে সাহায্য করবে, আমার হক বুঝবে, কোনো কিছু ভুল করতে গেলে ভালোবাসা দিয়ে বোঝাবে এটা ঠিক না ওটা ঠিক, আমার পর্দা নিয়ে আমার চেয়ে বেশি সতর্ক থাকবে, ফজরে আমাকে ডেকে তুলবে, তাহাজ্জুদের তাকাজা দিবে, শরীয়তের জ্ঞান লাভের জন্য আমাকে সাহায্য করবে ব্যস! আর কিছু চাওয়া ছিল না।

আজকের দিনের আধুনিক মেয়েরা প্রেম যার তার সাথে করলেও বিয়ে করার বেলায় পয়সাওয়ালা, বাড়িওয়ালা, গাড়িওয়ালা সমাজে অবস্থানওয়ালা মানুষ চায়! আর মোহরানা হতে হবে তো অনেক টাকা। মানুষকে বলতে হবে না?

আমার এত মোহরানা, অত মোহরানা! আজকের মেয়েরা এটাকে গুরুত্ব দেয় না যে- ছেলে পাঁচ ওয়াক্ত জামাতের সাথে নামাজ পড়ে কি না! সুন্নতি লেবাস আছে কিনা! টাখনুর উপর কাপড় পরে কি না! বাবা-মা’র সাথে ভালো ব্যবহার করে কিনা! সত্য বলে কি না! গুনাহ থেকে বাঁচার চেষ্টা করে কি না! এখন কথা হলো যে, যেসব মেয়েরা দ্বীন মানে না তারা তো দ্বীনদার ছেলে খুঁজবে না। হ্যাঁ তারা খুঁজবে না। নিজেরাও দ্বীন মানবে না।

এবং যারা মানে তাদেরকে সমাজের ক্ষেত খামার মনে করবে। সুন্নতি লেবাস মানেই ব্যাটা ক্ষ্যাত! আনস্মার্ট! সমাজে নিয়ে চলা যায় না। পরিশেষে পরিণাম কী জানেন? বলছি, মিলিয়ে নিন। আপনি বিয়ে করেছেন খুব টাকাওয়ালা এক লোককে। সমাজে তার নামডাক প্রচুর। আপনিও পরকীয়া করেন, তিনিও করেন। সে অফিস ট্যুরের নামে নারী নিয়ে মাস্তি করে আর আপনিও এই সুযোগে আপনার বয়ফ্রেন্ড নিয়ে থাকবেন, অনেক আবার বয়সের ছোট একটা ছেলেকে নিয়েও নোংরামিতে মেতে ওঠেন।

মাঝখান দিয়ে আপনাদের কোল জুড়ে সন্তান আসবে, বুয়ার কাছে মানুষ হবে, না শিখবে আদব না শিখবে ইসলাম। ছোটবেলা থেকে সে অবহেলায় বড় হয়ে আপনাদের চেয়ে দ্বিগুণ খারাপির মধ্যে নিজেকে সঁপে দিবে! এটাই চেয়েছিলেন তো? বলে রাখা ভালো, অনেক বাবা মায়ের কাছে সন্তানের যত্ন নেওয়ার নাম- বাচ্চা ফুটতে না ফুটতে হাতে মোবাইল, ট্যাব ও ল্যাপটপ ধরিয়ে বসিয়ে দেওয়া!

আর অবহেলা কী জানেন? আরেকবার জেনে নিন। আপনার সন্তানকে ইসলামের আদর্শে বড় না করা, আদব না শেখান, হাতে প্রযুক্তি দিয়ে নষ্ট করা, চাওয়ামাত্র সব দেওয়া, টাকা দেওয়া। এসব করে তাকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া। এটা তার প্রতি অবহেলা নয় কি?

তারপর আসি আপনার কথায়, ঐ যে বলছিলাম,যে যার মতো থাকা। স্বামীও আছে তার ছন্দে, সাথে আপনিও। একটু বোধহয় ভুল বললাম, এটা তো আপনাদের কাছে আধুনিকতা! সে যাই হোক! দিনশেষে কেউ সুখি নন। সুখ টাকা পয়সা দিয়ে হয়না রে বোন! জীবনের শেষ প্রহর ঠিক চলে আসবে কিন্তু পরকালের জন্য কিছুই করা হবে না।

সুখ শান্তি একমাত্র দ্বীনের মাঝে। ইসলামকে আল্লাহ পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। ইসলামের মাঝেই দুনিয়া ও আখিরাতের কামিয়াবি। পান্তাভাত খেয়েও অনেক দ্বীনদার মানুষ তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে পারে, শুকরিয়া আদায় করতে পারে। এরজন্য তাদের পাঁচতারকা হোটেলের দামী খাবারের প্রয়োজন পড়ে না।

কারণ তারা জানেন জান্নাতে তাদের জন্য অবশ্যই উত্তম ব্যবস্থা করা আছে। আর শুকরিয়া আদায় করতে পারেন কারণ তারা জানে অনেক মানুষ এই পান্তাও পায়না। না খেয়ে আছে তাদের চেয়ে আল্লাহ কত ভাল রেখেছেন!

বোন আমার, অনেক তো হলো মাকাল ফল ছেড়ে সঠিক ও সুন্দর পথে আসুন। হারাম সম্পর্ক আজ, এখনি শেষ করে দিন। নিজে দ্বীনের পথে আসুন, বিয়ে করুন দ্বীনদার কাউকে, আল্লাহর কসম করে বলছি, দুনিয়াটা জান্নাত হয়ে যাবে। জীবনের লক্ষ্য দ্বীনকে বানানো চাই। অশান্তি দূর হয়ে যাবে। চারিদিক শুধু তালাক! তালাক!তালাক!কারণে অকারণে তালাক! কারো কোনো সবর নেই! এত তালাক কেন? দ্বীন নেই। সবাই দুনিয়া সুন্দর করতে চায়,আখিরাত না। যার ফলাফল কোথাও দু দণ্ড শান্তি নেই। এখনো সময় আছে তওবা করে ফিরে আসি।’

লেখকের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে নেওয়া

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn