বরেণ্য সংগীতশিল্পী সাদী মহম্মদের মৃত্যুর পর এনিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন লেখক মহিউদ্দিন আহমদ। তিনি লিখেছেন, সাদি আর নেই। যতটুকু শুনেছি, স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, ‘স্বেচ্ছামৃত্যু’। এরকম মৃত্যু আকছার হচ্ছে। একসময় ঝিনাইদহ নিয়মিত সংবাদ শিরোনাম হতো- এন্ড্রিন পানে কিশোরী কিংবা গৃহবধূর আত্মহত্যা। ঝিনাইদহ নিয়ে একটা সোশিওলজিক্যাল স্টাডি হতে পারত। কেউ করেনি। সাদির পুরো নাম সাদি মহম্মদ তকীউল্লাহ। তকীউল্লাহ নামটি সে আর ব্যবহার করত না। তার মৃত্যু অনেককে নাড়া দিয়েছে। কারণ সে ভালো গান গাইত। ভরাট গলা ছিল। এদেশে পুরুষকণ্ঠে জাহেদুর রহিমের পর তার গানই আমার ভালো লাগত। নানান অঙ্গভঙ্গি ও নর্তনকুর্দন না করেও যে ভালো পারফর্ম করা যায়, সাদি ছিল তার উদাহরণ।

সাদির বড় ভাই সানু ছিল আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। মোহাম্মদপুরে আমাদের বাড়ি ছিল কাছাকাছি। আমরা একসঙ্গে পড়েছি ঢাকা কলেজে। সে হিসেবে অনুজপ্রতীম সাদীর প্রতি মমতা ছিল। একদিন সবাই এই শোক কাটিয়ে উঠবে। নতুন কোনো মৃত্যু এসে আগেরটি ঢেকে দেবে। এটাই নিয়ম। জীবন থেমে থাকে না। এবার একটা ব্রেকিং নিউজ দিই। যারা আমার বই পড়েন, তাদের অনেকেই হয়তো এটা জানেন। ‘অপারেশন ভারতীয় হাইকমিশন’ বইয়ে এর উল্লেখ আছে। মোহাম্মদপুরে জাসদ-সৃষ্ট বিপ্লবী গণবাহিনীর একটা ইউনিট ছিল। কর্নেল তাহেরের অনুজ বাহার ছিল এর কমান্ডার। তাদের দুটি গোপন বৈঠক হয়েছিল সলিমুল্লাহ রোডের ওই বাড়িতে, যেখানে সানু-সাদিরা থাকত। সেখানে বসেই পরিকল্পনা হয়, ২৬ নভেম্বর (১৯৭৫) ধানমন্ডির ২ নম্বর রোডে ভারতীয় হাইকমিশনে ঝটিকা অভিযান চালিয়ে রাষ্ট্রদূত সমর সেনকে জিম্মি করা হবে। ঘটনা সেরকমই হয়েছিল। ওইদিন সকালে ছয়জনের একটা টিম হাইকমিশনে যায়। ভারতীয় নিরাপত্তা রক্ষীদের গুলিতে চারজন ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। দুজন আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার হয়ে পাঁচ বছর কারাবন্দি থাকে। সাদির সঙ্গে এই ঘটনার যোগাযোগ ছিল কি না জানি না। সানুর হয়তো ছিল। অনেক বছর পর সানুর সঙ্গে দেখা হয়েছিল মোহাম্মদপুরে আমাদের পাশের বাসায়। সেখানে সে ভাড়া থাকতো। সানু হঠাৎ হার্টফেল করে মারা যায়। সেও অনেক বছর আগের কথা।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn