ঈদে পর্যটকমুখর দোয়ারাবাজারের বাঁশতলা-হকনগর শহিদ স্মৃতিসৌধ
ভারতের খাসিয়া, মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে দিন ভর তরুণ- তরুণীদের হই হুল্লোড়। আনন্দ বিনোদন। ছবি তোলা আর সেলফিবাজিতে ব্যস্ত সময় পার। ছুটির দিনগুলো মনের আনন্দে ঘুরতে এসেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, চাকুরীজীবি, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি, সাংবাদিকসহ নানা পেশার মানুষজন। দীর্ঘ ক্লান্তির অবসান কাটিয়ে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে প্রতি বছর ঈদ ও ছুটির দিনে ছুটে আসেন সহস্রাধিক পর্যটক। পর্যটন এলাকায় রেস্টুরেন্ট, বিশ্রামের ভালো আবাসন সুবিধা, রাস্তা ঘাটের বেহালবস্থার কারণে ভোগান্তির অন্তনেই আগন্তকদের। দূর বহু দূর থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে আসা পর্যটকপোহাতে হয় নানা সমস্যা। চলাচল রাস্তা গুলো চরম অসুখি ও অভিশপ্ত হওয়ায় আগন্তকদের অস্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলতে হয়।
তার পরেও উপজেলার সীমান্তবর্তী বাঁশতলা-হকনগর শহিদ স্মৃতি সৌধ, জুমগাঁও আদিবাসী পাহাড়, মৌলা নদীর হকনগর স্লুইসগেট, লক্ষ্মীপুরের মাঠগাঁও খাসিয়ামারা নদীর মোহনা, নরসিংপুর সীমান্তের চাইরগাঁও চেলা নদীর মোহনা থাকে উৎসুক লোকে লোকারন্য। সকাল হতে সন্ধ্যা অবধি পর্যটন এলাকা গুলোতে ব্যস্ত সময় পার করেন সব বয়সের মানুষজন। এবারের ঈদুল ফিতরের ছুটিতে সব বয়সের লোকজনের উপচে পড়া ভীর ছিল চোখে পড়ার মতো।বিশেষ করে ঈদের দিনগুলোতে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে দোয়ারাবাজার উপজেলার অন্যতম নান্দনিক পর্যটন কেন্দ্র বাঁশতলা-হকনগর শহিদ স্মৃতি সৌধ এলাকা। উত্তরের খাসিয়া, মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত কালের স্বাক্ষী সৌন্দর্য মন্ডিত শহিদ মিনার। মুক্তিযুদ্ধের ৫ নং সেক্টরের সাসেক্টর হেড কোয়ার্টার ছিল এ স্থানটি। দুই দিকে ভারতের সুউচ্চ কালো পাহাড়, কাঁটা তারের বেড়া, সমতল ভূমিতে ছোট বড় পাহাড়ী নদ, নালা আকাঁ বাঁকা রাস্তা, গাছ পালায় অপরুপ সুন্দর্য্যরে এক লীলা ভূমি হকনগর ও আশপাশের এলাকা।
একটু অদূরে পাহাড় থেকে নেমে আসা মৌলা নদীর উপর নির্মিত স্লুইসগেটের নীচে পানির স্রোতে সাঁতার কাটা, ভেসে বেড়ানোর আনন্দেই আলাদা। দিনভর জমে এখানে তরুণ-তরুণীদের আড্ডা।
শহিদ স্মৃতিসৌধ এলাকার আড়াই কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত জুমগাঁও আদিবাসী পাহাড়। বাংলাদেশের সীমানায় এ পাহাড়ে ৩৫ আদিবাসী গারোদের বসবাস। সীমান্তের ওই এলাকায় খাসিয়া, গারো, বাঙালীসহ বহু ভাষী মানুষজনের বৈচিত্রময় জীবন চিত্র বাড়তি আনন্দের যোগান দেয় আগন্তক পর্যটকদের।
তবে পর্যটকদের অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, যাবার বেলা সড়কের এমন বেহাল দশায় আনন্দই মাটি হয়ে গেল। দোয়ারাবাজার বাংলাবাজার ভায়া বাঁশতলা হকনগর সড়কটি যেন এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। ভাঙা সড়কে গাড়ীতে নিয়ে পর্যটন এলাকায় যাওয়া অসম্ভব প্রায়।
দৈনিক সুনামগঞ্জের সময় পত্রিকার সম্পাদক সাংবাদিক সেলিম আহমদ জানান, ঈদের ছুটিতে জেলা শহর হতে পরিবার নিয়ে বাঁশতলা পর্যটন এলাকায় এসেছিলাম। কিন্ত রাস্তা ঘাটের বেহাল দশায় এত সুন্দর জায়গা দেখতে এসে অসুখি হয়ে ফিরতে হলো। এছাড়া গাড়ী পার্কিং ও আশপাশে খাবারের কোনো রেস্টুরেন্ট, বিশুদ্ধ পানীয় জলের নেই কোনো ব্যবস্থা।
বড়খাল স্কুল ও কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী পর্যটক শিমু আক্তার জানায়, ভাঙাচোড়া রাস্তা দিয়ে বাংলাবাজার হতে ১৫ মিনিটের রাস্তা ১ঘন্টায় আসতে হয়েছে। আর কত বেহাল দশার সৃষ্টি হলে টনক নড়বে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। আনন্দই মাটি হলো এখানে এসে।
স্থানীয় সংবাদ কর্মী এম মোতালেব ভুঁইয়া বলেন, ঈদের ৭ দিন পর্যন্ত বিভাগীয় শহর সিলেট, সুনামগঞ্জ সহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঘুরতে আসেন পর্যটকরা। কিন্ত খাবর সুবিধা ও রাস্তা ঘাটের বেহাল দশার কারণে ভোগান্তি পোহাতে হয় পর্যটকদের।